টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় রোহিত শর্মাদের। —ফাইল চিত্র
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হার ভারতের। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হেরে গেলেন রোহিত শর্মারা। প্রথমে ব্যাট করে ১৬৮ রান তোলে ভারত। হার্দিক পাণ্ড্য ৬৩ রান করেন। বিরাট কোহলি করেন ৫০ রান। ভারতের রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড জয়ের রান তুলে নেয় ১৬ ওভারে। ইংল্যান্ডের হয়ে অর্ধশতরান জস বাটলার (৮০ রানে অপরাজিত) এবং অ্যালেক্স হেলসের (৮৬ রানে অপরাজিত)।
ব্যাট করতে নামার আগে বাটলার যেমন পিচে ভারী রোলার চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ভারতীয় বোলিং আক্রমণের উপরেও তেমন ভারী রোলার চালিয়ে দিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার মিলেই ভারতের বোলারদের মাঠের বাইরে পাঠালেন পালা করে। গোটা ম্যাচ মাত্র এক বার ক্যাচ তুলেছিলেন তাঁরা। সেটাও নিতে পারেনি ভারত। মাঝে মহম্মদ শামির বাউন্ডারিতে বল ধরে আচমকা পাশে থাকা অক্ষর পটেলকে ছোড়ার কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না। ভারতীয় বোলারদের মতোই সেটাও ছিল উদ্দেশ্যহীন।
টসের সময় রোহিত জানিয়েছিলেন যে, তিনিও টস জিতলে আগে ব্যাট করতেন। অর্থাৎ টস হেরে খুব অসুবিধা হয়নি ভারতের। কিন্তু শুরুতেই ফিরে যান লোকেশ রাহুল। বড় ম্যাচে তাঁর ব্যাটে রান দেখা যায় না। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ এবং জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে রাহুল অর্ধশতরান করে ছন্দে ফিরেছেন বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যখন রাহুলের ব্যাটে বড় রান প্রয়োজন ছিল, তখন মাত্র ৫ বলে ৫ রান করে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিলেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দেওয়ার মতো ভুল সেমিফাইনালের মঞ্চে মেনে নেওয়া কঠিন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রোহিত ২৭ রান করলেও খেলে ফেললেন ২৮টি বল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হিসাবে যা একে বারেই ভাল নয়। এক দিনের ক্রিকেটে যে ব্যাটার দুশো করেন, তাঁর থেকে সেমিফাইনালের মতো বড় ম্যাচে যে এই রান গ্রহণযোগ্য নয় তা বলাই যায়। ভারত অধিনায়ক যদিও বেশ কিছু দিন ধরেই রানের মধ্যে নেই। এ বারের প্রতিযোগিতায় তিনি মাত্র একটি অর্ধশতরান করেছেন। সেটাও এসেছে নেদারল্যান্ডসের মতো দলের বিরুদ্ধে।
ভারতের স্কোরবোর্ডে ইনিংস শেষে যে ১৬৮ রান দেখাচ্ছে, সেটার জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পাণ্ড্যকে। সূর্যকুমার যাদবও এ দিন ১০ বলে ১৪ রান করে ফিরে যান। তাঁর উইকেট তুলে নেন আদল রশিদ। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে একটি উইকেট পাওয়া স্পিনারই ভারতের রান আটকে দেন মাঝের ওভারে। প্রথম ১৫ ওভারে ১০০ রান তুলেছিল ভারত। সেখান থেকে শেষ ৫ ওভারে ৬৮ রান তোলার পিছনে বড় ভূমিকা নেন হার্দিক।
বিরাট নিজের প্রিয় অ্যাডিলেডের মাঠে ৪০ বলে ৫০ রান করেন। এক দিক থেকে যখন উইকেট হারাচ্ছিল দল, বিরাটই আটকে রেখেছিলেন। শেষ বেলায় ঝড় তোলেন হার্দিক। তিনি ৩৩ বলে ৬৩ রান করেন। শেষ ওভারে প্রথম দু’বলে একটি করে রান হয়। তৃতীয় বল মারতে ফস্কান ঋষভ পন্থ। সেই সময় হার্দিক দৌড়ে যান। পন্থ নিজের উইকেট ত্যাগ করেন। হার্দিক স্ট্রাইক পেয়ে পরের বলটি ছক্কা হাঁকান। তার পরের বল চার মারেন তিনি। শেষ বলেও চার মারেন কিন্তু তাঁর পা লেগে যায় উইকেটে। বেল পড়ে যায়। হিট উইকেট হন হার্দিক।
ভারতকে কম রানে আটকে রাখার জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে ইংল্যান্ডের ফিল্ডিংকেও। বোলাররা যে ভাবে লাইন, লেংথ রেখে বল করলেন, তেমনই ঠিক জায়গায় ফিল্ডার রাখলেন বাটলার। হার্দিক খুব বেশি সুইপ মারেন না, তাঁর সেই ভাবে ফিল্ডিং সাজানো হল। বিরাট কোহলি আবার স্ট্রেট ড্রাইভ মারতে পারেন, তাঁর জন্য রাখা হল মিড অন, মিড অফ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করে ভারতের রান শুরু থেকেই আটকে দিয়েছিল ইংল্যান্ড।
১৬৮ রান তাড়া করতে নেমে বাটলার এবং হেলস মনে করিয়ে দিলেন গত বারের বিশ্বকাপে ভারতের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারকে। সেই ম্যাচেও ১০ উইকেটে হেরেছিলেন বিরাট কোহলিরা। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালেও হারলেন ১০ উইকেটে। পাওয়ার প্লে-তে ৬৩ রান তোলে ইংল্যান্ড। ভুবনেশ্বর কুমার, আরশদীপ সিংহরা শুরুতে উইকেট নিতে ব্যর্থ। শুধু শুরুতে নয়, গোটা ম্যাচেই উইকেট নিতে পারেননি ভারতের কোনও বোলার। ব্যর্থ অধিনায়ক রোহিতও। একের পর এক বোলার মার খেলেন, কিন্তু তাঁর থেকে কোনও প্ল্যান বি পাওয়া গেল না। বাটলাররাও সহজে রান তুলে গেলেন। কোনও বোলারকেই বাদ দিলেন না।
ভুবনেশ্বর ২ ওভারে দিলেন ২৫ রান, আরশদীপ ২ ওভারে ১৫ রান, অক্ষর পটেল ৪ ওভারে ৩০ রান, মহম্মদ শামি ৩ ওভারে ৩৯ রান দিলেন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ২ ওভারে ২৭ রান দিলেন এবং হার্দিক ৩ ওভারে ৩৪ রান দিলেন। ভারতীয় বোলারদের নিয়ে ছেলে খেলা করে গেলেন গোটা ইনিংস জুড়ে। সেই সঙ্গে ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সব আশাতেই জল ঢেলে দেন বাটলাররা।