বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। —ফাইল ছবি।
পাকিস্তানের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ় জয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজ়েও ভাল ফল করাই লক্ষ্য নাজমুল হোসেন শান্তদের। এ বার আর স্পিন বোলিংয়ের উপর নির্ভর করছে না বাংলাদেশ শিবির। বলের গতির সাহায্যে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপকে বেসামাল করে দিতে চান শান্তরা।
শাকিব আল হাসান, মহম্মদ রফিক, তাইজুল ইসলাম এবং এনামুল হক জুনিয়র— মূলত এই চার স্পিনারের উপর নির্ভর করে এত দিন টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং আক্রমণের পরিকল্পনা করত বাংলাদেশ। এ বার সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে চলেছে তারা। শান মাসুদের দলের বিরুদ্ধে হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানার সাফল্য অন্য রকম ভাবাচ্ছে বাংলাদেশ শিবিরকে। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট চেন্নাইয়ে। সেখানকার ২২ গজে আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের। চেন্নাইয়ের হয়ে সাফল্যও পেয়েছেন। স্পিন সহায়ক উইকেটে তাঁর বল করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছে বাংলাদেশ শিবির।
বাংলাদেশের কোনও জোরে বোলারের ৮০-র বেশি টেস্ট উইকেট নেই। তুলনায় উপমহাদেশের উইকেটে স্পিনারদের সাফল্য বেশি। এত দিন পর্যন্ত এই পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করেই লাল বলের ক্রিকেটের রণনীতি তৈরি করত বাংলাদেশ। এ বারের ভারত সফরে সেই ভাবনার পরিবর্তন হচ্ছে।
কেবল পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই নয়, তার আগে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধেও সাফল্য পেয়েছিলেন বাংলাদেশের জোরে বোলারেরা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ়ের সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন মেহেদি হাসান। দ্বিতীয় টেস্টে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান। দু’টেস্টে পাকিস্তানের ৪০টি উইকেটের মধ্যে জোরে বোলারেরা পেয়েছেন ২১টি। আবার ২০২২ সালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এবাদত হোসেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে নাহিদ ধারাবাহিক ভাবে ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করেছেন। সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেও নজর কেড়েছিলেন। দ্রুত পরিণত হচ্ছেন তিনি। লাইন এবং লেংথের ক্ষেত্রেও নাহিদ এখন বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ধারাবাহিক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর একটি বলের গতি ছিল ১৫২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে দ্রুততম)। বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন। মাসুদ, বাবর আজ়ম, সাউদ সাকিলদের উইকেট তাঁর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে।
পাকিস্তানের মাটিতে সফল হয়েছেন হাসানও। গতি খুব বেশি না হলেও নতুন বল হাতে বেশ কার্যকর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ৪৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। তাঁর ব্যাটের হাতও খারাপ নয়। টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসা হয়ে উঠছেন ধীরে ধীরে।
প্রতিপক্ষের ব্যাটিংকে বেসামাল করতে গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ নির্ভর করে তাসকিনের উপর। ২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। চোটপ্রবণ তাসকিন অনেক সময় দলের বাইরে থাকেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলেননি। শেষ মুহূর্তে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম একাদশে ঢুকে মোট ৪ উইকেট নেন। ভারতের মাটিতেও অতীতে সাফল্য পেয়েছেন। ২০১৭ সালে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে লোকেশ রাহুল, মুরলি বিজয়ের উইকেট নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের জোরে বোলারদের এই উত্থানের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছেন তাদের প্রাক্তন বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের। নাহিদ, হাসান, তাসকিনদের নিজের মতো গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটার। কাউকে বাড়তি কিছু করতে বলতেন না। যার যেটা শক্তি, তাকে সেটা আরও শক্তিশালী করার কথা বলতেন। তাঁর আগের বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের অবদানও অস্বীকার করা যাবে না। সঠিক প্রতিভাদের বেছে নিয়েছিলেন। এখনকার বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামসও ডোনাল্ডোর পথই অনুসরণ করছেন। বাংলাদেশের জোরে বোলারদের বলের গতি বৃদ্ধির থেকেও বলের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। তাঁদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফল পাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
ভারতের ব্যাটিং শক্তিকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না বাংলাদেশ শিবির। ঘরের চেনা পিচে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্থ, যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিলের মত ব্যাটারেরা কী করতে পারেন, তা অজানা নয় শান্তদের। ভারতীয় ব্যাটারদের স্পিন খেলার দক্ষতার কথাও তাঁদের জানা। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে সেই মতোই পরিকল্পনা তৈরি করছেন।