শতরানের পর সরফরাজের হুঙ্কার। —ফাইল চিত্র
মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে রঞ্জি ফাইনালে শতরান। আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। কেঁদেই ফেললেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই হুঙ্কার দিলেন, হাত দিয়ে পায়ে মেরে বোঝাতে চাইলেন তাঁর দাপট। রঞ্জিতে আরও এক বার এক মরসুমে ৯০০-র উপর রান করে ফেললেন সরফরাজ খান। রঞ্জিতে তিনি তৃতীয় ব্যাটার যিনি এই কীর্তি গড়লেন। ১২ বছর বয়সে ভেঙে ছিলেন সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইপিএল খেলে ফেলেছিলেন সরফরাজ। দু’বার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন। রঞ্জিতে ধারাবাহিক ভাবে রান করেছেন। ভারতীয় দলে যদিও এখনও পর্যন্ত ডাক পাননি। তাঁর ওজন বেশ অনেকটাই বেশি। কিন্তু তাতে রান করা আটকায় না। মুম্বইয়ের হয়ে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে যেমন শতরান করেছেন, তেমনই করেছেন দ্বিশতরান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র ২৪টি ম্যাচ খেলেই তাঁর সংগ্রহ ২৩৫১ রান (এ বারের রঞ্জি ফাইনালের রান বাদে)। অজয় শর্মা এবং ওয়াসিম জাফরের পর তিনিই প্রথম ব্যাটার যাঁর রঞ্জির দু’টি মরসুমে ন’শোর উপর রান রয়েছে।
রেকর্ড ভাঙা সরফরাজের ছোটবেলার অভ্যেস। ১২ বছর বয়সে হ্যারিস শিল্ডের ম্যাচে করেছিলেন ৪২১ বলে ৪৩৯ রান। ৪৫ বছর আগে যে শিল্ডে সচিনের করা রানই ছিল সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ড ভেঙে দেন সরফরাজ। কিছু দিনের মধ্যেই মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে জায়গা করে নেন। ২০১৪ সালে ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেলেন। ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন তিনি। বয়সভিত্তিক খেলায় সাফল্য পাওয়া সরফরাজের বিরুদ্ধে বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ ওঠে। মুম্বইয়ের ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করা হয় তাঁকে। উত্তরপ্রদেশের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে শুরু করেন তিনি। পরে যদিও দেখা যায় সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন। মুম্বই ক্রিকেটে ফিরে আসেন সরফরাজ।
২০১৫ সালে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে নেয়। তরুণতম ক্রিকেটার হিসাবে সেই সময় আইপিএল খেলেন সরফরাজ। পরবর্তী সময় কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের (এখন পঞ্জাব কিংস) হয়েও খেলেন তিনি। বর্তমানে সরফরাজ খেলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। মুম্বইয়ের হয়ে প্রথম রঞ্জি খেলেছিলেন ২০১৪ সালে। পরের দু’টি মরসুমে চলে যান উত্তরপ্রদেশে। সেই উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধেই ২০১৯ সালে ত্রিশতরান করেন সরফরাজ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেটাই তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এ বারের রঞ্জিতে প্রথম ম্যাচেই দ্বিশতরান করেন। গ্রুপ পর্বে আরও একটি শতরান করেছেন। শতরান করেছেন কোয়ার্টার ফাইনালেও। এ বার শতরান এল ফাইনালেও। মাঠে নিয়মিত রান যেমন এসেছে, তেমনই এসেছে বিতর্ক।
২০১১ সালে অস্থি-মজ্জা পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর বয়স ১৫ বছর। কিন্তু মুম্বই ক্রিকেট সংস্থায় তাঁর বয়সের নথি অনুযায়ী সেই সময় তাঁর বয়স ১৩ বছর। মানতে চাননি সরফরাজের বাবা। লড়াই চালিয়ে যান তিনি। আধুনিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায় তাঁর বয়স মুম্বই ক্রিকেট সংস্থায় জমা দেওয়া নথি অনুযায়ীই ঠিক। কিন্তু এই ঘটনা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করে দেয় সরফরাজকে। বেশ কয়েক মাস সময় লাগে তাঁর ক্রিকেটে মনোযোগ ফেরাতে। প্রথম শ্রেণিতে খেলা অন্য ক্রিকেটারদের থেকে তাঁর ওজন বেশি বলে এখনও কটাক্ষ শুনতে হয় সরফরাজকে। তাতে যদিও দমে যাননি তিনি। রঞ্জি ফাইনালে করলেন ১৩৪ রান। তাঁর শতরানের দাপটে মুম্বই প্রথম ইনিংসে করল ৩৭৪ রান।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।