Bengal Cricket

রঞ্জি জয়ের সম্ভাবনা কার্যত শেষ, তবু মনোজের ব্যাটেই বেঁচে বাংলার শেষ আশা

তৃতীয় দিনের শেষে বাংলা তুলল ৪ উইকেটে ১৬৯। এখনও পিছিয়ে ৬১ রানে। প্রথম ইনিংসে সৌরাষ্ট্র তুলেছে ৪০৪ রান। এখনও ক্রিজে রয়েছেন মনোজ তিওয়ারি। এটাই বাংলার পক্ষে আশার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৪
Share:

তৃতীয় দিনের শেষে তিনি ক্রিজে। মনোজের ব্যাট থেকে কি পাওয়া যাবে বড় ইনিংস? ফাইল ছবি

তিনি দলের নেতা। তিনিই শেষ ভরসা।

Advertisement

রঞ্জি ফাইনালের তৃতীয় দিনের খেলা যেখানে শেষ হল, তাতে বাংলার এই ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা এ বার যে কার্যত নেই, তা বোঝাই গিয়েছে। তবু দিনের শেষে একমাত্র আশার আলো মনোজ তিওয়ারির (অপরাজিত ৫৭) ক্রিজে থাকা। সঙ্গী শাহবাজ আহমেদ (অপরাজিত ১৩)। অর্থাৎ, বাংলার ব্যাটিংয়ে শেষ ভরসাযোগ্য জুটি। তৃতীয় দিনের শেষে বাংলা তুলল ৪ উইকেটে ১৬৯। এখনও পিছিয়ে ৬১ রানে। প্রথম ইনিংসে সৌরাষ্ট্র তুলেছে ৪০৪ রান।

রবিবার ম্যাচের চতুর্থ দিনে প্রথম একটা ঘণ্টা যদি এই জুটি সামলে দিতে পারে, তা হলে কী হবে বলা যায় না। তবে সেটা নিঃসন্দেহে খুবই কঠিন। গত দু-একদিন সকালের দিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে। হাওয়া দিচ্ছে। সেটা যদি রবিবারও থাকে, তা হলে তার পূর্ণ ব্যবহার যে জয়দেব উনাদকাট, চেতন সাকারিয়ারা করবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলার হাতে রয়েছে মাত্র ছ’টি উইকেট। পিছিয়ে ৬১ রানে। লিড নিলেও, সেটা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম। যে রানের লিড পাওয়া যাবে, তা তুলতে সৌরাষ্ট্র ব্যাটারদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

Advertisement

রঞ্জি ফাইনালে বাংলা শেষ পর্যন্ত হারলে তার জন্য দু’টি বিষয় দায়ী থাকবে। প্রথমটি যদি হয় প্রথম দিনে ব্যাট করতে নেমে সৌরাষ্ট্রের বোলারদের সামনে কেঁপে যাওয়া, দ্বিতীয়টি নিঃসন্দেহে দল নির্বাচন। সুমন্ত গুপ্ত এবং আকাশ ঘটককে কেন এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেওয়া হল সেটা দল পরিচালন সমিতিই ভাল বলতে পারবে। রঞ্জি ট্রফির ফাইনালের মতো ম্যাচে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। ২৩ বছর আগের সেই ম্যাচে সৌরভ নিজে খুব ভাল খেলতে না পারলেও, দল জিতেছিল। সৌরভ নিজগুণে পরে ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হয়ে উঠেছিলেন। ২০২৩-এ এসে সুমন্তকে নিয়েও কি সেই ভাবনা ছিল বাংলার মনে?

দুই ইনিংস মিলিয়ে সুমন্তের অবদান ১১ বলে দুই। একই ভাবে আউট হলেন দু’টি ইনিংসেই। অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিলেন তিনি। আকাশের অবস্থা তবু একটু ভাল। প্রথম ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাট হাতে ১৭ রান করেছেন। সাময়িক ভাবে সামলেছেন ধস। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে তাঁকে লোকানোর জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবারই দু’টি চার গলালেন।

শনিবার দিনের শুরুটা দুর্দান্ত হয় বাংলার। পঞ্চম বলেই মুকেশ কুমার ফিরিয়ে দেন ক্রিজে জমে যাওয়া ব্যাটার অর্পিত বাসবড়াকে। মনে করা হয়েছিল, প্রথম ঘণ্টায় বাকি উইকেটগুলি নিয়ে সৌরাষ্ট্রকে অলআউট করে দেবে বাংলা। সেটা অবশ্য হল না। অর্পিতের বদলে নামা প্রেরক মাঁকড় অনায়াসে খেলে দিচ্ছিলেন বাংলার বোলিং। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল এবং হাওয়াও দিচ্ছিল। তার সুবিধা নিতে পারছিল না বাংলা। বোলিংয়ে পাওয়া যাচ্ছিল না কোনও ঝাঁজ।

আবার ধাক্কা দেন সেই মুকেশই। ৯৬তম ওভারে ফিরিয়ে দেন সেট হয়ে যাওয়া আর এক ব্যাটার চিরাগ জানিকে। দু’জনেই ক্যাচ দেন উইকেটকিপার অভিষেক পোড়েলের হাতে। বিপক্ষের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাসে ফুটছিল বাংলা। তার পরেও সৌরাষ্ট্রকে চারশোর কমে অলআউট করতে পারল না তারা। বাংলার বোলারদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন প্রেরক। ৩৩ রান করলেন তিনি। বিপক্ষের অলরাউন্ডারকে ফেরালেন আকাশ দীপ। তার পরে লড়াই দিলেন ১১ নম্বরে নামা ব্যাটার ধর্মেন্দ্রসিংহ জাডেজা। তিনিও আক্রমণাত্মক খেলে পাঁচটি চারের সাহায্যে ২৯ করে গেলেন। ফলে সৌরাষ্ট্র ২৩০ রানের লিড নিয়ে নিল। প্রথম ইনিংস শেষ হল ৪০৪ রানে।

দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে সেই পুরনো দৃশ্য বাংলার ব্যাটিংয়ে। পাটা উইকেটেও প্রথম থেকে স্বচ্ছন্দে ছিলেন না সুমন্ত। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও একই ভাবে আউট হলেন তিনি। চেতন সাকারিয়ার বলে অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিলেন। রঞ্জি ট্রফিতে এটাই তাঁর প্রথম ম্যাচ। ওপেনার হিসাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একাধিক ম্যাচ কাজি জুনেইদ সঈফিকে বসিয়ে তাঁকে নামিয়ে ফাটকা খেলতে চেয়েছিল বাংলা। তার মাশুল গুনতে হল। আস্থার দাম দিতে পারলেন না সুমন্ত। দুই ইনিংস মিলিয়ে তাঁর অবদান মাত্র ২। খেলেছেন মোট ১১ বল।

এই মরসুমে যিনি প্রায় প্রতি ম্যাচে বাংলাকে নির্ভরতা দিয়েছেন, সেই অভিমন্যু ঈশ্বরণও হতাশ করলেন। শুরুটা খারাপ করেননি। কিন্তু বাঁহাতি চেতনের বল সামলাতে পারলেন না। বেশ কিছু ক্ষণ প্রতিরোধ গড়ার পর ফিরে গেলেন ১৬ রানে। সুদীপ ঘরামির থেকেও এই মরসুমে বেশ কিছু বড় ইনিংস পাওয়া গিয়েছে। তিনিও দু’টি ইনিংসে ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় বলে জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন। এ দিন খোঁচা দিয়ে ক্যাচ দিলেন দ্বিতীয় স্লিপে।

বাংলার পাল্টা লড়াই শুরু হল এখান থেকেই। ক্রিজে থাকা মনোজ তিওয়ারি এবং অনুষ্টুপ মজুমদার জানতেন, বাংলার যাবতীয় স্বপ্ন বেঁচে রয়েছে তাঁদের হাতেই। খেললেনও সে ভাবেই। চা-বিরতির আগে পর্যন্ত ধীরস্থির ভঙ্গিতে খেলে ক্রিজে সেট হয়ে গেলেন। তার পরে বল বুঝে আক্রমণাত্মক হতে শুরু করলেন দু’জনে। সাকারিয়ার একটি ওভারে তিনটি চার মারলেন অনুষ্টুপ। সাকারিয়ার পরের ওভারেও এল তিনটি চার। এ বার দু’টি মারলেন মনোজ। একটি অনুষ্টুপ। বাধ্য হয়ে উনাদকাট নিজেকে এবং সাকারিয়াকে সরিয়ে নিলেন আক্রমণ থেকে। নিয়ে এলেন দুই স্পিনার।

তাতেও বাংলার দুই ব্যাটারকে টলানো যায়নি। চিরাগ জানি এবং প্রেরককেও অনায়াসে খেলে দিচ্ছিলেন মনোজ এবং অনুষ্টুপ। অনুষ্টুপ ধীরে ধীরে অর্ধশতরানও করে ফেললেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল তৃতীয় দিনে বাংলার আর কোনও উইকেট পড়বে না। তখনই ছন্দপতন। ম্যাচের শেষ দিকে আবার আক্রমণে এসেছিলেন উনাদকাট। ক্ষণিকের ভুলে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে খোঁচা দিলেন অনুষ্টুপ। গালিতে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বরাজ জাডেজা দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন।

তবে শেষ বেলায় আর কোনও উইকেট হারায়নি বাংলা। মনোজ এবং শাহবাজ খেলে দিলেন দিনের শেষ বল পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement