রোহিত শর্মা। ছবি: পিটিআই।
দীর্ঘ ১২ বছর আগে ভারতে হয়েছিল এক দিনের বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ তাঁকে দেখতে হয়েছিল বাড়িতে বসে বন্ধুদের সঙ্গে। শেষ মুহূর্তে দল থেকে বাদ পড়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল তাঁর কাছে। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতের সেই বিজয়মিছিলে তাঁরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। এতটা পথ পেরিয়ে ১২ বছর পরে সেই ওয়াংখেড়েতে একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তিনি যখন নামছেন, তখন শুধু ভারতীয় দলের নিছক একজন ক্রিকেটারই নন, দলের নেতাও বটে। এক যুগ শেষে এ ভাবেই একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল রোহিত শর্মার কাছে। তবে এ বার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোহিত নিজের শহরে রান পেলেন না।
২০১১-র সেই বিশ্বকাপের বেশ কিছুটা সময় আগে থেকেই সাদা বলের ক্রিকেটে নিজের দাপট দেখাতে শুরু করেছিলেন রোহিত। ভারতীয় দলে ক্রমশ নিজের জায়গা পাকা করে নিচ্ছিলেন। বিশ্বকাপের দলেও তাঁকে নেওয়া প্রায় ঠিক হয়ে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে অতিরিক্ত বোলার আনার স্বার্থে পীযূষ চাওলাকে দলে নেওয়া হয়। বাদ পড়েন রোহিত। পরে একাধিক সাক্ষাৎকারে নিজেই সেই সময়ের কষ্টের কথা জানিয়েছিলেন। কোনও দিন যে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন সেই ভাবনাই মুছে গিয়েছিল মন থেকে। সেখান থেকে পর পর তিনটি বিশ্বকাপে তিনি খেলে ফেলেছেন। আর এখন দলের নেতা। স্বাভাবিক ভাবেই দায়িত্ব বেশি।
শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে টসের সময় আবেগপ্রবণ রোহিতকে দেখা গেল। ওয়াংখেড়ের মাঠে খেলেই রোহিত ধীরে ধীরে ভারতীয় দলের ‘শর্মা’ হয়ে উঠেছেন। এই মাঠেই তাঁর অনেক ঘাম-রক্ত জড়িয়ে রয়েছে। রঞ্জি ট্রফি হোক বা বিজয় হজারে, ওয়াংখেড়ে জানে রোহিতের সব লড়াইয়ের ইতিহাস। টসে হেরে গেলেও বৃহস্পতিবারের ওয়াংখেড়ে রোহিতের জন্যে ক্রমাগত চিৎকার করেছে। তিনিও বলেছেন, “এই মাঠে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামা, তার উপর দেশের অধিনায়ক হিসাবে, এই সম্মান ভাবতেও পারছি না।” ছ’টা ম্যাচ খেলার পর ঘরের মাঠে এসে পৌঁছতে পেরেছেন। আবেগ স্বাভাবিক ভাবেই বাঁধ মানছিল না।
সব ঠিকঠাক হল। কিন্তু ব্যাট হাতে তাঁর দাপট দেখা গেল। দিলশান মদুশঙ্ককে প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বলেই ওয়াংখেড়েতে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। মদুশঙ্কের প্রথম বলে ভেতরে ঢুকে এসেছিল। ফ্লিক করে চার মেরেছিলেন রোহিত। দ্বিতীয় বল পড়ল একই জায়গায়। কিন্তু ভেতরে ঢোকার বলে ‘কাটার’ হয়ে বাইরের দিকে বেরোল। রোহিত শটটা একই চালিয়েছিলেন। বল তাঁর ব্যাট এড়িয়ে ভেঙে দিল অফস্টাম্প।
বস্তুত, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়াংখেড়ের সঙ্গে রোহিতের সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। এর আগে তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন। কোনওটিতেই বড় রান করতে পারেননি। বৃহস্পতিবারের ম্যাচ নিয়ে চার ইনিংসে তাঁর রান দাঁড়াল ৫০। সেমিফাইনালে আবার এই মাঠে ফেরত আসতে পারে ভারত। রোহিত চাইবেন, সেই প্রত্যাবর্তন যেন স্মরণীয় হয়।