বিশ্বকাপে ভারতের পরের ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগামী বুধবার। ২০১৭ সালে এই ইংল্যান্ডের কাছেই ফাইনালে হেরে গিয়েছিলেন ঝুলন গোস্বামীরা। ৫১ রান করেছিলেন হরমনপ্রীত। সেই যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারেননি হরমন্দর। বলছিলেন, ‘‘শুধু আমরা নই, হরমনও সেই হার এখনও ভুলতে পারেনি।
দুরন্ত: হ্যামিল্টনে আগ্রাসী মেজাজে হরমনপ্রীত। বিসিসিআই
হরমনপ্রীত কৌরের প্রত্যাবর্তন। শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১০৭ বলে ১০৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন। স্মৃতি মন্ধানার সঙ্গে জুটি বেঁধে তুললেন ১৮৪ রানও। অথচ মাসখানেক আগেও হরমনপ্রীতের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছিল।
বিশ্বকাপের আগে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে হরমনপ্রীত করেছিলেন ১২ রান। চারটি ওয়ান ডে-তে তাঁর রান ছিল যথাক্রমে ১০, ১০, ১৩, ৬৩। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত জিতলেও হরমনপ্রীত করেছিলেন মাত্র পাঁচ রান। তবে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ৭১ রান করে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফের স্বমহিমায় দেখা গেল তাঁকে।
হরমনপ্রীতের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের রহস্য কী? শনিবার বিকেলে পঞ্জাবের ভুল্লার জেলা থেকে ফোনে ভারতীয় তারকার বাবা হরমন্দর সিংহ বলছিলেন, ‘‘অনেকেই আমার মেয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল। আমি কিন্তু জানতাম, হরমন ঠিক ঘুরে দাঁড়াবেই। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ও ছ’মাস আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিল। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে। জানতাম, হরমন সফল হবেই।’’
বিশ্বকাপের জন্য হরমনপ্রীত কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? হরমন্দর বললেন, ‘‘গ্রামে যখনই আসে হরমন, সব সময় ছেলেদের সঙ্গেই ক্রিকেট খেলে। কাউকে না পেলে ভাইকে নিয়ে একা একাই অনুশীলন করত। নিউজ়িল্যান্ডের উইকেট যে হেতু দ্রুত গতির এবং প্রচণ্ড হাওয়া চলে, তাই ও হাল্কা বলে ব্যাটিং অনুশীলন করেছিল।’’ আরও বললেন, ‘‘গ্রামের মাঠে হরমনকে এক দিন প্লাস্টিকের বলে অনুশীলন করতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ও তখন বলল, নিউজ়িল্যান্ডে বল খুব সুইং করে। তাই হাল্কা বলে অনুশীলন করছি। যাতে খেলতে না সমস্যা হয়। নিউজ়িল্যান্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জানুয়ারি মাসেই ওখানে চলে গিয়েছিল।’’
নিউজ়িল্যান্ড সফরে তা হলে কেন শুরুর দিকে চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি হরমনকে? ভারতীয় ক্রিকেট তারকার বাবার কথায়, ‘‘নিউজ়িল্যান্ড সফর আসলে ছিল বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। আমার মনে হয়, ব্যাটিং নিয়ে হরমন অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল। বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচে কিন্তু ও খুব বেশি ঝুঁকি নেয়নি। ঠান্ডা মাথায় খেলেছে। দিন কয়েক আগে যখন ফোন করেছিল, বলেছিলাম নিউজ়িল্যান্ড সফরে কী হয়েছে ভুলে যাও। নতুন ভাবে শুরু করো।’’ হরমন্দর উচ্ছ্বসিত স্মৃতি মন্ধানাকে নিয়েও। বলছিলেন, ‘‘একা হরমন নয়, ভারতের এই জয়ের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর স্মৃতিও। অসাধারণ খেলেছে। স্মৃতি সঙ্গে থাকায় অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে
পেরেছে হরমন।’’
বিশ্বকাপে ভারতের পরের ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগামী বুধবার। ২০১৭ সালে এই ইংল্যান্ডের কাছেই ফাইনালে হেরে গিয়েছিলেন ঝুলন গোস্বামীরা। ৫১ রান করেছিলেন হরমনপ্রীত। সেই যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারেননি হরমন্দর। বলছিলেন, ‘‘শুধু আমরা নই, হরমনও সেই হার এখনও ভুলতে পারেনি। আশা করি এ বার ভারতকে আটকাতে পারবে না ইংল্যান্ড। আমার বিশ্বাস ফাইনালেও উঠবে হরমনরা। আমরা নিউজ়িল্যান্ডে যাব।’’ যোগ করলেন, ‘‘বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে হরমন ফোন করে বলেছিল, ‘‘ভারত ফাইনালে উঠলে কিন্তু তোমাকে ও মাকে নিউজ়িল্যান্ডে আসতেই হবে। তোমাদের সামনে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’’