অনুশীলনে ভারতীয় দল। ছবি: টুইটার থেকে
চুপ করে বসে ভারতীয় দলের অনুশীলন দেখছেন এক প্রৌঢ়। নিজস্বী নেওয়ার জন্য তাড়া নেই, ক্রিকেটারদের ছবি তোলার আগ্রহ নেই। তিনি শুধু অনুশীলন দেখছেন। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, দীনেশ কার্তিকরা নেটে ব্যাট করছেন আর তিনি দেখছেন। তিনি কার্তিকের বাবা কৃষ্ণ কুমার।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কার্তিক খেলছেন। সেটা দেখার জন্যই এসেছেন তাঁর বাবা। ২০০৪ সালে ভারতের হয়ে অভিষেক হয় কার্তিকের। ৩৭ বছর বয়সে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছেন তিনি। এই দলের সব থেকে বয়স্ক ক্রিকেটার তিনিই। সেই কার্তিকের বাবা ছেলের খেলা দেখতে পৌঁছে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি দেখতে পাননি তিনি। সেই সময় অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার অবশ্যই দর্শকাসনে দেখা যাবে কৃষ্ণকে।
অনুশীলন দেখতে দেখতে মোবাইল ফোনের ক্যামেরাটা অন করেছিলেন কৃষ্ণ। সঙ্গে সঙ্গে বাধা দেওয়া হয় তাঁকে। ছবি তোলার নিয়ম নেই শুনে ফোন রেখে দেন। তত ক্ষণে সাংবাদিকরা জেনে ফেলেছেন কৃষ্ণের পরিচয়। তাঁকে ঘিরে ধরেছেন। কার্তিক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। কৃষ্ণ বলেন, “জানি না এই বিশ্বকাপই ভারতীয় দলের হয়ে ওর শেষ খেলা, না কি আরও খেলবে। ৩৭ বছর বয়সে যে ও খেলছে সেটাই আমার কাছে খুব আশ্চর্যের। পরের বছর এক দিনের বিশ্বকাপে যদি ও খেলে সেটা আমাদের কাছে অতিরিক্ত পাওয়া হবে। আমি খুব বাস্তববাদী। তাই জানি এই বিশ্বকাপের পর কী হবে। সেই কারণেই বিশ্বকাপে ওর খেলা দেখতে অস্ট্রেলিয়া চলে এসেছি।”
রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে কার্তিক যখন ভারতের হয়ে খেলছেন, সেই সময় তাঁর মা পদ্মিনীকে সব সময় ভারতীয় দলের সঙ্গে দেখা যেত। কার্তিকের যখন ১২ বছর বয়স, সেই সময় তাঁর মা এবং বাবা জীবনের অন্যতম কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। কুয়েতে শিক্ষকতা করতেন কৃষ্ণ। কিন্তু বুঝতে পারছিলেন যে, তাঁর ছেলেকে ক্রিকেট শেখানোর জন্য ভারতে পাঠানো উচিত। শেষ পর্যন্ত কার্তিকের মাসির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু কোন স্কুলে ভর্তি করলে ভাল ক্রিকেট শিখতে পারবেন কার্তিক? অদ্ভুত ভাবে তা খুঁজে বার করেছিলেন কৃষ্ণ। তিনি বলেন, “আমি জানতাম না কোন স্কুলে ওকে ভর্তি করা উচিত হবে। সেই কারণে চেন্নাইয়ের বিভিন্ন মাঠে ওকে বল ছুড়তাম আর ও ব্যাট করত। যদি কোনও কোচ ওর খেলা দেখে পছন্দ করে। সে তা হলে সাহায্য করতে পারবে স্কুল খুঁজে দিতে।”
সেই কার্তিক এক সময় ধারাভাষ্যকার হয়েছিলেন। সকলে মনে করেছিলেন যে তাঁর খেলোয়াড় জীবন শেষ। কিন্তু আইপিএলে কার্তিক বুঝিয়ে দেন যে তিনি ফুরিয়ে যাননি। ভারতীয় দলেও জায়গা ফিরে পান অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক।