বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম বার ভারতকে হারাল পাকিস্তান। ছবি: টুইটার থেকে
লজ্জা দিয়ে শুরু বিশ্বকাপ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হারল ভারত। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম বার ভারতকে হারাল পাকিস্তান। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা বিরাট কোহলীর ভারতকে প্রথম ম্যাচেই টেনে মাটিতে নামিয়ে দিলেন বাবর আজমরা। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভারতকে ১২ গোল দিলেন তাঁরা। বিশ্বকাপের মঞ্চে ১২ বারের হারের বদলা নিল পাকিস্তান।
ম্যাচে দুই দলের অধিনায়কই অর্ধশতরান করলেন, কিন্তু ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা হল না কোহলীর। বিশ্বকাপের মঞ্চে অন্য এক পাকিস্তানের মুখে পড়ল ভারত। এই নতুন পাকিস্তান উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে হাই তোলে না, ম্যাচের মাঝ পথে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় না। বাবরের পাকিস্তান ফিল্ডিংয়ে প্রাণ দিয়ে দেয়, প্রতিটি ব্যাটারের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করে, ব্যাট করার সময় এক রান, দু’রান নিয়ে প্রতিপক্ষকে মানসিক ভাবে হতাশ করে দেয়।
টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। শুরুতেই রোহিত শর্মাকে (০) ফিরিয়ে দেন শাহিন আফ্রিদি। প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হন তিনি। ভারতের ইনিংসে কোনও রানই যোগ করতে পারেননি ভারতীয় ওপেনার। রান পাননি লোকেশ রাহুলও। ৮ বলে ৩ রান করে আফ্রিদির বলে বোল্ড হন তিনি। বাঁ-হাতি পেসারের সুইং বুঝতেই পারলেন না ভারতীয় ওপেনার। ৮ বলে ১১ রান করে ফেরা সূর্যকুমার যাদবও খুব বেশি ক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি বিরাট কোহলীকে। শুরুর এই ধাক্কা গোটা ম্যাচে কাটিয়ে উঠতে পারল না ভারত।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দুই ওপেনার-সহ সূর্যকুমারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ভারতকে ভরসা দেন কোহলী এবং ঋষভ পন্থ। ৫৩ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। পন্থের এক হাতে মারা ছয়গুলি ম্যাচে ফিরিয়ে আনে ভারতকে। দু’জনে মিলে এক রানগুলিকে দু’রানে বদলে দিতে থাকেন। ৩০ বলে ৩৯ রান করেন তরুণ উইকেটরক্ষক। ভরসা যোগান কোহলীকে। শাদাব খানের বলে তাঁর হাতেই ক্যাচ তুলে দেন পন্থ। খারাপ শট খেলে ফেরেন তিনি।
পন্থ ফিরতেই সাজঘরের দিকে হাত তুলে রবীন্দ্র জাডেজাকে নামানোর ইঙ্গিত করেন কোহলী। ক্রিজে বাঁ-হাতি, ডান হাতি জুটি বজায় রাখতে রাখলেন তিনি। জাডেজা (১৩) খুব বেশি রান করতে না পারলেও দর্শকদের মন ভরালেন কোহলী। তাঁর মসৃণ কভার ড্রাইভ ইঙ্গিত দিল ছন্দে ফেরার। ৪৯ বলে ৫৭ রান করলেন কোহলী। ভারতকে লড়াই করার মতো রানে পৌঁছে দিলেন ভারত অধিনায়ক। শেষের দিকে নেমে ৮ বলে ১১ করেন হার্দিক পাণ্ড্য। ভুবনেশ্বর কুমার অপরাজিত থাকলেন ৪ বলে ৫ রান করে।
পাকিস্তানের হয়ে নজর কাড়লেন বাঁ-হাতি পেসার আফ্রিদি। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির এই পেসারকে সামলাতে বেশ সমস্যাতেই পড়লেন কোহলীরা। ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ভারতের প্রথম তিন ব্যাটারের উইকেট নেন আফ্রিদি। তবে ১৯তম ওভারে তিনি দেন তাঁর বলে ১৭ রান নেন হার্দিকরা। পাকিস্তানের হয়ে দু’টি উইকেট পেয়েছেন হাসান আলি। চার ওভারে ৪৪ রান দিয়েছেন তিনি। একটি করে উইকেট পেয়েছেন শাদাব খান এবং হ্যারিস রৌফ। মহম্মদ হাফিজ এবং ইমাদ ওয়াসিম উইকেট না পেলেও খুব বেশি রান দেননি তাঁরা।
ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজওয়ানই ভারতের হাত থেকে ম্যাচ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও ব্যর্থ বুমরা, শামি, ভুবনেশ্বররা। বরুণ চক্রবর্তী এবং রবীন্দ্র জাডেজাদেরকেও অনায়াসে মাঠের বাইরে পাঠালেন বাবররা। লেগ স্টাম্পের বাইরে বল, শর্ট পিচ বল করে মার খেয়েও যেন নিজেদের শোধরাতে পারলেন না ভুবনেশ্বররা। হিসাব করে প্রতি ওভারে রান করতে থাকলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার।