ইংল্যান্ড বনাম ফ্রান্সের সেই ম্যাচ। —ফাইল চিত্র
ফ্রান্সের ক্রিকেটার গুস্তাভ ম্যাকঁ বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সব থেকে কম বয়সে শতরান করেছেন তিনি। এই খবরটা যতটা বিস্ময় তৈরি করেছিল, তার থেকে বেশি অবাক করার মতো ছিল, ফ্রান্স ক্রিকেটও খেলে। হ্যাঁ, ফ্রান্স ক্রিকেট খেলে। দু’বারের ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী দেশ অলিম্পিক্সেও ক্রিকেট খেলেছে। পদকও পেয়েছে।
ক্রিকেটের জন্মই নাকি হয়েছিল ফ্রান্সে। দেশের উত্তরপ্রান্তের গ্রাম পাস-দে-কালাইস। সেখানে ব্যাট এবং বলের খেলাকে ক্রিকেট বলা হত। ১৪৭৮ সালের একটি নথিতে এমন তথ্যই পাওয়া গিয়েছে। ফরাসি শব্দ ‘ক্রিকেট’এর অর্থ উইকেট। অনেকে মনে করেন ‘ক্রকেট’ নামক একটি খেলার সঙ্গেও ক্রিকেটকে গুলিয়ে ফেলা হতে পারে। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ওয়ালপোলের ছেলে হোরেস দাবি করেন, ১৭৬৬ সালে তিনি প্যারিসে ক্রিকেট খেলা দেখেছেন। ১৭৮৯ সালে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব ফ্রান্সে ক্রিকেট খেলতে যাবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু ফরাসি বিপ্লব শুরু হওয়ায় সেই সফর বাতিল হয়ে যায়।
ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের সম্পর্ক বরাবরই আদায়-কাঁচকলায়। দুই দেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা চলতে থাকে বহু বিষয় নিয়ে। ফরাসি লেখক হোসে আলাইন ফ্র্যালন দুই দেশের সম্পর্কের বর্ণনা করতে গিয়ে ইংল্যান্ড সম্পর্কে লেখেন, ‘আমাদের সবচেয়ে প্রিয় শত্রু।’ নেপোলিয়নের যুদ্ধও বুঝিয়ে দেয় দুই দেশের সম্পর্ক কেমন ছিল। অলিম্পিক্সে এই দুই ‘শত্রু’র মধ্যেই খেলা হয়েছিল ক্রিকেট। ১৯০০ সালের সেই অলিম্পিক্সে একটিই ম্যাচ হয়েছিল। দুই দেশের খেলায় ইংল্যান্ড জিতেছিল ১৫৮ রানে। ‘ফাইনাল’এ হেরে রুপো পেয়েছিল ফ্রান্স। অনেকে বলেন, ফ্রান্সের হয়ে যাঁরা খেলতে নেমেছিলেন তাঁরাও জন্ম সূত্রে ব্রিটিশ। প্যারিসে থাকতেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেটাই ফ্রান্সের প্রথম আবির্ভাব বলা যায়।
ফ্রান্স আইসিসির সদস্যপদ পায় ১৯৮৮ সালে। ছবি: আইসিসি
১৮৬৪ সালে প্যারিস ক্রিকেট ক্লাব এবং নটিংহ্যাম অ্যামেচার্সের মধ্যে একটি ম্যাচ হয়। ক্রিকেট কী ভাবে খেলতে হয় তা নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করে প্যারিস ক্রিকেট ক্লাব। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ফ্রান্সের বহু ক্রিকেট ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮০ সালের পর থেকে ফ্রান্সে বসবাসকারী ইংরেজ এবং এশীয়রা ফের ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। ফ্রান্সে এখন ক্রিকেট পরিচালনা করে ফরাসি ক্রিকেট সংস্থা। ১৯৮৭ সালে গঠিত হওয়া এই সংস্থা আইসিসির সদস্যপদ পায় ১৯৮৮ সালে। ফরাসি সরকারের থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়ার জন্য প্রথমে ক্রিকেট সংস্থা যুক্ত হয় বেসবল এবং সফটবলের সঙ্গে। পরে যদিও আলাদা হয়ে যায় ক্রিকেট সংস্থা। আইসিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফ্রান্সে এখন বেশ কিছু ক্রিকেট ক্লাব তৈরি হচ্ছে। যা উৎসাহজনক। বেশির ভাগ ক্লাবই তৈরি হচ্ছে প্যারিসে। ইউরোপিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলে ফ্রান্স। ২০০১ সালে আইসিসির প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেয় তারা। ২০০৩ সালে এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলেছিল ফ্রান্স।
২০১৮ সালে আইসিসি সিদ্ধান্ত নেয়, তার সব সদস্যকে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক খেলার অধিকার দেয়। সেই জন্য এখন ফ্রান্স যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলি খেলে তা সবই আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেরকমই একটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স এবং সুইৎজারল্যান্ড। ম্যাকঁ সেই ম্যাচে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে সব থেকে কম বয়সে শতরান করার বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন। ১৮ বছর ২৮০ দিন বয়সে সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন তিনি। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ইউরোপীয় অঞ্চলের ম্যাচে সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬১ বলে ১০৯ রান করেন এই ওপেনার। ম্যাকঁর বিশ্বরেকর্ড করা শতরান সত্ত্বেও ফ্রান্স এই ম্যাচে জিততে পারেনি। সুইৎজারল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। সুইৎজারল্যান্ড শেষ বলে এক উইকেটে জিতে যায়। পরের ম্যাচে নরওয়ের বিরুদ্ধে ফের শতরান করেন ম্যাকঁ। নরওয়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি চার এবং আটটি ছয়ের সাহায্যে ৫৩ বলে ১০১ রান করেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম ব্যাটার হিসাবে পরপর দু’টি ইনিংসে শতরান করলেন তিনি। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এখনও পর্যন্ত মাত্র তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ম্যাকঁ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম তিনটি ম্যাচে মোট রানের নিরিখে তিনিই সবার উপরে। ২৮৬ রান করেছেন তিনি।
ফ্রান্স হেরে গেলেও ভাগ্যিস বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন ম্যাকঁ। না হলে ফ্রান্স যে ক্রিকেট খেলে তা-ই হয়তো জানা যেত না।