বিজয়ী: বিশ্বকাপ জয়ের পরে ট্রফি নিয়ে উল্লাস অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্সের। রবিবার আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই।
আমদাবাদে ১ লক্ষের উপরে দর্শকদের সামনে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। শুরুতেই রোহিত শর্মার অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিয়ে নজর কাড়েন। রান তাড়া করতে নেমে শতরান করে তিনিই ম্যাচের সেরা। এমন পরিস্থিতিতে রান করেছেন, যেখানে ভুল করলেই লক্ষ্যচ্যুত হতে পারতেন। তিনি ট্র্যাভিস হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের মূল কারিগর হয়ে রইলেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার।
ম্যাচের সেরাও বেছে নেওয়া হল তাঁকেই। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে হেড বলছিলেন, ‘‘অসাধারণ একটি দিন। দলের সঙ্গে এই দিন উপভোগ করতে পেরে সত্যি খুব খুশি। একেবারে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এক সময় মনে হয়েছিল বাড়িতে বসেই বিশ্বকাপ দেখতে হবে। শেষমেশ চোট সারিয়ে ভারতে আসতে পারলাম।’’
মার্নাস লাবুশেনের সঙ্গে তাঁর ম্যাচ জেতানো জুটি মনে রাখবেন অস্ট্রেলীয় ও ভারতীয় সমর্থকেরা। হেড নিজেও প্রশংসা করে গেলেন মার্নাসের। বলছিলেন, ‘‘তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে আমি সত্যি চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। মার্নাস আমার উপর থেকে চাপ কমিয়ে দিয়েছিল। এক দিক থেকে ও ক্রিজ় কামড়ে পড়েছিল। সেই মুহূর্ত মার্নাসের মতো একটা ইনিংসই দরকার ছিল। ও এক দিকটা ধরে ছিল বলেই আমি শট খেলতে শুরু করি।’’ যোগ করেন, ‘‘মিচেল মার্শ শুরুর দিকে যে মনোভাব নিয়ে ব্যাট করছিল, ওটার দরকার ছিল। মার্শ ইতিবাচক দিকটা দেখিয়ে গিয়েছে।’’
অধিনায়ক প্যাট কামিন্স টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পরে অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ট্র্যাভিস আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বলছিলেন, ‘‘জানতাম উইকেট পরের দিকে ভাল হয়ে যাবে। সেটাই হল। শিশির পড়ার পর থেকেই ব্যাটে বল আসতে শুরু করল। ব্যাটিংও সহজ হয়ে গেল।’’ আরও বলেন, ‘‘ভর্তি স্টেডিয়ামের সামনে পারফর্ম করতে আমি খুব উপভোগ করি। বিশ্বকাপ জুড়ে এটাই করেছি। চেয়েছিলাম ফাইনালেও সকলের সামনে সেরাটা তুলে ধরতে। দলকে এ ভাবে জেতাতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।’’
রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পরে তৃতীয় অস্ট্রেলীয় হিসেবে ফাইনালের ম্যাচের সেরা হলেন হেড। যা নিয়ে বলে যান, ‘‘কিংবদন্তিদের পাশে যে আমার নামটা থাকবে, এটা ভেবেই ভাল লাগছে। চেষ্টা করেও তাঁদের জায়গায় পৌঁছতে
পারব না।’’
হেড এ দিন ম্যাচের সেরা হলেও অধিনায়কত্বের জন্য যদি কোনও পুরস্কার থাকত, তা হলে সেটা প্যাট কামিন্সই পেতেন। শনিবারই মজা করে তিনি জানিয়েছিলেন আমদাবাদের শব্দব্রহ্মকে চুপ করিয়ে দিতে চান। অক্ষরে অক্ষরে যে এই ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাবে, তা বোধ হয় আন্দাজ করতে পারেননি কোনও ভারতীয় দর্শকই। কামিন্সের বোলিংকে পিছনে ফেলে চর্চায় উঠে এসেছে অধিনায়কত্ব। যে রকম ভাবে বোলিং পরিবর্তন করে গেলেন, কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানই ছন্দ খুঁজে পাওয়ার সময় পেলেন না। তবে টস জিতে তিনি ফিল্ডিং কেন নিয়েছিলেন? সেই উত্তরের অপেক্ষায় ছিলেন ভারতীয় সমর্থকেরা। কামিন্স বলেন, ‘‘সারা প্রতিযোগিতা জুড়ে আমরা টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফাইনালে পরিকল্পনাই ছিল টস জিতলে ফিল্ডিং করব। ভেবেছিলাম শিশিরের কারণে আমাদের কাজ আর একটু সহজ হয়ে যাবে। সেটাই হল।’’ যোগ করেন, ‘‘নিজেদের সেরাটা ফাইনালের জন্য তুলে রেখেছিলাম। ছেলেদের খেলায় আমি আপ্লুত। বিশেষ করে দলের সিনিয়ররাও যে ভাবে নিজেদের মাঠে সঁপে দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়।”
কামিন্স মুগ্ধ মার্নাস লাবুশেনের ইনিংসেও। হেড আউট হয়ে গেলেও অপরাজিত থাকেন লাবুশেন। ১১০ বলে তাঁর অপরাজিত ৫৮ রানের ইনিংসের প্রশংসা করেন স্বয়ং সুনীল গাওস্করও। লাবুশেন নিজে প্রথম বার এক দিনের বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন। প্রতিযোগিতা জু়ড়ে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধুমাত্র ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দেশকে বিশ্বকাপ দেন।