নজরে: দুবাইয়ের নিলামে কামিন্স, ওক্স এবং স্টার্ক থাকবেন কেকেআর-এর নজরে। —ফাইল চিত্র।
গৌতম গম্ভীরকে ফিরিয়ে আনা যদি পদক্ষেপ নম্বর এক হয়, তা হলে এ বার পদক্ষেপ নম্বর দুই। পুরনো আগ্রাসন নিয়ে ১৯ ডিসেম্বরের নিলামে ঝাঁপাতে চলেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর বাজি জেতার জন্য দলকে নেতৃত্ব দিতে যদি দেখা যায় স্বয়ং বাজিগরকে, তা হলে অবাক হওয়ার নেই।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে দুবাইয়ে কেকেআরের টেবলে উপস্থিত থাকতে পারেন শাহরুখ খান। সঙ্গে থাকতে পারেন পুত্র আরিয়ান এবং কন্যা সুহানা। শাহরুখের পুত্র এবং কন্যাকে আগেও দেখা গিয়েছে আইপিএল নিলামে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁকেই নিলামে দেখা যায়নি। এমনকি নাইটদের ম্যাচেও হালফিলে খুব একটা আসেননি। যে কারণে কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছিল যে, দলের ক্রমাগত হারে কি মালিকও আগ্রহ হারালেন?
এ বারে কিন্তু মরসুম শুরুর আগে থেকেই অন্য রকম কাহিনি শোনা যাচ্ছে। বহু দিন ট্রফি না জেতার খরা মেটাতে তিনি শাহরুখ খান নাকি স্বয়ং উদ্যোগী হয়েছেন। যার প্রথম পদক্ষেপ গৌতম গম্ভীরকে ফেরানো। অধিনায়ক হিসেবে কেকেআরে যোগ দিয়ে গম্ভীর অধরা আইপিএল উপহার দিয়েছিলেন। নাইটদের ট্রফি ক্যাবিনেটে যে দুটিমাত্র আইপিএল ট্রফি রয়েছে, তা গম্ভীরেরই নেতৃত্বে। কিন্তু ক্রিকেটার গম্ভীরের যুগ পেরিয়ে গিয়েছে অনেক কাল হল। ২০১৪-র পরে আর আইপিএল জেতেনি কেকেআর। এ বার তাই গুরু গম্ভীরের যুগ শুরু করার চেষ্টা শুরু হল।
সূত্রের খবর, শাহরুখ স্বয়ং কথা বলে গম্ভীরকে রাজি করিয়েছেন। না হলে সঞ্জীব গোয়েন্কার লখনউ সুপার জায়ান্টস থেকে তাঁকে ভাঙিয়ে আনা সম্ভবই ছিল না। গম্ভীর খুবই খুশি ছিলেন লখনউতে। কিন্তু বলিউড বাদশার ফোন আর পুরনো সম্পর্ককে দূরে সরিয়ে দিতে পারেননি।
এ বার গম্ভীরকে পাশে বসিয়ে নিলামে ঘর গোছাতে চান শাহরুখ। এমনিতে দুবাইয়ে আগামী মঙ্গলবার যা হতে চলেছে তাকে মিনি নিলাম আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। বড় আসর মোটেও বসছে না যে, একদম ঢেলে দল সাজানো যাবে। গম্ভীরকে অধিনায়ক করে আনার সময় যা করা হয়েছিল। তবু বেশ কিছু ঝড়তি-পড়তি ক্রিকেটার দিয়ে যে জঞ্জাল করে রাখা হয়েছিল দলটাকে, তা সাফ করার অভিযান অন্তত চালানো হয়েছে। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বেশ কিছু ক্রিকেটারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ৩২.৭০ কোটি টাকা হাতে নিয়ে নিলামে যেতে পারছে কেকেআর। দশ দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা হাতে নিয়ে যারা নিলামে ঢুকছে, তাদের মধ্যে কেকেআর এক জন। আর হাতে থাকা এই পুঁজির সিংহভাগ যদি বিদেশি পেসার কেনার জন্য ব্যয় করতে দেখা যায়, তা হলে অবাক হওয়ার নেই। গত বারের দল থেকে লকি ফার্গুসন, টিম সাউদি, উমেশ যাদবদের ছেড়ে দিয়েছে নাইটরা। সেই জায়গায় নতুন ভাল বিদেশি পেসার আনা এ বারের নিলামে প্রথম লক্ষ্য। অতীতে বেগুনি জার্সিতে খেলে যাওয়া প্যাট কামিন্স রয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন পেস প্রতিভা জেরাল্ড কোয়েটজ়ে আছেন। যিনি এ বারের বিশ্বকাপে ২০ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও জস হেজ্লউড আছেন। ইংল্যান্ডের ক্রিস ওক্সের নাম আলোচিত হচ্ছে। কামিন্স এবং ওক্সকে নিতে পারলে বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, তাঁরা ব্যাটও করতে পারেন। এই দু’জন নিলামের শুরুতেই চলে আসবেন। তাঁরা আছেন দুই নম্বর সেটে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার তারকাদের নিয়ে কাড়াকাড়ি হতে যাচ্ছে দুবাইয়ের নিলামে। যে দু’জনকে নিয়ে ব্যাঙ্ক ব্যালান্স সবাই ভেঙে ফেলতে রাজি, তাঁরা হলেন ফাইনাল জেতানো ট্র্যাভিস হেড এবং প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে চরম সঙ্কটের