পাক ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের তৃতীয় বিয়ে। আয়েশা, সানিয়ার পর সানাকে বিয়ে করলেন তিনি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তৃতীয় বার বিয়ে করলেন শোয়েব মালিক। আয়েশা সিদ্দিকি, সানিয়া মির্জার পর এ বার সানা জাভেদ। এই তিনটি বিয়ের মধ্যে শোয়েব এবং সানিয়ার বিয়ে নিয়েই সব থেকে বেশি আলোচনা হয়েছিল। পাকিস্তানের শোয়েব এবং ভারতের সানিয়া ক্রীড়াক্ষেত্রে সুপরিচিত। তাঁদের সেই পরিচিতির কারণেই আলোড়ন তৈরি হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। যদিও সেই বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয় শোয়েবের বৈবাহিক জীবনে টানাপড়েন। শোয়েবের বিয়েতে নাটক নতুন কিছু নয়।
২০১০ সালের ১২ এপ্রিল হায়দরাবাদে বিয়ে করেছিলেন সানিয়া এবং শোয়েব। বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তান থেকে বরযাত্রী চলে এসেছিল ভারতে। আর সেই সময়ই আয়েশা সিদ্দিকির নাম শোনা যায়। সানিয়ার শহরের সেই মেয়ের দাবি শোয়েব তাঁকে বিয়ে করেছেন। ভারতে খেলতে এসে আয়েশার বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল শোয়েব-সহ পাকিস্তান দলের ক্রিকেটারদের। সেখানেই নাকি বিয়ে হয়েছিল শোয়েব এবং আয়েশার। সানিয়ার সঙ্গে বিয়ের আগে সেই ঘটনা চাঞ্চল্য তৈরি করে দিয়েছিল।
শোয়েব সেই বিয়ের কথা অস্বীকার করেননি। কিন্তু তিনি জানিয়েছিলেন, ফোনে আয়েশার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে তাঁর। মানতে চাননি আয়েশা। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত সানিয়াকে বিয়ের আগে আয়েশাকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন শোয়েব।
আয়েশার ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল সানিয়ার পরিবারকে। মেয়ের বিয়ে অথচ তখন বাড়ির লোকের পক্ষে বাইরে বার হওয়া সম্ভব ছিল না। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছিল বার বার। এমন অবস্থায় বিয়ের সমস্ত প্রস্তুতি নিতে বিশেষ ব্যবস্থা কর হয়েছিল। কালো কাচের গাড়ি করে সানিয়াদের বাড়ি জুবিলি হিলস থেকে বার হতেন তাঁর পরিবারের লোক। বাইরে অপেক্ষারত সংবাদমাধ্যমের পক্ষে বোঝার উপায় ছিল না কে বা কারা বাইরে যাচ্ছেন। সেই ভাবেই হয়েছিল বিয়ের সমস্ত কেনাকেটা। অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখেই বিয়ে হয়েছিল সানিয়া এবং শোয়েবের। কেউই বিয়ের আগে জনসমক্ষে আসেননি। জুবিলি হিলস যাওয়ার রাস্তা তখন ভরে গিয়েছিল সংবাদমাধ্যমের বড় বড় ওবি ভ্যানে। সানিয়ার বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল বিয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকেই। সেই জটিলতার মধ্যেই হয়েছিল সেই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিয়ে। যাবতীয় বিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে ভারতের জামাই হয়েছিলেন শোয়েব।
দু’জনের খেলোয়াড় জীবনও এগিয়ে যেতে থাকে। এক দিকে ডাবলস এবং মিক্সড ডাবলস মিলিয়ে ছ’টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন সানিয়া তখন বিশ্ব টেনিসে ভারতের পতাকা ওড়াচ্ছেন আর অন্য দিকে শোয়েব পাকিস্তানের ক্রিকেটকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কখনও নেতৃত্ব দিচ্ছেন, কখনও আবার তাঁর ব্যাটে ভর করে জিতছে পাকিস্তান। দুই দেশের দুই তারকা ক্রীড়াবিদ নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন আর সেই সঙ্গে এগিয়ে চলেছে তাঁদের সম্পর্কও।
শোয়েব মালিক এবং সানিয়া মির্জার সুখের সময়। —ফাইল চিত্র।
সানিয়া এবং শোয়েবের আলাপ যদিও ভারতে বা পাকিস্তানে নয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম পরিচয় হয় তাঁদের। ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনাল খেলতে গিয়েছিলেন সানিয়া। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলও। সেই দলে ছিলেন শোয়েব। ব্রিসবেনে ছিল খেলা। পাকিস্তান ক্রিকেট দল যে হোটেলে ছিল, সেখানেই ছিলেন সানিয়া। আলাপ হয় সানিয়া এবং শোয়েবের। সম্পর্ক গড়াতে বেশি সময় লাগেনি। পরিচয়, প্রেম এবং পরিণয়— চার মাসের মধ্যে সবই হয়ে যায় সানিয়া এবং শোয়েবের। ২০১০ সালে হওয়া তাঁদের বিয়ের সম্পর্ক আরও এক ধাপ এগোয়ে ২০১৮ সালে। পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সানিয়া। সে কথা সমাজমাধ্যমে জানিয়েছিলেন সানিয়া। ছেলের নাম রাখেন ইজ়হান। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে সানিয়া এবং শোয়েবের সম্পর্কের জটিলতা শুরু হয়।
২০২২ সালের নভেম্বরে পাক সংবাদমাধ্যমের খবরে সানিয়া এবং শোয়েবের বিবাহবিচ্ছেদের জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ই জানা গিয়েছিল যে সানিয়া এবং শোয়েব একসঙ্গে থাকছেন না। সেই সময় ইনস্টাগ্রামে একটি স্টোরিতে সানিয়া লিখেছিলেন, “ভাঙা হৃদয় কোথায় যায়? ঈশ্বর খুঁজতে।” ভারতের অন্যতম সেরা টেনিস তারকা সন্তানের সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করেছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে ইজ়হান তাঁকে চুমু খাচ্ছে। সেই সঙ্গে সানিয়া লেখেন, “যে মুহূর্তগুলো কঠিন সময় পার করে দেয়।” সানিয়ার সেই পোস্ট ঘিরেই জল্পনার শুরু। এর পর একের পর এক পোস্টে ভাঙা সম্পর্কের আভাস পাওয়া গিয়েছিল।
শোয়েবের ইনস্টাগ্রাম বায়োতে লেখা থাকত যে তিনি সানিয়ার স্বামী। নিজেকে এক জন ‘সুপারউওম্যান’-এর স্বামী হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন শোয়েব। কিছু দিন আগে সেই বাক্য সরিয়ে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক। এমনকি তাঁর ইনস্টাগ্রামে সানিয়ার সব ছবিও মুছে দিয়েছিলেন। তবে ছেলে ইজ়হানের সঙ্গে অনেক ছবি দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সানিয়াও তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে শোয়েবের সব ছবি মুছে দিয়েছিলেন। শুধু একটি মাত্রই ছবি রয়েছে শোয়েবের সঙ্গে। সেখানে সানিয়া এবং শোয়েবের সঙ্গে তাঁদের ছেলে ইজ়হানও রয়েছেন। সেই ছবির ক্যাপশনে শোয়েবের বিশেষ নামোল্লেখ নেই। ইজ়হানের জন্মদিন উপলক্ষে সেই ছবিটি পোস্ট করেছিলেন সানিয়া। সেই ছবি বাদে শোয়েবের সব ছবি মুছে দিয়েছিলেন সানিয়া।
এখনও পর্যন্ত সানিয়া বা শোয়েব, কেউই বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানাননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই সানা জাভেদকে বিয়ে করার কথা ঘোষণা করে দেন শোয়েব। অভিনেত্রী সানার সঙ্গে শোয়েবের পরিচয়ের কথা যদিও আগেই জানা গিয়েছিল। গত বছর মার্চ মাসে সানার জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন শোয়েব। ২০২২ সালে সানিয়ার জন্মদিনে তাঁর পাশে ছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটার। সেই ছবি পোস্ট করে সানিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন শোয়েব। গত বছর মার্চে শোয়েব এবং সানা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। সেই ছবিই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে শোয়েব লিখেছিলেন, “শুভ জন্মদিন বন্ধু সানা।” সানা যে শুধু বন্ধু ছিলেন না তা প্রমাণিত হল শনিবার।
শোয়েব এবং সানিয়ার মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্বের নেপথ্যে হয়তো ছিল পাক ক্রিকেটারের এই নতুন সম্পর্কই। তাই ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হয় সানিয়া এবং শোয়েবের মধ্যে। ভারতীয় টেনিসের ‘রানি’র জীবন থেকে শোয়েব সরে গেলেও রয়ে গিয়েছেন ইজ়হান। টেনিস থেকে অবসরের পর সানিয়ার জীবন জুড়ে তাই এখন তাঁর পুত্রই। শোয়েব শুরু করলেন তাঁর তৃতীয় বৈবাহিক ইনিংস।