গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাদা বলের ঘরোয়া ক্রিকেট ফাইল চিত্র।
রঞ্জি ট্রফি দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এক নম্বর প্রতিযোগিতা। গুরুত্বের বিচারে রঞ্জির সঙ্গে এখন সমান তালে পাল্লা দিচ্ছে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি এবং বিজয় হজারে ট্রফি। হয়ত ছাপিয়েও গিয়েছে। কারণ আইপিএল। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি আইপিএল নিলামের আগে এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে এই দুটি প্রতিযোগিতার জন্য। এই দুটি প্রতিযোগিতার উপর কড়া নজর রাখেন ফ্র্যাঞ্চাইজির স্কাউটরা।
এমনিতে সারা বছরই এই স্কাউটরা ক্রিকেটারদের উপর নজর রাখেন। এই কারণেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি প্রচুর টাকা খরচ করে এঁদের রাখে। এই মুহূর্তে প্রতিভা খোঁজার সেরা মঞ্চ ঘরোয়া একদিনের প্রতিযোগিতা বিজয় হজারে ট্রফি এবং টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা মুস্তাক আলি ট্রফি। বিভিন্ন রাজ্যের টি-টোয়েন্টি লিগগুলিও এর মধ্যে রয়েছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির বক্তব্য, বিদেশি ক্রিকেটারদের নেওয়ার কাজটা তুলনায় সহজ। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে আনকোরা খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে সঠিক প্রতিভা তুলে আনার কাজটা অনেক কঠিন। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থেকেও ভারতের সাদা বলের ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলির দিকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির বেশি নজর।
জয়ের উচ্ছ্বাস মণীশ পাণ্ডেদের
সামনের বছর আইপিএল-এর বড় নিলাম। তার জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি যেমন অপেক্ষা করে আছে, তেমনি ঘরোয়া ক্রিকেটাররাও অপেক্ষা করে রয়েছে কোনও একটি দলে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য। এ বার দু’টি নতুন দল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর অর্থ ২০ জন ভারতীয় ক্রিকেটার বাড়তি সুযোগ পাবেন। তা ছাড়া এ বার ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি সর্বাধিক চার জন করে ক্রিকেটারকে রেখে দিতে পেরেছে। অর্থাৎ নিলামেই ক্রিকেটার কিনতে হবে দলগুলিকে। ফলে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য সুযোগ আরও বেশি।
বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এখন এই কাজেই জয়পুরে রয়েছেন। সেখানেই চলছে বিজয় হজারে ট্রফির নক-আউট পর্ব। আনন্দবাজার অনলাইনকে জয়দীপ বললেন, ‘‘আমরা সারা বছর ধরে ক্রিকেটার খুঁজে বেড়াই। বিজয় হজারে, মুস্তাক আলি ট্রফির উপর আমাদের মূল নজর থাকে। এই প্রতিযোগিতাগুলো থেকেই প্রতিভা তুলে আনা হয়। আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে জানাই। তারপর ক্রিকেটারদের ট্রায়ালে ডাকা হয়। সেখান থেকে দলে নেওয়া হয়।’’
তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও অনেকে। জয়দীপ বললেন, ‘‘জয়পুরে যে হোটেলে আমি উঠেছি, সেখানেই আমার পাশের ঘরগুলোতে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির স্কাউটরা রয়েছেন। সবাই কড়া নজর রাখছি।’’
আইপিএল-এর জন্য গুরুত্ব কমছে লাল বলের ক্রিকেটের
তিনিও স্বীকার করে নিলেন, রঞ্জি ট্রফিকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বললেন, ‘‘রঞ্জি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের খেলা। রঞ্জির অবশ্যই গুরুত্ব আছে। কিন্তু আইপিএল-এর দল তৈরির জন্য আমরা রঞ্জি ট্রফির খেলা দেখি না। আমাদের কাছে শুধু সাদা বলের ক্রিকেট গুরুত্বপূর্ণ। দুটোই বিজ্ঞান। একটা জীবনবিজ্ঞান হলে আর একটা পদার্থবিজ্ঞান। দুটো সম্পূর্ণ দু’ রকম।’’
স্কাউটরাও এখন জাতীয় বা রাজ্য নির্বাচকদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি নিলামে ক্রিকেটার কেনে। তারপর সেই ক্রিকেটাররা সুযোগ কাজে লাগিয়ে আইপিএল-এ নজর কাড়েন। জাতীয় দলের জন্য তাঁদের দরজা খুলে যায়। অতীতে যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্য থেকে হালের বেঙ্কটেশ আয়ার এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।
এঁরাই প্রমাণ করছেন, রঞ্জির সঙ্গে এখন গুরুত্বে মুস্তাক আলি, বিজয় হজারেও পাল্লা দিচ্ছেন।