সময় কামিন্সকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। খানিকটা ঠেকায় পড়ে। সেই কামিন্স গত এক বছরে যা ট্রফি দিলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে ক’জন অধিনায়ক দিতে পেরেছেন, সন্দেহ। টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব। অ্যাশেজ। তার পর সব ট্রফির সেরা ট্রফি বিশ্বকাপ। কেকেআর কর্তাদের নিশ্চয়ই দেখতে দেখতে বিলাপ করেছেন— আহা, এমন রত্ন হাতে পেয়েও ছেড়ে দিলাম! সেই আক্ষেপ মিটতে পারে যদি দুবাইয়ের নিলাম থেকে কামিন্সকে ফের জিতে নেওয়া যায়। অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের পাশাপাশি আর এক জন বিদেশি ফাস্ট বোলারও তুলতে চাইবে কেকেআর। স্টার্ক বাঁ-হাতি বলে সব সময় বেশি ভয়ঙ্কর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তিনি খুব চোটপ্রবণ এবং আইপিএল দলগুলির তাঁকে নিয়ে অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। ক্রিস ওক্স-ও সম্প্রতি বড় চোট থেকে ফিরেছেন কিন্তু প্রত্যাবর্তনেই শেষ অ্যাশেজে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ও বেন স্টোকসের ‘বাজ়বল’ ইংল্যান্ডের হয়ে দারুণ খেলেছেন। কী বলে, কী ব্যাট হাতে। ওক্স ফিট থাকলে যে খুব ভাল পছন্দ এবং নিলামে ঝড় তুলতে পারেন, সহমত অনেকে।
তবে সেরা বিদেশি ফাস্ট বোলার তোলার অভিযানে শাহরুখের দলকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও পড়তে হবে। অনেক দলই একই লক্ষ্য নিয়ে নিলামে আসবে। যেমন মুম্বই ইন্ডিয়ানস জফ্রা আর্চারকে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ভাল বিদেশি পেসার চাই। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর জশ হেজ়লউডকে ছেড়ে দিয়েছে। তাদেরও বিকল্প কাউকে দরকার। তবে নাইটদের সুবিধা হচ্ছে, তাদের হাতে মুম্বই বা বেঙ্গালুরুর চেয়ে বেশি পুঁজি রয়েছে। তাই দর হাঁকাহাঁকির যুদ্ধে অনেক দূর যেতে পারবে। নাইট রাইডার্স নিলাম থেকে ১২ জনকে নিতে পারবে। যার মধ্যে চার জন বিদেশি হতে পারে। শ্রেয়স আয়ার অধিনায়ক হিসেবে ফিরছেন। রিঙ্কু সিংহ অবিশ্বাস্য ছন্দে রয়েছেন। বেঙ্কটেশ আয়ার, নীতীশ রানা আছেন। বিদেশিদের মধ্যে জেসন রয়, রহমনুল্লা গুরবাজ় এবং বরাবরের দুই বিশ্বস্ত সৈনিক আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন আছেন। তাই খুব বেশি ব্যাটসম্যান বা অলরাউন্ডার নেওয়ার জন্য না-ও ঝাঁপানোর দরকার হতে পারে নাইটদের। গম্ভীরের খুব পছন্দের ক্রিকেটার ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার রভম্যান পাওয়েল। যদিও এখনকার এই পাওয়েলে কতটা আগ্রহী হবেন, সন্দেহ থাকছে। থাকছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার রেজ়া হেনড্রিক্স, যাঁর ন্যুনতম দাম ৫০ লক্ষ টাকা। বরং ফিনিশার হিসেবে অতীতে ঝড় তোলা ভারতীয় ব্যাটসম্যান শাহরুখ খানকে নিয়ে আগ্রহী হতেই পারে বলিউডের শাহরুখের দল। বিদেশি পেসারের মতোই ভাল উইকেটকিপারের খোঁজও করতে হবে কেকেআর-কে।
এই মুহূর্তে তাদের হাতে রহমনুল্লা গুরবাজ় ছাড়া কেউ নেই। বিদেশিদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার যশ ইংলিস, ইংল্যান্ডের ফিল সল্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে খেলা ট্রিস্টান স্টাবস রয়েছেন। ভারতীয়দের মধ্যে কে এস ভরত একেবারেই দাগ কাটতে পারেননি। যদিও নিলাম তালিকায় আছেন। তুলনায় সৌরাষ্ট্রের নতুন মুখ হার্বিক দেশাইয়ের দিকে বেশি নজর রয়েছে। কিপিংয়ের হাত বেশ ভাল, ব্যাটিংয়ে ওপেনও করেন হার্বিক। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সৌরাষ্ট্রের হয়ে ওপেন করে ৩৩৬ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৭৫, যা অনেক দলকে আকৃষ্ট করবে। আর আইপিএল মানেই তো তাই। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। জাদু ছোঁয়ায় হার্বিকের মতো অজ্ঞাতকে পাল্টে দেবে ঝলমলে নতুন তারায়। রিঙ্কু সিংহকে যেমন
বানিয়ে দিয়েছে!