উত্থান: মূল পর্বে ওঠা নিশ্চিত করে উচ্ছ্বাস উইজ়ার। শুক্রবার। ছবি: টুইটার।
মেরেকেটে ২৫ লক্ষ মানুষের বাস সারা দেশে। মরুভূমি আর ধূ-ধূ ফাঁকা অঞ্চল অপেক্ষা করে আছে স্বাগত জানানোর জন্য। মাইলের পর মাইল ধরে ড্রাইভ করে গেলেও হয়তো দেখা মিলবে না কারও। যাদের নিজেদের কোনও ক্রিকেট স্টেডিয়ামই এখনও হল না যে, গর্ব করে বলা যাবে ‘আমাদের ঘরের মাঠ’। সব মিলিয়ে পাঁচটি ক্রিকেট ক্লাব আর ১৬ জন চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় যাদের সম্বল।
শুক্রবার মরুভূমির দেশ ইতিহাস সৃষ্টি করল মরুশহর শারজায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার-১২ পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে ফেলল আফ্রিকার দূরপ্রান্তের দেশ নামিবিয়া। আট উইকেটে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দিল তারা। জয়ের জন্য ১২৬ রান তাড়া করতে নেমে মন্থর শুরু করে কিছুটা চাপ তৈরি করে ফেললেও জয় হাতছাড়া হয়নি। অধিনায়ক জেরার ইরাসমাসের অর্ধশতরান এবং ফের ব্যাট হাতে ডেভিড উইজ়ার আগ্রাসী ইনিংস সুপার-১২ পর্বে যাওয়া নিশ্চিত করে। দু’নম্বর গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান, নিউজ়িল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং স্কটল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে নামিবিয়া। যারা এর আগে ২০০৩ দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ বারের মতো বিশ্বকাপে খেলেছিল।
‘‘এই ছেলেরা ছ’সাত বছরের ছিল। তখন থেকে ভারত, পাকিস্তানের মতো দলের সঙ্গে বিশ্বমঞ্চে খেলার স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে। সেই স্বপ্ন সত্যি হল আজ,’’ বলেছেন নামিবিয়ার কোচ পিয়ের দ্য ব্রুইন। আবেগাপ্লুত হয়ে যোগ করেন, ‘‘গত কয়েক বছরে ছেলেরা শুধু এই বিখ্যাত তারকাদের টিভিতে দেখেছে আর ওদের সঙ্গে খেলবে বলে স্বপ্ন দেখেছে। অনেকে জানেই না, কত সীমাবদ্ধতা নিয়ে দলটা এই জায়গায় পৌঁছল। দারুণ ক্রিকেটীয় রসদে ভরপুর কোনও দল আমরা নই। আমি ছেলেদের জন্য খুব খুশি।’’ কোচ ভুল বলেননি। তাঁদের কোনও ফুলটাইম ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট নেই, ফুলটাইম ম্যানেজার নেই, আজকাল সব দলের সঙ্গে থাকা স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচের মতো কিছু তাঁরা কখনও শোনেনি। শুধু তা-ই নয়, গত দু’বছর ধরে সরকারি ভাবে স্বীকৃত কোনও ক্রিকেট সূচিও নেই। কোভিডের প্রকোপে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি আরওই ব্যাহত হয় কারণ ইরাসমাসদের সঙ্গে এই কঠিন সময়ে আর ক্রিকেট খেলতে চাইবে কে! দ্য ব্রুইন বুদ্ধি করে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বন্ধু এবং প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার অ্যালবি মর্কেলকে নিয়ে এসেছিলেন। মর্কেলের ক্রিকেটীয় বুদ্ধি এবং ঠান্ডা মস্তিষ্কের ছোঁয়ায় অনেক কিছুই পাল্টাতে থাকে। তার পরে মাস্টারস্ট্রোক দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ডেভিড উইজ়াকে নিয়ে আসা। উত্তরাধিকার সূত্রে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যান উইজ়া। তাঁর বাবার জন্ম হয়েছিল নামিবিয়ায় এবং শুরুতে উইজ়া ভেবেছিলেন, সে দেশের হয়েই খেলবেন। তার পরে চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলেই। যদিও খুব বেশি সুযোগ তিনি সেখানে পাননি। কোলপাক চুক্তি সই করে ভ্রাম্যমাণ ক্রিকেটার হয়ে যান এবং পাকিস্তান সুপার লিগ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে থাকেন। আইপিএলেও খেলে গিয়েছেন। নামিবিয়ার হয়ে এই বিশ্বকাপেই প্রথম খেলছেন উইজ়া এবং তিনটি ম্যাচের দু’টিতে সেরা হয়ে দলকে মূল পর্বে তোলার নায়ক তিনিই।
এ দিন ম্যাচের সেরা হয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুরস্কারটা অধিনায়ক ইরাসমাসের প্রাপ্য ছিল। দুর্দান্ত ক্যাপ্টেনের ইনিংস।’’ ৪৯ বলে ৫৩ করেন ইরাসমাস। কিন্তু দুই উইকেট ও ১৪ বলে ২৮ রানের সংক্ষিপ্ত ঝোড়ো ইনিংসে দলের জয় নিশ্চিত করেন উইজ়াই। না হলে অল্প রান তাড়া করতে নেমেও শারজার মন্থর পিচে মন্থর ব্যাটিং করে প্রথম দশ ওভারে ৪৯-১ ছিল নামিবিয়া। ‘‘আমরা সবাইকে দেখাতে পারলাম যে, বিশ্বকাপে বেড়াতে আসিনি,’’ বললেন দ্য ব্রুইন। শুনশান দেশটায় হঠাৎ ২৫ লক্ষের গর্জন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: আয়ারল্যান্ড ১২৫-৮ (পল ৩৮, ফ্রাইলিঙ্ক ৩-২১), নামিবিয়া ১২৬-২ (ইরাসমাস ৫৩, উইজ়ে ২৮)।