এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থ রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। ভারতের ব্যর্থতার পরে সমালোচনা শুরু হয়েছে আইপিএল নিয়েও। —ফাইল চিত্র
ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিদেশি লিগে খেলার বিষয়ে সওয়াল করেছিলেন অনেকে। তাঁদের মত ছিল, অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশে খেলার জন্যই ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা এতটা সফল। এই কথা মানতে রাজি নন রবি শাস্ত্রী। ভারতের প্রাক্তন কোচের মতে, আইপিএলই যথেষ্ট। বিদেশি লিগে খেলার কোনও দরকার নেই বলেই জানিয়েছে তিনি।
একটি সাক্ষাৎকারে বিদেশি লিগে খেলার প্রসঙ্গে শাস্ত্রী বলেছেন, ‘‘সব কিছুর একটা পদ্ধতি থাকে। শুধু বিভিন্ন দেশে খেলে বেড়ালেই হবে না। আসল বিষয় হল বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতির বিষয়ে শেখা। তার জন্য বিদেশি লিগে খেলার কোনও দরকার নেই। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেটাররা অনেক বেশি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ় খেলে। সেখানেই সেই শিক্ষা হয়ে যায়।’’
শাস্ত্রীর মতে, আইপিএলের যে পরিকাঠামো তা বিশ্বের কোনও লিগে নেই। সেই কারণে বিশ্বের সব ক্রিকেটার আইপিএল খেলতে আসেন। তা হলে কেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা বাইরে যাবেন? শাস্ত্রী বলেছেন, ‘‘আইপিএলের পরিকাঠামো সব থেকে ভাল। কেন খামোখা বিদেশের উপর নির্ভর করব। আমাদের বেঞ্চের দিকে তাকালেই দেখা যাবে সেটা কতটা শক্তিশালী। একসঙ্গে তিনটে দলকে খেলতে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে।’’
বিদেশের লিগে খেলতে যাওয়ার বদলে ঘরোয়া লিগে খেলার উপর বেশি জোর দিয়েছেন শাস্ত্রী। তাঁর মতে, দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদেরও ঘরোয়া লিগে খেলা উচিত। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটও যথেষ্ট উন্নত। তা হলে আইপিএলের বাইরে খেললে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা উচিত সবার। সিনিয়রদেরও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা উচিত। তা হলে তরুণরা অনেক কিছু শিখতে পারবে। তাদের শুধু আইপিএলের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে না।’’
বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিদেশি লিগে খেলার বিষয়ে দরবার করেছিলেন আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং। তাঁর বক্তব্য ছিল, “ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, অ্যাডিলেডে অ্যালেক্স হেলসের অভিজ্ঞতার কথা। সারা বিশ্বে যে ক্রিকেটাররা খেলছে, তারা সেই দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করতে পারছে। সেই কারণে মাঠে অনেক বেশি স্বস্তিতে থাকতে পারে।” অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে খেলেন হেলস। সেই কারণেই অ্যাডিলেড পরিচিত ইংরেজ ওপেনারের কাছে। ধোনিদের দলের কোচের এই কথা মানতে নারাজ শাস্ত্রী।
বিদেশের টি-টোয়েন্টি লিগগুলিতে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের খেলার অনুমতি দেয় না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এটা ব্যর্থতার কারণ বলে মানতে চাননি ভারতের বর্তমান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা কোনও কারণ বলে মনে হয় না। তা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। বিশেষ করে ভারতীয় ক্রিকেটে। ভরা মরসুমে আমাদের অনেক প্রতিযোগিতা হয়। জানি আমাদের অনেক ক্রিকেটারই বিদেশে খেলার সুযোগ পায় না। এই সিদ্ধান্তটা ভারতীয় বোর্ডকে নিতে হবে। বোর্ড অনুমতি দিলে হয়তো বিদেশের লিগগুলোয় ভারতীয় ক্রিকেটারদের ভাল চাহিদাও তৈরি হবে। কিন্তু বিদেশের টি-টোয়েন্টি লিগগুলো যে সময় হয় তখন ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটের ভরা মরসুম। টেস্টের সূচি থাকে। সবাই বিদেশে খেলতে চলে গেলে রঞ্জি ট্রফি-সহ ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলো শেষ করা যাবে না। টেস্ট সিরিজ়গুলো খেলা কঠিন হবে। ওগুলো উঠেই যাবে। অনেক ক্রিকেটার হয়তো বিদেশে খেলতে ইচ্ছুক। অনেকে এটা বলেন। কিন্তু সেটা করলে আমাদের পরিণতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মতো হয়ে যেতে পারে। চাইব আমাদের ক্রিকেটাররা গুরুত্ব দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলুক। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’