সরফরাজ খান, রজত পাটীদার, শাহবাজ আহমেদরা সফল রঞ্জিতেও। —ফাইল চিত্র
আইপিএলে তাঁদের জন্য বিরাট অঙ্কের অর্থ নিয়ে বসেছিল বিভিন্ন দল। সাদা বলের ক্রিকেটে এই খেলোয়াড়দের উপর বাজি ধরা হয়েছিল, রঞ্জির মঞ্চে তাঁরাই প্রমাণ করলেন যে লাল বলের ক্রিকেটেও পারদর্শী তাঁরা। সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে লড়াই করলেন তাঁরা। কেউ দলকে জেতাতে পারলেন, কেউ পারলেন না, কিন্তু তাঁদের লড়াই মনে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
রজত পাটীদার
এ বারের রঞ্জিতে নজর কেড়েছে পাটীদারের ব্যাটিং। আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলেছেন তিনি। সেই দলের হয়ে ইডেনে শতরান করার পর পাটীদারকে নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয় সমর্থকদের মধ্যে। মধ্যপ্রদেশের রঞ্জি জয়ের পিছনেও বড় ভূমিকা নিলেন তিনি। আরসিবির হয়ে মাত্র আটটি ম্যাচে ৩৩৩ রান করেন পাটীদার। একটি শতরান ছাড়াও দু’টি অর্ধশতরান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। আইপিএল খেলেই রঞ্জিতে নেমে পড়েন পাটীদার। সেখানেও আসে সাফল্য। মধ্যপ্রদেশের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত মনে করেন পাটীদার সব ধরনের ক্রিকেটের জন্যই পারদর্শী। রঞ্জি ফাইনালে শতরান করে সেটাই প্রমাণ করলেন তিনি। এ বারের রঞ্জিতে মোট ছ’টি ম্যাচ খেলে তিনি করেছেন ৬৫৮ রান। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রঞ্জি ফাইনালে চার মেরে তিনিই জেতান মধ্যপ্রদেশকে।
কুমার কার্তিকেয়
মধ্যপ্রদেশের এই স্পিনার বাংলার ক্রিকেটারদের বিপদে ফেলেছিলেন রঞ্জির সেমিফাইনালে। তিনি বল করতে এলেই বার বার উইকেট দিয়েছিলেন অভিষেক রামনরা। সেমিফাইনালে দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি নিয়েছিলেন আট উইকেট। ফাইনালে প্রথম ইনিংসে তিনি মাত্র একটি উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে নেন চার উইকেট। বড় মঞ্চে তিনি যে দলের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন এ বারের রঞ্জিতে। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে ছিলেন তিনি। চারটি ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন পাঁচটি উইকেট। সাদা বল হোক বা লাল বল, কার্তিকেয় জাদু মুগ্ধ করল ব্যাটারদের। তাঁর সেই স্পিনের মায়াজালে বার বার উইকেট দিয়ে গেলেন বিপক্ষ ব্যাটাররা। এ বারের রঞ্জিতে ছ’ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৩২টি উইকেট।
লাল বলেও উইকেট পেয়েছেন কুমার কার্তিকেয়। —ফাইল চিত্র
সরফরাজ খান
রঞ্জিতে তাঁর ব্যাট বার বার কথা বলে। গত বারের রঞ্জিতেও ন’শোর উপর রান করেন সফরাজ। এ বার ছ’ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৯৮২ রান। লাল বলের ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। শতরান করেছেন রঞ্জি ফাইনালেও। সব কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন তাঁর বাবাকে। আট বছর ধরে আইপিএলে খেলা সরফরাজ এখন খেলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। কোটিপতি লিগে এ বার মাত্র ছ'টি ম্যাচ খেলেন তিনি। সেই ছ'ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৯১ রান। সাদা বলে দিল্লি তাঁর উপর ভরসা না করলেও রঞ্জির লাল বলে মুম্বইয়ের ভরসা ছিলেন সরফরাজই। মুম্বইয়ের হয়ে এ বার ফাইনাল জেতা না হলেও প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন তিনিই।
শাহবাজ আহমেদ
বাংলার শাহবাজ আইপিএলে নিয়মিত খেলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে। সেখানে এই অলরাউন্ডার ১৬টি ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে করেছেন ২১৯ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন চারটি উইকেট। রঞ্জিতে বাংলার হয়েও তিনিই ছিলেন মূল ভরসা। ব্যাট হাতে এ বারের রঞ্জিতে বাংলার হয়ে সব থেকে বেশি রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। পাঁচ ম্যাচে করেছেন ৪৮২ রান। বল হাতে নিয়েছেন ২০টি উইকেট। বাংলার বাকি বোলারদের মধ্যে মুকেশ কুমার (২০টি উইকেট) ছাড়া বাকি সকলেই তাঁর থেকে কম উইকেট নিয়েছেন। সেমিফাইনালে শতরান করেন শাহবাজ। একের পর এক উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বল হাতে সেই ম্যাচে আটটি উইকেটও নেন। শেষ পর্যন্ত যদিও দলকে জেতাতে পারেননি।
যশস্বী জয়সবাল
তরুণ ওপেনার রঞ্জি সেমিফাইনালে দুই ইনিংসেই শতরান করেন। মুম্বইয়ের নবম ব্যাটার হিসাবে এই কৃতিত্ব গড়েন তিনি। এ বারের রঞ্জিতে মাত্র তিনটি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৪৯৮ রান। ফাইনালে শতরান না করলেও ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে নিয়মিত এই ওপেনার লাল বল হোক বা সাদা দাপট দেখালেন দুই ধরনের ক্রিকেটেই। এ বারের রঞ্জিতে ১০টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ২৫৮ রান।