Virat Kohli

Rohit Sharma: ২০২২ কুড়ির বিশ্বকাপে নেতৃত্বের মুখ রোহিতই

এমন প্রস্তাব নিয়ে বোর্ডের মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা নেই।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০৯
Share:

যুগবদল: কোহালির উত্তরসূরি হওয়ার পথে রোহিত। ফাইল চিত্র

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাট কোহালির ভারতীয় দল পুরনো মেজাজে ফেরার রাতেই ভবিষ্যতের রাস্তা নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে গেল। এক দিকে রাহুল দ্রাবিড়ের নাম পরবর্তী হেড কোচ হিসেবে সরকারি ভাবে ঘোষণা করে দিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এতটাই নিরঙ্কুশ গ্রহণযোগ্যতা ‘দ্য ওয়াল’-কে নিয়ে যে, ঘটা করে আর বাকি প্রার্থীদের ইন্টারভিউও নেওয়ার প্রয়োজন পড়ল না। তেমনই, ভিতরে-ভিতরে ঠিক হয়ে গিয়েছে, বিরাট কোহালির উত্তরসূরি হিসেব রোহিত শর্মাকেই বেছে নেওয়া হবে।

Advertisement

কয়েকটি মহল থেকে প্রশ্ন উঠছিল যে, সামনের বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রয়েছে। রোহিতের তখন ৩৫ বছর বয়স হচ্ছে। খুব ফিট ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি পড়েন না। আরও তরুণ কাউকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত কি না। যেমন কে এল রাহুল বা ঋষভ পন্থের মতো কাউকে?

এমন প্রস্তাব নিয়ে বোর্ডের মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা নেই। শীর্ষ স্থানীয় কর্তারা রোহিতকেই সাদা বলের ক্রিকেটে বিরাটের উত্তরসূরি হিসাবে দেখতে চাইছেন। তাঁরা মনে করছেন না, আগামী বছর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে পাঁচটি আইপিএল জেতা রোহিতের বয়স খুব বেড়ে যাচ্ছে বা তাঁর নেতৃত্বে তীব্রতা, ধার-ভার কমতে পারে। ওয়াকিবহাল মহলের কয়েক জনের কথায়, ‘‘রোহিত এখনও ব্যাটসম্যান হিসাবে সব ধরনের ক্রিকেটেই চুটিয়ে খেলছে। সর্বত্র রান করছে। তা ছাড়া বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে অভিজ্ঞ কারও হাতেই তো দায়িত্ব দিতে হবে। তরুণ কাউকে তৈরি করা হোক তার পরের বিশ্বকাপের জন্য।’’ তাই আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় কুড়ির বিশ্বকাপে রোহিতকেই অধিনায়কত্বের মুখ হিসাবে ভেবে এগোতে চায় বোর্ড।

Advertisement

মনে করিয়ে দেওয়া যাক, ভারতীয় ক্রিকেটে অধিনায়ক নির্বাচন কখনওই জাতীয় নির্বাচকদের হাতে ছাড়া হয়নি। বরাবর এ ব্যাপারে শেষ কথা বলেছে ভারতীয় বোর্ড। সে কপিল দেবকে সরিয়ে সুনীল গাওস্করকে নেতৃত্বে ফেরানো হোক কী সচিন তেন্ডুলকরের থেকে ফের মহম্মদ আজহারউদ্দিনের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন বা দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্বের সিংহাসনে থেকে যাওয়া বোর্ডের হেডকোয়ার্টার্সের ছাপ্পা ছাড়া হত না।

একমাত্র ব্যতিক্রম সম্ভবত টাইগার পটৌডির থেকে অজিত ওয়াড়েকরের অধিনায়কত্ব স্থানান্তরিত হওয়া। তখনকার নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান বিজয় মার্চেন্টের বিখ্যাত কাস্টিং ভোটে নবাবকে সিংহাসনচ্যূত করে নেতৃত্বের মুকুট ওঠে ‘কমন ম্যান’ ওয়াড়েকরের মাথায়। তবু তিনি ছিলেন বিজয় মার্চেন্ট। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের এক জন। তাঁর কথার অন্য রকম প্রভাব।

চেতন শর্মা নিশ্চয়ই বিজয় মার্চেন্ট নন। তাই ধরে রাখা যায়, এ বারও পর্দার আড়ালে অধিনায়ক নিয়ে ‘নির্দেশ’ চেতনদের কমিটির কাছে পৌঁছে দেবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জয় শাহরা। আর বোর্ডের উচ্চ মহলের যা মনোভাব টের পাওয়া যাচ্ছে, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে আসন্ন সিরিজ়ে রোহিতকেই টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হবে। এখনই অন্য কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। শোনা যাচ্ছে, ১০ নভেম্বর নাগাদ নতুন অধিনায়ক নির্বাচন করা হতে পারে।

নতুন কোচ দ্রাবিড়ের সঙ্গে যাত্রা শুরু নতুন অধিনায়কের। শাস্ত্রী-কোহালি দু’জনেই ছিলেন আগুন। দ্রাবিড়-রোহিত জুটি বরফশীতল। দু’জনেই ঠান্ডা মাথায় কাজ সারতে পছন্দ করেন। তাই ড্রেসিংরুম আবহাওয়ায় বদল ঘটলে অবাক হওয়ার নেই। কোহালি ফিটনেস-মত্ত, দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা ফেরারি। রোহিত অলস আভিজাত্যে ভরা রোলস রয়েস। দুই অধিনায়কের ধরন, পৃথিবীও যে দু’রকম।

তর্কের বিষয় হচ্ছে, পঞ্চাশ ওভারের অধিনায়কত্ব নিয়ে কী করা হবে? কোহালি জানিয়েছেন, তিনি শুধু টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ছাড়ছেন, পঞ্চাশ ওভারের এবং টেস্টের অধিনায়ক হিসেবে চালিয়ে যেতে চান। আবার প্রথা হচ্ছে, কুড়ি ও পঞ্চাশ ওভারে এক জনকেই দায়িত্ব দেওয়া, লাল বলের ক্রিকেটে অন্য অধিনায়ক ঠিক করা হয়। সেই প্রথা অনুযায়ী, সাদা বলের পুরো নেতৃত্বই রোহিতের হাতে যাওয়ার কথা, টেস্টের অধিনায়কত্ব থাকা উচিত বিরাট কোহালির কাছে।

তবে ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের কাছে স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, এখনই এই কঠিন প্রশ্নপত্র নিয়ে না বসলেও চলবে। সামনে এখনই কোনও ওয়ান ডে ক্রিকেট সিরিজ় নেই, তাই কোহালির পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরে আলোচনা করলেও চলবে। কোহালি নিজে থেকে যদি সরে দাঁড়াতে চান বা আলোচনার মাধ্যমে সৌজন্য রক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবেন, সেই রাস্তাও খোলা থাকছে। প্রভাবশালী কারও কারও কথায়, ‘‘কোহালি বিশ্বের সেরাদের এক জন। ভারতীয় ক্রিকেটে ওর অবদানের কথা কে অস্বীকার করবে? যা করা হবে, ওর প্রতি সম্মান দেখিয়েই করা হবে।’’

নেতৃত্বের ব্যাটন বদলের পরেও সুসম্পর্ক অটুট থেকেছে ধোনি-কোহালির মধ্যে। কোহালি-রোহিত সমীকরণ কী দাঁড়ায়, দেখার অপেক্ষায় কৌতূহলী ক্রিকেট দুনিয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement