ভারতের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজে রিয়ান বার্লই দলের অন্যতম ভরসা। —ফাইল চিত্র
দেশের হয়ে খেলার টান। জাতীয় দলে ডাক পেতেই সব কিছু ছেড়ে চলে এসেছিলেন রিয়ান বার্ল। সেই সময় তাঁর বয়স কুড়িও পেরোয়নি। সাদাম্পটনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। ইংল্যান্ডে তাঁর সামনে হাতছানি ছিল নিশ্চিন্ত জীবনের। কাউন্টিতে ক্রিকেটও খেলছিলেন। ভাল খেললে হয়তো ইংল্যান্ডের হয়ে নামার সুযোগও পেয়ে যেতেন। কিন্তু তাঁর মনে হত কিছু একটা নেই।
এরকমই একটা সময় জিম্বাবোয়ের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার ডাক পেলেন বার্ল। উপলব্ধি করলেন এটাই খুঁজছিলেন তিনি। বার্লের জীবন পূর্ণতা পেল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সেই সময় খুব ছোট ছিলাম। ২০১৩-১৪ সালে সাদাম্পটনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। কী করব, কোন খাতে আমার জীবন বইবে, কিছুই জানতাম না। ১৯- ২০ বছর বয়সে সকলেই খুব নির্লোভ থাকে। দেশের জন্য খেলার গর্ব এবং আবেগের উপর দাঁড়িয়ে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। জিম্বাবোয়েতে ফিরে আসি। পড়াশোনা ছেড়ে দিই, কাউন্টি খেলা ছেড়ে দিই। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, দেশের হয়ে খেলব।”
বার্ল জানান, টাকাপয়সা, ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ, কোনও কিছুই তাঁর মাথায় আসেনি। জিম্বাবোয়ের জার্সি পরাটাই তাঁর কাছে সব থেকে বড় ছিল। পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ইতিমধ্যে তিনটি টেস্ট, ২৮টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৪৭টি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন বার্ল। তিনি বলেন, “সেই সময় আমার নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ আর কোনও আক্ষেপ নেই। খুব ভাল আছি।”
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিজের বলেই ক্যাচ নিচ্ছেন বার্ল। ছবি: পিটিআই
যতটা সহজে বার্ল কথাগুলো বলেছেন, তাঁর সুযোগ পাওয়ার রাস্তাটা তত সহজ ছিল না। ছ’বছর আগে তাঁর কাছে প্রথম সুযোগ এসেছিল জিম্বাবোয়ের হয়ে নামার। ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ এসেছিল তাঁর সামনে। ছ’বছর আগেই শেষ বার জিম্বাবোয়ে সফরে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু বার্লের নামার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চোট। লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় তাঁর। বার্ল বলেন, “শেষ বার আমরা যখন ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম, সে বার আমার লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামার আগেই চোট লাগে আমার।” মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হারান বার্ল। এ বার ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে তিনিই দলের অন্যতম ভরসা।
এই ছ’বছরে জিম্বাবোয়ের ক্রিকেটে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। অর্থনৈতিক অবনতি, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের জন্য আইসিসির নির্বাসন (জুলাই, ২০১৯)। তিন মাস পর শাস্তি উঠে গেলেও ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। বার্লের কাছে সেটা খুব কঠিন সময় ছিল। তিনি বলেন, “সেই সময়ের মানসিক অবস্থা বোঝানো খুব কঠিন। সব কিছুই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কী হবে কেউ জানত না, তার মধ্যে করোনা চলে এল। মনে হচ্ছিল, আবার খেলতে পারব তো? ২০১৯ সালে এক দিনের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি আমরা। মাত্র কয়েক রানের জন্য সেই সুযোগ হাত ছাড়া হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলতে পারিনি। খুব কঠিন সময় ছিল। কান্নাকাটি করেছিলাম আমরা। ওই সময়টা কাটিয়ে বেরতে চাইছিলাম।”
২০১৯ সালের অক্টোবরে নির্বাসন উঠে গেলেও তার পর করোনা চলে আসায় স্পনসর পাচ্ছিল না জিম্বাবোয়ে দল। কোনও দল তাদের সঙ্গে খেলতেও আগ্রহী ছিল না। অর্থনৈতিক ভাবে সে দেশের ক্রিকেট বোর্ড ভেঙে পড়েছিল। সেই বার্লের ছেঁড়া জুতোর একটা টুইট বিশ্ব ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ছেঁড়া জুতোর ছবি দিয়ে বার্ল লেখেন, ‘আমরা কি কোনও স্পনসর পাব, যাতে প্রতি সিরিজের পর আমাদের জুতো আঠা দিয়ে আটকাতে না হয়?’ সেই টুইট প্রসঙ্গে বার্ল বলেন, “ক্রিকেটাররা কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেটা দেখাতে চেয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত ওই পরিস্থিতিতে আমি একা ছিলাম না। অনেকেই জুতোয় আঠা লাগাত। সাজঘরে আমাদের ক্রিকেটারদের এটাই পরিস্থিতি ছিল।”
সেই অবস্থা পাল্টেছে। ডেভ হাউটনের প্রশিক্ষণে জিম্বাবোয়ে ফের জিততে শুরু করেছে। গত পাঁচ বছরে প্রথম বার কোনও টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতে তারা। বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি এবং এক দিনের সিরিজে হারিয়ে দেয় জিম্বাবোয়ে। বার্ল বলেন, “আমরা খুব ইতিবাচক ক্রিকেট খেলছি। জয়ের পিছনে সেটাই আসল কারণ। পর পর দুটো সিরিজ জয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছি আমরা। আর কয়েক মাসের মধ্যে দেশের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ খেলতে নামব।”
বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের এক দিনের সিরিজ খেলতে নামবে জিম্বাবোয়ে। বার্ল বলেন, “আমরা সহজ ভাবে খেলতে চাই। দেশের মাঠে খেলা, পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অনেক বেশি ভাল জানি। পরিকল্পনা তৈরি আছে, মাঠে নেমে সেটা কার্যকর করতে হবে।”