অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসী মেজাজে কনওয়ে। ছবি: টুইটার।
মেলবোর্নের মতো সিডনিতেও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মিলিয়েই ঝড় উঠল নিউজ়িল্যান্ডের ইনিংসের মাঝে। সেই ঝড়ে চাপে পড়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক অস্ট্রেলিয়া। ঝড়ের নাম ডেভন কনওয়ে।
গত বারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই কনওয়ের ব্যাট থেকে অনবদ্য ৯২ রানের ইনিংস। খেললেন ৫৮ বল। মারলেন সাতটি চার এবং দু’টি ছক্কা অথচ অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা তাঁকে আউট করতে পারলেন না। তিনিই প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করলেন। ব্যাটকে ব্যবহার করলেন তলোয়ারের মতো। যে তলোয়ারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল অ্যারন ফিঞ্চদের সব পরিকল্পনা। তাঁর অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ করল নিউজ়িল্যান্ড।
৩৬ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন কনওয়ে। ব্যক্তিগত ৬২ রানের মাথায় পূর্ণ করলেন টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক হাজার রান। ২৬তম ইনিংসে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন কনওয়ে। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজ়মও সম সংখ্যক ইনিংসে এক হাজার রান করেন। বিরাট কোহলি ২৭তম ইনিংসে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন।
নিউজ়িল্যান্ডের ক্রিকেটে উল্কার গতিতে উত্থান বাঁহাতি ব্যাটারের। লর্ডসে টেস্ট অভিষেকে শতরান করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রেকর্ড ভাঙা কনওয়ে তিন ধরনের ক্রিকেটেই অত্যন্ত সাবলীল। অথচ সব ঠিক থাকলে তাঁর খেলার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। নিজের দেশের হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলেন কনওয়ে। বাধা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ‘কোটা’ ব্যবস্থা। বার বার সুযোগ না পেয়ে নিউজ়িল্যান্ডে চলে আসেন। তাতেও সমস্যা। নিউজ়িল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী অন্তত তিন বছর সে দেশে বসবাস না করলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া যায় না। নিজের দেশে বঞ্চিত কনওয়ে তত দিনে ধৈর্য ধরতে শিখে গিয়েছিলেন। তিনটে বছর নিউজ়িল্যান্ডের ক্লাব ক্রিকেট, কাউন্টি ক্রিকেট খেলে কাটিয়ে দেন। তার পর সুযোগ পান কেন উইলিয়ামসনদের দলে।
আর থামানো যায়নি তাঁকে। কনওয়ের এই উত্থানের পিছনে রয়েছে এক ভারতীয়র অবদান। তিনি শ্রীরাম কৃষ্ণমূর্তি। নিউজ়িল্যান্ড নিবাসী এই ভারতীয় কোচই কনওয়েকে আগ্রাসী ব্যাটারে পরিণত করেছেন। শতরান করলেই গুরুদক্ষিণা দিতে হবে। কনওয়ের সঙ্গে এমনই চুক্তি করেছিলেন কৃষ্ণমূর্তি। তবে বেশি দিন সেই দক্ষিণা নিতে পারেননি তিনি। তাই কনওয়ের শতরান না থামলেও গুরুদক্ষিণা থামাতে বাধ্য হয়েছেন কৃষ্ণমূর্তি। চুক্তি ছিল কনওয়ে শতরান করলে শ্রীরামকে ওয়েলিংটনের মিসেস হিগিনসের চিনাবাদামের মাখন দিয়ে তৈরি কুকিজ খাওয়াতে হবে। লম্বা অনুশীলন শেষে একদিন কনওয়ে এবং তাঁর প্রশিক্ষক খুঁজে পেয়েছিলেন এই কুকিজ। দু’জনেরই ভাল লেগে গিয়েছিল সেটা। সেই সময়ই দু’জনের চুক্তি হয়, কনওয়ে শতরান করলে এই কুকিজ দিতে হবে শ্রীরামকে। ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের ক্রিকেটে একের পর এক শতরান করতে থাকেন কনওয়ে। কিন্তু বেশি দিন কুকিজ খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি শ্রীরামের। কারণ কুকিজ খেতে খেতে শরীরটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বাধ্য হয়ে থামাতে হয় কুকিজ খাওয়া।