এশিয়া কাপের ভারতীয় দলে বিরাটরা। —ফাইল চিত্র
অর্শদীপ সিংহের মা বলজীত কৌর তখন পুজোয় ব্যস্ত। মন্ত্র পড়ছেন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন। সোমবার এমন একটা সময়ে এল সেই খবর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে অর্শদীপ সিংহ। আইপিএল থেকে যাঁর উত্থানের শুরু। সেখান থেকে ভারতীয় দলের হয়ে খেলা। এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়া এবং এ বার গন্তব্য বিশ্বকাপ।
তরুণ বাঁহাতি পেসারের বয়স ২৩ বছর। ইনিংসের শেষের দিকে বল করতে এসে তিনি কতটা কার্যকর তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আইপিএলেই। তাই বিশ্বকাপের দলে যে পাঁচ পেসারকে রাখা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক জন অর্শদীপ। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পর ভারতীয় সমর্থকদের একাংশের কাছে ‘খলনায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন অর্শদীপ। সেই খবর অবশ্যই তাঁর পরিবারের কাছেও পৌঁছেছিল। তাই বিশ্বকাপের দলে অর্শদীপের সুযোগ পাওয়া আরও একটু বেশি আনন্দ দিয়েছে তাঁর পরিবারকে।
অর্শদীপের মা বলেন, “ভারতের অল্প দিনের ক্রিকেট জীবনে ও যেমন জয় দেখেছে, তেমনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হার দেখেছে। অনেক কিছু দেখে নিয়েছে ও। এর থেকে শিক্ষা নিয়েছে অর্শদীপ। সব সময় ইতিবাচক থাকার শিক্ষা। অর্শদীপের নাম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে দেখা ওর নিজের জন্য যেমন আনন্দের, আমাদের জন্যেও একটা দারুণ মুহূর্ত। ওর নাম যখন ঘোষণা করা হয়, আমি তখন পুজো করছিলাম। আমি প্রার্থনা করি অর্শদীপ ভাল খেলুক এবং ভারতকে বিশ্বকাপ এনে দিক।”
অর্শদীপের বাবা দর্শন সিংহ ২৫ বছর ধরে সেনায় কাজ করেছেন। ভারতীয় পেসারের জন্ম মধ্যপ্রদেশে। দর্শন সেই সময় ওখানে থাকতেন। পরবর্তী সময় তাঁরা পঞ্জাবে চলে আসেন। সেখানে কোচ যসবন্ত রাইয়ের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন অর্শদীপ। ২০১৮ সালে ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেই বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। এর পর আইপিএলে সুযোগ এবং এখনও পর্যন্ত ৩৭টি ম্যাচ খেলে ফেলা। নিয়েছেন ৪০টি উইকেট। এ বারের আইপিএলেই পঞ্জাব কিংসের হয়ে নেন ১৮টি উইকেট।
ভারতের হয়ে এখনও পর্যন্ত ১১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন অর্শদীপ। নিয়েছেন ১৪টি উইকেট। তাঁর বাবা দর্শন বলেন, “সব ক্রিকেটারই স্বপ্ন দেখে বিশ্বকাপ খেলার। অর্শদীপের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। ও সব সময় নিজের সেরাটা দিয়েছে এবং ভারতকে জেতাতে চেয়েছে। আশা করি ও এ বার ট্রফিটাও জিততে চাইবে। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করেছে অর্শদীপ। আমাদের বাড়ি খারারের। সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে চণ্ডীগড় যেত ক্রিকেট শিখতে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনও কিছুই আটকাতে পারত না ওকে। জেতা, হারা খেলার অঙ্গ। এই মাসের শুরুতে যা হয়েছে আশা করি তা অর্শদীপকে আরও ভাল খেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।”
মাঠে বসে বিশ্বকাপে ছেলের খেলা দেখতে চান অর্শদীপের মা, বাবা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সময় তাঁদের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছিল। এ বার তা চান না। অস্ট্রেলিয়ায় ছেলের খেলা দেখতে যাবেন দর্শন এবং বলজীত। অর্শদীপের মা বলেন, “ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ওর খেলা দেখতে পাইনি। এ বার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি অর্শদীপ ভারতকে বিশ্বকাপ জেতাবে, সেটা মাঠে বসে দেখতে পারব।”