সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
বোর্ড সভাপতি হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন তিনি। তার পর প্রথম বার মুখ খুললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে এই নিয়ে কথা বললেন ‘মহারাজ’। কখনও তিনি অভিমানী, কখনও ক্ষুব্ধ। এক বার বোর্ড সভাপতি হিসাবে নিজের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরলেন। পর ক্ষণেই বলে দিলেন, সারা জীবন কেউ প্রশাসক থাকতে পারে না। সবাইকেই জীবনের একটা সময় প্রত্যাখ্যাত হতে হয়।
সৌরভ প্রথমেই বলেছেন, প্রশাসক হিসাবে তিন বছর তিনি উপভোগ করেছেন। তবে ক্রিকেটার হিসাবে জীবন অনেক কঠিন কেটেছে তাঁর। বলেছেন, “প্রশাসক হিসাবে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। তবে খেলাধুলো অনেক বেশি কঠিন ছিল। তবে যে সময়টা বোর্ডে কাটিয়েছি, তা উপভোগ করেছি। খেয়াল করলে দেখবেন, গত তিন বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক কিছুই হয়েছে।”
কী কী? নিজের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে সৌরভ বলেছেন, “কোভিডের মতো দুঃসহ সময়ে সফল ভাবে আইপিএল আয়োজন করেছি আমরা। কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল রুপো পেয়েছে। ভারতের পুরুষ দল বিদেশের মাটিতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটে একটা অন্য রকম শক্তি দেখা যাচ্ছে। তবে ক্রিকেটার হিসাবে সময়টা আলাদা ছিল। সারা জীবন ধরে কেউ প্রশাসক থাকতে পারে না।”
এর পরেই কিছুটা দার্শনিক রূপে পাওয়া গেল সৌরভকে। বলেছেন, “নিজের উপর বিশ্বাস রাখা জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রত্যেককেই জীবনে পরীক্ষায় বসতে হয়, প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। তবে নিজের উপর বিশ্বাস কখনও বদলায় না।”
কী ভাবে এক জন মানুষ সফল হতে পারেন, সেই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সৌরভ। তাঁর কথায়, “সবাই শেষটাই দেখে। কিন্তু বোঝার চেষ্টা করে না যে আমাদের সবাইকে শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। প্রশাসক হিসাবে হয়তো আমার এখানেই ইতি। এখন হয়তো আমাকে নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে। সেখানেও শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি সবাইকে বলি, দেশের হয়ে খেলার থেকে বড় আর কিছু হয় না। আমি সিএবি-র প্রেসিডেন্ট ছিলাম, বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলাম, কিন্তু ও-ই ১৫ বছর আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়। তখন রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠতাম সফল হওয়ার জন্যে। হোটেল থেকে মাঠে যাওয়ার সময় চিন্তা করতাম আজ দিনটা আমার জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ, রান না পেলে আমাকে দলে আর নেওয়া হবে না। দিনের শেষে শতরান পেলে সবচেয়ে ভাল লাগত।”
নিজের সফল ক্রিকেটজীবন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছেন, “পঙ্কজদা (রায়) অবসর নেওয়ার পর বাংলার থেকে সে ভাবে কোনও ক্রিকেটারই জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছিল না। আমি বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি যে, পূর্বাঞ্চলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে। অনেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার রয়েছে। কিন্তু জাতীয় দলে তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যেত না। আমি কখনও অতীতের দিকে ফিরে তাকাইনি। বর্তমানে বাঁচতে ভালবাসি। ভারতের হয়ে ১০০-র বেশি টেস্ট খেলেছি। লর্ডসে টেস্ট অভিষেক এখনও আমার জীবনের একটা স্মরণীয় মুহূর্ত।”
অধিনায়ক হিসাবে কী ভাবে কঠিন সময় শক্ত হাতে সামলেছেন, সে কথা উল্লেখ করেছেন সৌরভ। বলেছেন, “আমি এমন একটা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি যেখানে সবাই অধিনায়ক হতে পারত। যেমন সচিন, রাহুল, ভিভিএস। কিন্তু আমাকে অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়, যাতে আমি ওদের নেতা বানাতে পারি, আবার সঠিক পথে চালনাও করতে পারি। এক বার রাহুলকে দল থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আমি তখন ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।”