WTC Final 2023

কোহলির তিন টোটকা শিকেয়! মধ্যাহ্নভোজের আগেই আত্মসমর্পণ ভারতের, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

শেষ দিনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল শেষ সাত উইকেট। তা সহজেই তুলে নিল তারা। পর পর দু’বার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেও জেতা হল না ভারতের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ১৭:০৬
Share:

বিরাট কোহলি। ছবি: পিটিআই।

পঞ্চম দিনে বিরাট কোহলি, অজিঙ্ক রাহানেদের থেকে লড়াই দেখতে চেয়েছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। কিন্তু প্রথম সেশনেই তাঁরা আউট হয়ে যান। ভারতের জয়ের আশাও ওখানেই শেষ হয়ে যায়। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল শেষ সাত উইকেট। তা সহজেই তুলে নিলেন স্কট বোলান্ডরা। পর পর দু’বার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেও জেতা হল না ভারতের। নতুন চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।

Advertisement

পঞ্চম দিনের ম্যাচ শুরুর আগে বিরাট একটি বার্তা দিয়েছিলেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছিলেন, “যদি আমাদের মনে খুব বেশি চিন্তা, ভয় ও সন্দেহ থাকে তা হলে বাঁচার ও ভালবাসার সুযোগ কম পাওয়া যায়। তার জন্য সব কিছুকে দূরে সরিয়ে রাখার অনুশীলন করতে হয়।” কিন্তু চিন্তা, ভয় এবং সন্দেহই ভারতকে জিততে দিল না। শনিবার যে বিরাট অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলছিলেন না। তিনিই রবিবার স্কট বোলান্ডের বলে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছোঁয়ালেন। বলের লাইন নিয়ে সন্দেহ ছিল বিরাটের। তাতেই আউট। সেখান থেকে ভারতের চিন্তা বাড়ল। মাত্র দু’টি বল খেলে রবীন্দ্র জাডেজা আউট হতেই সেই চিন্তা বদলে গেল ভয়ে। বিরাট যে তিনটি জিনিস পঞ্চম দিনে চাননি, সেই তিনটি জিনিসই ভারতকে হারিয়ে দিল। পরে রাহানে আউট হতে জয়ের আশাও ছেড়ে দেয় ভারত। বাকিদের উইকেট যাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা।

২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত। তার পর থেকে আইসিসির একাধিক প্রতিযোগিতার নক আউট পর্বে উঠলেও ট্রফি জেতা হয়নি। কখনও সেমিফাইনাল, কখনও ফাইনালে উঠে হেরে গিয়েছে তারা। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ট্রফি আসছিল না। রোহিত শর্মাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে ভারত এখনও ট্রফি জিততে পারল না।

Advertisement

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রথম দিন থেকেই ভারতের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। দলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে না নেওয়া বড় ভুল হয়েছে বলে মনে করা হয়। টেস্টের ক্রমতালিকায় এক নম্বরে থাকা বোলারকে বসিয়ে রেখে খেলতে নামেন রোহিতরা। ওভালের সবুজ পিচ এবং মেঘলা আকাশ দেখে চার পেসার এবং এক স্পিনার নিয়ে নেমেছিল ভারত। কিন্তু প্রথম দিনেই রোদ উঠে যায়। ভারতীয় পেসাররা নির্বিষ হয়ে যান স্টিভ স্মিথ এবং ট্রেভিস হেডের সামনে। তাঁদের শতরানে ভর করে ভারতের বিরুদ্ধে ৪৪৪ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। অনেকের মতে অশ্বিন থাকলে এত রান তোলা সম্ভব হত না স্মিথদের পক্ষে।

রোহিত টসের পর বলেছিলেন, ‘‘অশ্বিনকে দলের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত খুব কঠিন। এত বছর ধরে ও আমাদের অনেক ম্যাচে জিতিয়েছে। কিন্তু পিচ ও আকাশের পরিস্থিতি দেখে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’ অশ্বিনের জায়গায় দলে নেওয়া হয় উমেশ যাদবকে। ভারতের হয়ে নতুন বল শুরু করেছিলেন মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজ। তাঁরা খারাপ বল করেননি। খেলতে সমস্যা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের। রান হচ্ছিল না। প্রথম ১২ ওভারে মাত্র ২৩ রান হয়। বোলিং আক্রমণে প্রথম পরিবর্তন হিসাবে আনা হয় উমেশকে। তার পরেই বদলে যায় খেলার ছবিটা। এ বারের আইপিএলে ভাল ছন্দে ছিলেন না উমেশ। ওভালেও সেটা দেখা গেল। বলের লাইন, লেংথ ঠিক করতে পারলেন না তিনি। হয় খুব ফুল লেংথে বল করলেন, নইলে শর্ট লেংথে বল পড়ল। ফলে হাত খুলে শট খেলা শুরু করলেন ওয়ার্নার ও লাবুশেন। উমেশের এক ওভারে চারটি চার মারলেন ওয়ার্নার। শামি ও সিরাজ যে চাপ দিয়েছিলেন, তা আলগা হয়ে গেল।

রোহিতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমি যদি রোহিতের জায়গায় থাকতাম তা হলে অশ্বিনকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া এত সহজ হত না। ওর মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলে থাকলে অনেক সুবিধা হয়।’’ রিকি পন্টিং আবার বলেছেন, ‘‘শুধু প্রথম ইনিংসের কথা ভেবে কেউ দল নির্বাচন করে না। অস্ট্রেলিয়ার দলে এত জন বাঁহাতি ব্যাটার। উইকেটে ঘাস থাকলেও অশ্বিন ওদের সমস্যায় ফেলতে পারত।’’

বড় রানের সামনে খেলতে ভারতের প্রথম চার ব্যাটার ব্যর্থ হন। প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মা (১৫), শুভমন গিল (১৩), চেতেশ্বর পুজারা (১৪) এবং বিরাট কোহলি (১৪) এলেন এবং ফিরে গেলেন। শুভমন এবং পুজারা বল ছাড়তে গিয়ে যে ভাবে নিজেদের উইকেট দিলেন তার সমালোচনা হওয়া স্বাভাবিক। তাঁদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করেন এই টেস্টে সুযোগ পাওয়া অজিঙ্ক রাহানে। ৮৯ রান করেন তিনি। রাহানেকে সাহায্য করেন রবীন্দ্র জাডেজা এবং শার্দূল ঠাকুর। তাঁদের ব্যাটে ভর করে ভারত ২৯৬ রান করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার থেকে ১৭৩ রানে পিছিয়ে থেকে থামতে হয় তাঁদের। এই দায় রোহিতরা এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের পেসাররা খুব বেশি লড়াই করতে পারেননি। তাঁরা শুধু চেষ্টা করেছেন মাত্র। জাডেজা দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট নেন। অশ্বিনের অভাব সেই সময় টের পাচ্ছিল ভারত। পিচ ভাঙতে শুরু করে দিয়েছিল। এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারতেন বলে মত অনেকের। শেষ ইনিংসে নাথান লায়নের চার উইকেট নেওয়াও প্রমাণ করে দেয় যে অশ্বিন থাকলে হয়তো ভারত অন্যরকম খেলত।

ভারতের শেষ ইনিংসে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে শুভমনের আউট। টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনালের চতুর্থ দিন ভারতীয় ওপেনারের আউট ঘিরে প্রশ্ন ওঠে। স্কট বোল্যান্ডের বল শুভমনের ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে যায়। তৃতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যামেরন গ্রিন বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরেন। এই ক্যাচ নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার পরে সেই বিতর্কে ঘি ঢেলেছেন শুভমন নিজেই। ওই ক্যাচের ছবি টুইট করেছেন তিনি। শুভমন কোনও মন্তব্য করেননি। যদিও ছবি দেখে মনে হচ্ছে ক্যাচ নেওয়ার সময় বল মাটিতে ঠেকেছে।

প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় মনে করেন শুভমনকে আউট দেওয়া ঠিক হয়নি। রিকি পন্টিং বলেন, ‘‘বল গ্রিনের হাতে পৌঁছনোর সময় মাটি থেকে ইঞ্চি ছয়েক উপরে ছিল। কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ক্যাচ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে বল মাটি স্পর্শ করেনি। রোহিত কেন ক্ষুব্ধ হয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলেছে বুঝতে পারছি। শুভমনের হতাশাও স্বাভাবিক।’’ পরে যদিও পন্টিং নিজের বক্তব্য পাল্টান। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে দেখে আমার মনে হয়েছিল বল গ্রিনের কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু পরে রিপ্লে দেখে বুঝতে পারি, বলের কিছুটা অংশ মাটি ছুঁয়েছিল। কিন্তু আম্পায়ার যদি দেখেন যে মাটি ছোঁয়ার আগে বলের উপর ফিল্ডারের পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা হলে সেটা আউট। এ ক্ষেত্রে আম্পায়ার সেটাই মনে করেছেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত সঠিক।’’ কুমার সাঙ্গাকারা বলেন, ‘‘গ্রিনের আঙুল বলের নীচে থাকলেও বল মাটি স্পর্শ করেনি, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এমনও হতে পারে বল মাটি ছোঁয়ার জন্যই গ্রিন ভাল ভাবে বল ধরতে পেরেছে। এই ধরনের ক্ষেত্রে আম্পায়াররা সাধারণত আউট দেন না।’’

কিন্তু সেই সব আলোচনা এখন বৃথা। অস্ট্রেলিয়া ২০৯ রানে হারিয়ে দিয়েছে ভারতকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী এখন অস্ট্রেলিয়া। আবার দু’বছরের অপেক্ষা। ২০২৫ সালে ফাইনাল হবে লন্ডনে। সেখানে ভারত সুযোগ পাবেন কি না সেটা বোঝা যাবে আগামী দু’বছরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement