ফাইল চিত্র।
গড়িয়ে গিয়েছে ১৭টা বছর। কিন্তু সেই আতঙ্কের স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। ১৭ বছর আগে এই বিশেষ দিনটায় কী ভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি, তা ভেবে এখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুথাইয়া মুরলীধরন। তিনি মনে করেন, ভাগ্য সে দিন তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল ভয়ঙ্কর সুনামির হাত থেকে।
ঘণ্টায় পাঁচশো মাইল গতিতে সে দিন সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। সুনামির আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছিল বাড়ি-ঘর। হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক তাণ্ডব। ইংল্যান্ডের ‘ডেইলি মেল’-এ সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা আর একবার তুলে ধরেছেন ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম বোলার। সেটাও ছিল বড়দিনের পরের দিন। ২৬ ডিসেম্বর। সালটা ২০০৪।
ওই দিনটায় সকাল আটটায় পরিবারের কয়েক জনকে নিয়ে গাড়িতে উঠেছিলেন মুরলী। উদ্দেশ্য ছিল, ম্যানেজার কুশল গুণশেখরের ত্রাণ সংস্থার একটি অনুষ্ঠানে যাওয়া। বড়দিনের পরের দিন ওই সংস্থার পক্ষ থেকে শিশুদের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয়। সেখানেই যাচ্ছিলেন মুরলী। কিন্তু আগের রাতে একটু দেরিতে শোওয়ার ফলে সকালে বেরোতে মিনিট কুড়ি দেরি হয়ে যায় মুরলীর। যা জীবন বাঁচিয়ে দেয় তাঁর।
কিংবদন্তি অফস্পিনারের কথায়, ‘‘অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে আমরা কালুতারার দিকে যাচ্ছিলাম। যেখানে নদী গিয়ে হ্রদের সঙ্গে মেশে। সে দিন আবার পূর্ণিমা ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, জোয়ার আসার আগেই ফিরে আসব।’’ কলম্বো থেকে কালুতারার দূরত্ব মোটামুটি ৪৪ কিলোমিটার মতো। ভারত মহাসাগরের তীর ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যাওয়া যায় কালুতারা। সে পথ দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছিলেন মুরলী। তার পরে কী হল? টেস্ট ক্রিকেটে আটশো উইকেটের মালিকের কথায়, ‘‘হঠাৎ দেখি, রাস্তার মাঝে লোক জড়ো হয়ে চিৎকার করছে। আমাদের দেখে বলল, ‘ওই দিকে যাবেন না। গলের দিকে সমুদ্রের জল রাস্তায় উঠে এসেছে।’ আমরা ভাগ্যবান। তার পরে গাড়ি ঘুরিয়ে কলম্বোর দিকটায় চলে যাই।’’ এর পরে মুরলী আরও বলেন, ‘‘যদি ২০ মিনিট আগে রওনা দিতাম, তা হলে আমরাও ওই ঢেউয়ের মধ্যে পড়ে যেতাম।’’ আতঙ্কিত মুরলী যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তাঁর ম্যানেজারের সঙ্গে। মুরলী বলেছেন, ‘‘কুশলকে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই ফোনে পাচ্ছিলাম না। সব যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। পরে জানতে পারি, ও বাচ্চাদের জীবন বাঁচিয়ে নিজে একটা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে আমাদের বলেছিল, জলের তোড়ে লোক ভেসে যাওয়ার দৃশ্য ও দেখেছে।’’ ওই তাণ্ডবে সে দিন বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। আর ভাগ্যের জোরে রক্ষা পান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিনার।