সাইমন্ডস-ওয়ার্ন: চিরবিদায় জানালেন দুই বন্ধুই। —ফাইল চিত্র
দু’মাস আগের এক শুক্রবার। সন্ধেবেলা সবাইকে হতবাক করে দেন শেন ওয়ার্ন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রবিবার তাঁর বন্ধুও চলে গেলেন তাঁর কাছে। অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস প্রয়াত। বয়স মাত্র ৪৬ বছর। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের দুই বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিশ্ব।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় এক সঙ্গে সাজঘর ভাগ করে নিয়েছিলেন ওয়ার্ন এবং সাইমন্ডস। এক জন মত্ত অবস্থায় মাঠে নামার জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন, অন্য জনকে দেখা গিয়েছিল খেলা চলাকালীন সাইটস্ক্রিনের ধারে ধূমপান করতে। সাইমন্ডস এবং ওয়ার্ন কখনও বিতর্ক থেকে দূরে চলে গেলে বিতর্ক তাঁদের পিছু পিছু দৌড়তে দৌড়তে আসে। ক্রিকেট ছাড়ার পরেও বিতর্ক তাঁদের পিছন ছাড়েনি। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময়ও বিতর্কে জড়িয়ে যান তাঁরা।
এক সঙ্গে শুধু সাজঘর নয়, হোটেলের ঘরও ভাগ করে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এই দুই ক্রিকেটার। এক বার হোটেলের ঘর ভাগ করে নেওয়ার সময় ওয়ার্নের মোজায় ২৭ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন সাইমন্ডস। মাটিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পড়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট চলাকালীন ক্যাসিনোতে খেলে ওই টাকা জিতেছিলেন ওয়ার্ন। সাইমন্ডস বলেছিলেন, “ওয়ার্নের কাছে প্রচুর মোজা থাকত। সেই সব মোজার মধ্যে টাকা ভরে রাখত ও।” স্বাভাবিক ভাবেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সাইমন্ডস। তিনি প্রশ্নও করেন ওয়ার্নকে। সাইমন্ডস অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনারকে বলেন, “প্রচুর প্রচুর টাকা। আমি জিজ্ঞেস করলাম এত টাকা কোথা থেকে এল।” উত্তরে ওয়ার্ন বলেছিলেন, “কাল ক্যাসিনোতে একটা ছোট্ট জয় পেয়েছি। আর তুমি তো জান, টাকাই রাজা।”
ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় মার্নাস লাবুশানেকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন ওয়ার্ন এবং সাইমন্ডস। বিগ ব্যাশ লিগে একটি ম্যাচ চলাকালীন ওয়ার্ন লাবুশানেকে বল করতে নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। সেই সময় সাইমন্ডস বলেছিলেন, “ওর এডিডি আছে।” ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিসঅর্ডার’-কেই ছোট করে এডিডি বলেছেন সাইমন্ডস। অর্থাৎ এমন কোনও ব্যক্তি, যিনি সব সময় অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান। এমন রোগেই আক্রান্ত লাবুশানে, বলে মনে করেন সাইমন্ডস।
এই কথা যখন আলোচনা করছেন, অনুষ্ঠানটি তখন দেখানো হচ্ছিল চ্যানেলে। সেটা বোধ হয় জানতেন না দুই ধারাভাষ্যকার। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট চলছে বলে দেরিতে শুরু হওয়ার কথা ছিল বিগ ব্যাশ লিগের ম্যাচ। সেই ম্যাচের আগেই ঘটে এমন ঘটনা।
অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেলের সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় সেই চ্যানেল। টুইট করে তারা লেখে, ‘আমাদের প্রোগ্রাম আগেই শুরু হয়ে যায়, সেই সময় এমন কিছু বক্তব্য সামনে আসে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। চ্যানেল এবং ধারাভাষ্যকারদের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’
বন্ধুত্ব, বিতর্ক পার করে একই বছরে মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে প্রয়াত ওয়ার্ন এবং সাইমন্ডস। এক জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, রবিবার সাইমন্ডস মারা যান গাড়ি দুর্ঘটনায়। শেষ হয়ে গেল এক বন্ধুত্বের কাহিনিও।