(বাঁ দিকে) রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। ছবি: এএফপি।
সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশকে ফলোঅন করাল না ভারত। নাজমুল হোসেন শান্তদের প্রথম ইনিংস ১৪৯ রানে শেষ হওয়ার পর আম্পায়ার রড টাকার রোহিত শর্মার কাছে জানতে চান, ফলোঅন করাবেন কি না। রোহিত মাথা নাড়িয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে মাঠ ছাড়েন। হাতে ২২৭ রানের পুঁজি নিয়েও চিপকের ২২ গজে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি ভারতীয় শিবির। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১/৩। এগিয়ে ৩০৮ রানে। প্রথম টেস্টে জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছেন রোহিতেরা।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সকালে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৭৬ রানে। প্রথম দিনের শেষে শতরানের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্র জডেজা শুক্রবার থিতু হওয়ার আগেই আউট হয়ে যান ৮৬ রানেই। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ইনিংস থামল ১১৩ রানে। ব্যাট হাতে সাধ্য মতো লড়াই করলেন আকাশ দীপও। ১৭ রান করলেন বাংলার অলরাউন্ডার। যশপ্রীত বুমরার ব্যাট থেকে এল ৭ রান। প্রথম দিন ৪ উইকেট নেওয়া হাসান মাহমুদ ৫ উইকেট পূর্ণ করলেন বুমরাকে আউট করে। ৮৩ রানে ৫ উইকেট তাঁর। ৫৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তাসকিন আহমেদের।
ভারতের প্রথম ইনিংসের প্রথম ২৬ ওভার যে ছবি দেখা গিয়েছিল, সেই ছবি আবার শুক্রবার ফিরল চিপকে। বাংলাদেশের গোটা ইনিংস জুড়েই ব্যাটারদের অস্বস্তি চোখে পড়ল। শাকিব হাসান, লিটন দাস এবং মেহদি হাসান মিরাজ ছাড়া বাংলাদেশের কারও মধ্যে উইকেট আঁকড়ে থেকে লড়াই করার চেষ্টা দেখা গেল না। পাকিস্তানের মাটিকে শান মাসুদদের ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ়ে হারিয়ে আসা শান্তদের ভারতের মাটিতে ততটা আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে না। হতে পারে চেন্নাইয়ের অপরিচিত ২২ গজ তাঁদের চাপে রেখেছে। ব্যাটিং অর্ডারের শুরুর দিকের ব্যাটারদের ব্যর্থতা সেই চাপ আরও বৃদ্ধি করে।
দুই ওপেনার শাদমান ইসলাম (২) এবং জ়াকির হাসান (৩) শুরুতেই ফিরে যান। অধিনায়ক শান্ত (২০) কিছুটা চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হলেন মোমিনুল হক (শূন্য), মুশফিকুর রহিমও (৮)। ৪০ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতীয় বোলারেরা সফরকারীদের কোণঠাসা করে ফেলেন। শাদমানকে আউট করে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন বুমরা। নবম ওভারে পর পর জ়াকির এবং মোমিনুলকে আউট করে প্রতিপক্ষ দলের চাপ বাড়িয়ে দেন আকাশ। শান্তকে আউট করেন সিরাজ। মুশফিকুরকে সাজঘরে ফেরান বুমরা। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ ব্যাটারের চার জন দাঁড়াতেই পারলেন না। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগেই ৫ উইকেট চলে যায় বাংলাদেশের।
মধ্যাহ্নভোজের পর কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন শাকিব, লিটন। তাঁদের ষষ্ঠ উইকেটে জুটিতে ওঠা ৫১ রান কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরায় বাংলাদেশ শিবিরে। ২২ রান করে লিটন আউট হলেন জাডেজার বলে। কয়েক বলের ব্যবধানে আউট শাকিবও (৩২)। তিনিও জাডেজার শিকার। ২২ গজে জমে যাওয়া জুটির দু’জনকেই আউট করে বাংলাদেশকে আবার চাপে ফেলে দেন জাডেজা। টেল এন্ডারদের নিয়ে বাকি লড়াইটা করলেন মেহদি। ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে সঙ্গী হিসাবে পেলেন হাসান মাহমুদ (৯), তাসকিন আহমেদ (১১) এবং নাহিদ রানাকে (১১)। বুমরা ৫০ রানে ৪ উইকেট নিলেন। ১৯ রানে ২ উইকেট আকাশের। জাডেজাও ২ উইকেট নিলেন ১৯ রান খরচ করে। সিরাজের ২ উইকেট ৩০ রানে। ভাল বল করেও উইকেট পেলেন না অশ্বিন। ভারতীয় বোলারদের দাপটে ৪৭.১ ওভারে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক হয়ে খেলছেন ভারতীয়েরা। যদিও তাসকিনের হঠাৎ উঠে আসা বলে আউট হয়ে শুরুতেই আউট রোহিত (৫)। অন্য ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালও (১০) রান পেলেন না। ২৮ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের হাল ধরেন শুভমন গিল। পিচের এক প্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা করলেন তিনি। সাবধানে খেলার চেষ্টা করেও লাভ হল না কোহলির। ১৭ রান করে মেহদির বলে ফিরলেন সাজঘরে। তাঁর আউট ঘিরে অবশ্য হতাশা থাকল ভারতীয় শিবিরে। মেহদির বল কোহলির ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লাগে। বাংলাদেশের আউটের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার রিচার্ড কেটলবোরো। কিন্তু কোহলি বুঝতেই পারেননি বল তাঁর ব্যাটে সামান্য লেগেছে। তিনি শুভমনের সঙ্গে আলোচনা করলেও রিভিউ নেননি। পরে রিপ্লেতে বোঝা যায়, কোহলি আউট ছিলেন না। তা দেখার পর দৃশ্যতই হতাশ দেখিয়েছে রোহিতদের। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় অপরাজিত শুভমন (৩৩) এবং ঋষভ পন্থ (১২)। বাংলাদেশের রানা ১২ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। ১৬ রানে ১ উইকেট মেহদির। ১৭ রানে ১ উইকেট তাসকিনের।
ভারতীয় দলের হাতে এখনও ৭ উইকেট আছে। শনিবার রোহিতেরা আরও অন্তত ১৫০ রান যোগ করতে পারলে চাপে পড়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। চেন্নাইয়ের পিচে চতুর্থ ইনিংসে ৪৫০ রানের বেশি তাড়া করা বেশ কঠিন হবে সন্দেহ নেই।