সৌজন্য: ম্যাচের পরে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবরকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ঋষভ ও বুমরা। রবিবার। রয়টার্স
পাকিস্তান ইনিংসের ১০ ওভারের মাথায় সাময়িক জলপানের বিরতিতে টিভিতে দেখলাম ব্যাপারটা। সতীর্থদের গোল করে ডেকে কথা বলছে অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ওর অঙ্গভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বোলারদের কী বলতে চাইছে। বোঝাতে চাইছিল, যেন অনসাইডে বলটা বেশি না রাখে। কিন্তু কোনও টোটকাতেই কাজ হয়নি। রবিবার দুবাইয়ে ১০ উইকেটে বিরাটদের হারিয়ে আইসিসি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম জয়টা তুলে
নিল পাকিস্তান।
এই ভাবে হারার মতো দল নয় ভারত। কিন্তু এ দিন দল বাছাই থেকে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাটা খুব অদ্ভুত লাগছিল। প্রথমেই আসি হার্দিক পাণ্ড্যের কথায়। ও বল করবে কি না, তা নিয়ে অনেক জল্পনা চলেছে। বিরাট তো ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিল, ছ’নম্বরে হার্দিকের মতো ব্যাটার পাওয়া খুবই কঠিন। তাই যদি হয়, তা হলে হার্দিককে সাত নম্বরে ঠেলে দেওয়া হল কেন? পাকিস্তানের লেগস্পিনার শাদাব খান বল করছে বলেই বাঁ-হাতি রবীন্দ্র জাডেজাকে আগে পাঠাতে হবে, এই ছকে আমি বিশ্বাস করি না। ভাল ব্যাটার হলে সে লেগস্পিনারকেও মারতে পারবে। এর পরে তো আট বল খেলেই দেখলাম কাঁধে চোট পেয়ে বসল হার্দিক। বল করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
দুবাইয়ের এই পিচেই আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিধ্বস্ত করেছিল ইংল্যান্ডের স্পিনাররা। অথচ ভারত এ দিন আর অশ্বিনকে খেলালোই না। সাত নম্বরে নেমে অশ্বিনও কিন্তু দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি পাওয়ার প্লে-তেও বল করতে পারত অশ্বিন। এক জন বাড়তি স্পিনার চাপ তৈরি করতে পারত।
দুই ইনিংসের প্রথম ছ’ওভারেই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক হয়ে যায়। ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় শুরুতেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে শাহিন শাহ আফ্রিদি। ওর ওই দুটো ইনসুইং ডেলিভারি খেলার ক্ষমতা বিশ্বের কোনও ব্যাটারেরই সম্ভবত ছিল না। প্রথম ছয় ওভারের শেষে ভারতের স্কোর দাঁড়িয়েছিল তিন উইকেটে ৩৬। ফিরে গিয়েছে রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল এবং সূর্যকুমার যাদব। ওখানেই ভারতের বড় রান তোলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। বিরাট (৪৯ বলে ৫৭) চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি।
আবার রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান প্রথম ছ’ওভারে তোলে বিনা উইকেটে ৪৩। ১৫১ রান তাড়া করার মঞ্চ ওখানেই তৈরি করে দেয় বাবর আজ়ম (৫২ বলে অপরাজিত ৬৮) এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ান (৫৫ বলে অপরাজিত ৭৯)।
পাকিস্তানকে কিন্তু এতটা অঙ্ক কষে খেলতে আমি কোনও দিন দেখিনি। প্রতি ওভারে একটা বড় শটে বাউন্ডারি তুলে নিচ্ছিল, তার পরে খুচরো রান নিয়ে স্কোরটা সচল রাখছিল। এক রানকে অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দুইয়ে বদলে দিচ্ছিল। যেটা পাক ব্যাটারদের ক্ষেত্রে দেখাই যায় না। তার উপরে যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে রান আউট হওয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিল, তাতে একটা ব্যাপার স্পষ্ট। ওরা ঠিক করে এসেছিল, কোনও ভাবেই উইকেট দেব না। বাবর-রিজ়ওয়ান ঠিক সেই কাজটাই করে দেখাল। উইকেট ছুড়ে না দিয়ে শেষ পর্যন্ত থেকে ম্যাচ জেতাল। বাবর অসাধারণ ব্যাটার। মাঠের যে কোনও অঞ্চলে শট খেলতে পারে। কিন্তু রিজ়ওয়ান অনসাইডের ক্রিকেটার। ড্রাইভ প্রায় করেই না। ওর সব শটই অনসাইডের দিকে। তাই মনে হয়, রিজ়ওয়ানকে ঠিক লাইনে বল করতে পারেনি ভারত।
ফিল্ডিংয়ের সময়ও কিন্তু দারুণ লেগেছে পাকিস্তান দলটাকে। খুব ভাল কয়েকটা ক্যাচ ধরল। ওদের শরীরী ভাষায় যেন কিছু করে দেখানোর একটা প্রতিজ্ঞা ধরা পড়ছিল। মরিয়া ছিল এই ম্যাচটা জেতার জন্য।
এই হারের পরে কতটা ধাক্কা খাবে ভারত? আমি বলব, বিরাটরা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেই ক্ষমতা ওদের আছে। তবে চাপটা এ বার বেশি থাকবে। পরের ম্যাচে নিউজ়িল্যান্ডকে কিন্তু হারাতেই হবে। আর তার জন্য ঠিক দল বাছাটা খুবই জরুরি।