শরদ পওয়ার যখন প্রেসিডেন্ট হলেন, বাদ পড়ে যান সৌরভ। সেই সময় বাংলা থেকে বোর্ডের কমিটিতে ছিলেন প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার এবং নির্বাচক রাজা বেঙ্কট ও এরিয়ান কর্তা সমর পাল।
বিতর্কে: সিএবি সচিবের মন্তব্যে বিস্ময় ক্রিকেট মহলে। ফাইল চিত্র
ঋদ্ধিমান সাহার প্রতি ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি ও নির্বাচক কমিটির অন্যায় আচরণ নিয়ে প্রতিবাদে সরব হওয়া দূরে থাক। সিএবি সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বরং ঔদ্ধত্যপূর্ণ, নিন্দনীয় ভঙ্গিতে বলে দিলেন, তাঁরা এ নিয়ে কোনও লড়াই-ই করবেন না। উল্টে বলে গেলেন, তাঁর ভাই এবং বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মোবাইল মেসেজ ফাঁস করে দিয়ে ঠিক করেননি ঋদ্ধি। ‘‘সৌরভ ওকে কী টেক্সট পাঠিয়েছে, সেটা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করা ঠিক হয়নি ঋদ্ধির,’’ বলেন তিনি।
রবিবার ইডেনে তৃতীয় ম্যাচ চলার মাঝে ঋদ্ধির বাদ পড়া নিয়ে স্নেহাশিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটা ভারতীয় বোর্ডের বিষয়। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে সিএবি-র কোনও বক্তব্য নেই। কোচ ও নির্বাচক কমিটির বক্তব্যের পরে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা কিছু বলতে পারে নাকি?’’ কেন নয়? অতীতে তাঁরই ভাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি অন্যায় হলেই গর্জে উঠেছেন বাংলার ক্রিকেট প্রশাসকেরা। স্বয়ং জগমোহন ডালমিয়া সব সময় তাঁর পাশে থেকে বোর্ডের বাকিদের সঙ্গে লড়াই করেছেন। সন্দীপ পাটিলকে কোচের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে সৌরভকে বাদ দেওয়ার জন্য। এ সি মুথাইয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচন লড়ে বোর্ডের মসনদ দখল করে সৌরভের নেতৃত্ব পদ সুরক্ষিত করেছেন ডালমিয়া।
এমনকি বোর্ডে পালাবদলের পরে শরদ পওয়ার যখন প্রেসিডেন্ট হলেন, বাদ পড়ে যান সৌরভ। সেই সময় বাংলা থেকে বোর্ডের কমিটিতে ছিলেন প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার এবং নির্বাচক রাজা বেঙ্কট ও এরিয়ান কর্তা সমর পাল। তাঁরা শরদ পওয়ারকে গিয়ে বলেছিলেন, সৌরভকে ভারতীয় দলে ফেরত না নেওয়া হলে, তাঁরা পদত্যাগ করবেন। তার পরেই পাকিস্তান সফরে ফেরানো হয় সৌরভকে।
সিএবি-র দীর্ঘ দিনের শীর্ষ কর্তা, বোর্ডের প্রাক্তন যুগ্ম-সচিব গৌতম দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘সৌরভ যখন বাদ পড়েছিল, জগমোহন ডালমিয়া ছিলেন। তাই বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে আমাদের অসুবিধে হয়নি। এখন যারা সিএবি চালাচ্ছে তারা কী করবে জানি না। ক্রিকেটারদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই তো রাজ্য সংস্থা। তারাই তো দেখবে, যাতে ক্রিকেটারদের উপরে অন্যায় না হয়। বোর্ডকে প্রশ্ন করা সিএবি-র এক্তিয়ারের বাইরে হতে যাবে কেন?’’ তখন যেমন ডালমিয়া বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এখন সৌরভও তাই। সিএবি-র আর এক প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা বিশ্বরূপ দে বললেন, ‘‘রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাই তো প্রশ্ন তুলবে, ঋদ্ধির বাদ পড়ার যুক্তি কী? কেকেআরে বাঙালি ক্রিকেটারেরা যখন ব্রাত্য ছিল, তখনই আমরা প্রতিবাদ করেছি। সৌরভের ক্ষেত্রে তো বোর্ডকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছিল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ঋদ্ধিমান ফর্মে না থাকলে বাদ পড়লে আলাদা কথা ছিল। কিন্তু শেষ টেস্টেও তো রান করে দলকে জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমার দাবি, সিএবি প্রেসিডেন্ট যেন অবিলম্বে বোর্ডকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে প্রশ্ন করে। এক্তিয়ারের বাইরে এ বিষয়টি একেবারেই নয়।’’
ঋদ্ধির বাদ পড়া নিয়ে যখন সারা দেশ উত্তাল, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আবেগপূর্ণ সমর্থন আসছে, তখন ইডেনে দাঁড়িয়ে খাস সিএবি সচিবের একেবারে উল্টো সুর। বিস্ময়কর মন্তব্য, ‘‘চেতন শর্মাকে আমরা জিজ্ঞেস করতে যাব না, ঋদ্ধির সঙ্গে ওরা এ রকম করল কেন! রঞ্জি ট্রফিতে যদি ও পরপর দু’টো সেঞ্চুরি করে, আবারও ওর দরজা খুলে যেতে পারে। ক্রিকেটার হলে তোমাকে খেলে যেতেই হবে।’’ এই চেতন শর্মাকে এনে কয়েক দিন আগে ঘটা করে ইডেনের ঘণ্টা বাজিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। স্নেহাশিসদের সেখানে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে দেখা গিয়েছে। যা বঙ্গ ক্রীড়া প্রশাসনের সর্বকালীন লজ্জার ছবি হয়ে থেকে যাবে।
স্নেহাশিস আরও বলছেন, ‘‘রঞ্জির দলগঠনের সময় বাংলার নির্বাচকদের মারফত ঋদ্ধির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওর থেকে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক কোনও বক্তব্য পাইনি। রঞ্জিতে ও খেলবে কি না, দ্বিধায় ছিলাম। আমাদের প্র্যাক্টিস ম্যাচের দিনও জানতাম না ঋদ্ধি রঞ্জিতে খেলবে কি না। দলগঠনের দিন নির্বাচক শুভময় দাসকে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। তখন ও শুভময়কে জানায়, খেলতে চায় না ব্যক্তিগত কারণে। তার আগে সত্যি জানতাম না ঋদ্ধি খেলবে না।’’ ঋদ্ধির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্নেহাশিসের মুখে তাঁদের ‘পারিবারিক ক্লাব’ বড়িশা স্পোর্টিংয়ের ক্রিকেটার এবং সদ্য ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অতিরিক্ত হিসেবে সুযোগ পাওয়া উইকেটকিপার অভিষেক পোড়েলের নাম। তাঁর কথায়, ‘‘অভিষেক পোড়েলের দিকে আমাদের নজর থাকবে। খুব ভাল খেলেছে রঞ্জিতে। এই ইনিংসের পরে ওর পাশে দাঁড়ানো উচিত। তবে ঋদ্ধি খেলতে চায় কি না, সম্পূর্ণ ওর সিদ্ধান্ত।’’ যদিও রবিবার বাংলার জয়ে শাহবাজ় আহমেদের (৭১ নট আউট) অবদানও কিছু কম ছিল না।