ভরসা: সেমিফাইনালে রবির দিকেও তাকিয়ে দল। বিসিসিআই
ওড়িশার মাওবাদী অধ্যুষিত রায়গড়া জেলার মুলিগেড়া সিআরপিএফ পোস্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুদূর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে এসেছিল ফোনটা। যে চৌকিতে ভয়ের আবহ অহরহ। ফোনবার্তার প্রাপক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর (এএসআই) রাজেন্দ্র সিংহ। ফোনের অপরপ্রান্তে তাঁর ছেলে রবি কুমার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসা। যাঁর বোলিং বিক্রমে পর্যুদস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। আজ, বুধবার সেই রবি নামবেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
ছেলেকে রাজেন্দ্র সিংহ সবে বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘গোটা দেশের সিআরপিএফ সেনারা তোমার সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করছেন। তুমিও মাঠে নামার সময়ে ভারতমাতার সম্মানের কথা মাথায় রেখে নামবে। তা হলেই ভাল খেলার বাড়তি উদ্যম পাবে। সেমিফাইনাল নয়, ফাইনাল জিতে ফিরতে হবে। তা হলেই দেশকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারবে।’’
রাজেন্দ্রবাবুর সহকর্মীরা তাঁকে এ কথা বলতে শুনেই বুঝে গিয়েছিলেন, কে ফোন করেছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন স্পিকারে দেওয়া অনুরোধ আসে। রাজেন্দ্রবাবু সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ার পরে গোটা মুলিগেড়া পোস্টের জওয়ান, অফিসার সকলেই সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে দিয়েছেন রবিকে। বলে দিয়েছেন, পরিবারের ছেলের মঙ্গলকামনায় নারকেল ফাটিয়ে পুজো দিয়ে দিন শুরু করবেন তাঁরা।
আনন্দবাজারকে রাজেন্দ্রবাবু যখন এ কথা বলছেন, তখন কলকাতার কথা শুনেই তাঁর থেকে ফোনটা প্রায় কেড়ে নেন তাঁর বাঙালি সহকর্মী তপনকুমার বালা। আগরপাড়ার বাসিন্দা তপনবাবু একদমে বলতে শুরু করেন, ‘‘আমরা সবাই রবিকে আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা দিয়েছি। মনে হচ্ছে, আমার নিজের ছেলেই বিশ্বকাপ খেলছে। বাংলাদেশ ম্যাচে ওর দুরন্ত পারফরম্যান্সের খবর আসার পরেই আমরা ঢাক বাজিয়ে নেচেছি। গোটা দেশের সিআরপিএফ পরিবার বুধবার রবির জন্য প্রার্থনা করবে। সেনার ছেলে বিশ্বকাপ জিতে ফিরলে রবির আলোয় আমরা গর্বিত হব।’’ আবার ফোন হাতে পেয়ে রাজেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘ওকে আজ বলেছি মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের স্বাভাবিক খেলা ধরে রাখতে। পরিশ্রম ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে খেললে সাফল্য আসবেই। ছেলের জন্য ভিআইপি হয়ে গিয়েছি। ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা এসেও পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন আমার মতো এক সাধারণ সিআরপিএফ এএসআই-কে। আমার স্ত্রী ও মেয়ে আলিগড়ের বাড়িতে। ওরা ছেলে ও ভাইয়ের জন্য বুধবার ঠাকুরের আসন ছেড়ে নড়বেই না বলে দিয়েছে। ভারত জিতলে আমিই ওদের খবর পাঠাব।’’ যোগ করেন, ‘‘এক সময়ে চাকরির কারণে কলকাতার তালতলায় থেকেছি। রবি তখন খুব ছোট। ময়দানে ওকে ঘোরাতে নিয়ে যেতাম। ইডেন দেখানোর পরে রবি আমাকে বলেছিল, পাপা, একদিন ভারতের জার্সি গায়ে এই স্টেডিয়ামে খেলব। মনে মনে সেই স্বপ্নটাই বাবা-ছেলে দেখি। এই বিশ্বকাপ জিততে পারলে সেই লক্ষ্যে প্রথম ধাপ পেরেনো যাবে বলে মনে হয়। এখনই বেশি আশা করব না। আগে সেমিফাইনাল জিততে হবে।’’
আলিগড়ে রবির কোচ অরবিন্দ ভরদ্বাজ কলকাতায় মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন। তিনি অবশ্য আশাবাদী, অস্ট্রেলিয়াকেও এই ভারতীয় দল উড়িয়ে দেবে সেমিফাইনালে। আলিগড় থেকে তিনি বললেন, ‘‘আমার ছাত্র কলকাতায় বালিগঞ্জ ইউনাইটেড, হাওড়া ইউনিয়ন ক্লাবে খেলেছে। তাই জানি, উত্তরপ্রদেশ ও বাংলায় রবির জন্য সবাই গলা ফাটাবে সেমিফাইনালে।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমাকেও রবি ফোন করেছিল সোমবার অধিক রাতে। ওকে বলে দিয়েছি নিখুঁত নিশানায় বল রাখতে। সেটা ও ভালই পারে। ওর অস্ত্র সুইং। খোলা মাঠে সেমিফাইনাল হবে না অন্য ম্যাচের মতো। ফলে হাওয়া বেশি থাকবে না। বল সুইং করবে। ওর বল নড়াচড়া করলেই অস্ট্রেলিয়া সমস্যায় পড়বে। অতিরিক্ত কিছু করার দরকার নেই। বিপক্ষ ব্যাটারকে মারার জায়গা দেওয়া চলবে না।’’
আজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে: ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া, সন্ধে ৬.৩০, স্টার স্পোর্টস ওয়ান চ্যানেলে।