পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। —ফাইল চিত্র।
বিতর্ক কমার নাম নেই। উল্টে তা বেড়েই চলেছে। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে তারা পাকিস্তানে যাবে না। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আইসিসিকে চিঠি লিখেছে। তাদের দাবি, পাকিস্তানে খেলতে না যাওয়ার কারণ লিখিত আকারে জানাতে হবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। পাকিস্তানের সরকারের কাছেও পরামর্শ চেয়েছিল বোর্ড। শাহবাজ শরিফ সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিযোগিতা সরানো তো দূর, একটি ম্যাচও পাকিস্তানের বাইরে যেন না হয়।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এক আধিকারিক বলেন, “সরকার আমাদের জানিয়ে দিয়েছে যে একটা ম্যাচও পাকিস্তানের বাইরে হবে না। এই সিদ্ধান্তে আমাদের অনড় থাকতে হবে। আইসিসি আমাদের জানিয়েছে যে ভারত খেলতে আসতে চাইছে না। আমরাও কারণ দেখাতে চিঠি লিখেছি। আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক। এই দেশেই খেলা হবে। একটা খেলাও অন্য দেশে হবে না।”
ভারতের অবস্থানে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। সে দেশের আরও এক ক্রিকেট কর্তা বলেন, ‘‘গত এশিয়া কাপের মতো হাইব্রিড মডেলে প্রতিযোগিতা আয়োজন করব না আমরা। অনেক আগে থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমরাই আয়োজন করব।’’ এই বিষয়ে আইসিসিকে পাল্টা চাপ দেওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছেন পাক ক্রিকেট কর্তারা। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাওয়ার পথও খোলা রাখছেন তাঁরা।
বিসিসিআইয়ের বক্তব্য জানার পর আইসিসি কর্তারা ভারতের ম্যাচগুলির জন্য বিকল্প ব্যবস্থার পরিকল্পনা শুরু করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে সরকারি ঘোষণা হয়নি। তাঁরা আপাতত যুযুধান দু’দেশের বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে হাইব্রিড মডেলে খেলা হবে না।
এই বিতর্কের মাঝে ভারত ও পাকিস্তান দু’দেশকেই নিলম্বিত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক রশিদ লতিফ। তাঁর মতে, যত দিন না তা মিটছে তত দিন দু’দেশের কাউকেই কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজন করার দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়। ক্রিকেটে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ২০১৯ সালে জ়িম্বাবোয়ে ও ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কাকে নিলম্বিত করেছিল আইসিসি। ভারত ও পাকিস্তানকেও সেই শাস্তি দেওয়ার দাবি করেছেন তিনি। লতিফ বলেন, “ভারত, পাকিস্তানকে কেন নিলম্বিত করা হচ্ছে না? কারণ, এই দুই দেশ থেকে আইসিসির অনেক লাভ হয়। আমার মনে হয় আইসিসির উচিত, এই দুই দলকেই নিলম্বিত করে দেওয়া।”
এশিয়া কাপেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সে বার ভারতের দাবি মেনে হাইব্রিড মডেলে প্রতিযোগিতা হয়েছিল। আবার একই ঘটনা ঘটছে। লতিফ জানিয়েছেন, প্রত্যেক বার ভারতের কথাকেই মান্যতা দিচ্ছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা। এটা চলতে পারে না। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের উচিত ভারতের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দেওয়া। আমি যদি ক্ষমতায় থাকতাম তা হলে এই পদক্ষেপই করতাম। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু তুমি যদি পাকিস্তানে খেলতে না চাও তা হলে বিশ্বের কোথাও তোমাদের সঙ্গে খেলব না। আমি ক্ষমতায় থাকলে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে লড়াই করতাম।”
সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে পাকিস্তানে খেলতে যেতে চাইছে না ভারত। লতিফের মতে, এটি সঠিক কারণ নয়। যদি সুরক্ষা নিয়ে ভারতের কোনও সংশয় থাকত তা হলে লিখিত আকারে তা জানাতে পারত তারা। আইসিসির আধিকারিকেরা পাকিস্তানে গিয়ে সুরক্ষা দেখে এসেছেন। তাঁরা কোনও অভিযোগ করেননি। এই পরিস্থিতিতে ভারতের অভিযোগ সঠিক নয় বলেই মনে করেন তিনি।
ভারতের সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ় বন্ধ পাকিস্তানের। শুধু আইসিসি ও এশীয় প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয় দু’দল। ভারতের সঙ্গে না খেললে পাকিস্তানের ক্রিকেটের কোনও ক্ষতি হবে না বলেই মনে করেন লতিফ। দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “১২ বছর ধরে আমরা দেশের মাটিতে খেলিনি। এর থেকে কষ্টের কিছু হতে পারে না। ভারতের সঙ্গে না খেললেও আইসিসির কাছ থেকে পাকিস্তান টাকা পাবে। বিশ্বের বাকি সব দেশে পাকিস্তানে খেলতে আসতে চাইছে। সুতরাং ভারতের সঙ্গে না খেললেও আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না। পাকিস্তান বোর্ডকে সেটা বুঝতে হবে। নিজের জায়গায় ঠিক থাকতে হবে। কারও কাছে হাত পাতলে হবে না।”