ওভালে শতরানের পর ট্রেভিস হেড। ছবি: রয়টার্স।
মার এবং পাল্টা মার। বুধবার ট্রেভিস হেড এটাই করলেন ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে। আইপিএল খেলে আসা মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজদের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংই দেখাতে শুরু করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার। হেডের শতরানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের প্রথম দিনে তুলল ৩২৭ রান।
হেড প্রথম ব্যাটার যিনি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শতরান করলেন। সেই শতরান এল মাত্র ১০৬ বলে। ২২টি চার এবং একটি ছক্কা হাঁকান হেড। তিনি ব্যাট করতে আসার পরেই অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি বেড়ে যায়। উমেশ যাদব, শার্দূল ঠাকুরেরা বুঝতেই পারছিলেন না কী ভাবে হেডকে আটকাবেন। শামি এবং সিরাজ মাঝে মধ্যে তাঁকে বিব্রত করলেও ক্রিজ থেকে সরাতে পারেননি। হেড ব্যাট করতে নামার সময় অস্ট্রেলিয়ার ছিল ৭৬ রান। সেখান থেকে দিনের শেষে ১৪৬ রানে অপরাজিত হেড যখন সাজঘরে ফিরছেন, অস্ট্রেলিয়ার তখন ৩২৭ রান।
হেড শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু তাঁর উল্টো দিকে থাকা স্টিভ স্মিথ একেবারেই ধীর স্থির ভাবে রান করছিলেন। দিনের শেষে তিনিও শতরানের দোরগোড়ায়। ৯৫ রানে অপরাজিত স্মিথ। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই শতরান করে ফেলতে পারেন তিনি। ৯৫ রান তুলতে স্মিথ নিলেন ২২৭টি বল। ১৪টি চার মারেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে স্মিথ এবং হেড ২৫১ রানের জুটি গড়েছেন। প্রথম দিনে মধ্যাহ্নভোজের পরেই নেমেছিলেন হেড। সেখান থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত টিকে গেলেন তিনি। কোনও ভাবেই জুটি ভাঙতে পারল না ভারত।
ফাইনালে টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ওভালের সবুজ পিচ এবং মেঘলা আকাশ দেখে বল করাই ঠিক মনে করেছিলেন তিনি। ভারতীয় দল নেমেছে তিন পেসার এবং শার্দূল ঠাকুরকে নিয়ে। শামি, সিরাজ এবং উমেশ যাদব রয়েছেন ভারতীয় দলে। নেওয়া হয়নি রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। রোহিত বলেন, “অশ্বিনকে দলের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত খুব কঠিন। এত বছর ধরে ও আমাদের অনেক ম্যাচে জিতিয়েছে। কিন্তু পিচ ও আকাশের পরিস্থিতি দেখে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
আইসিসির ক্রমতালিকায় টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর বোলার অশ্বিন। তাঁকে বসিয়ে রেখে খেলতে নামা কতটা ঠিক সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, অশ্বিনের বদলে যাকে দলে নেওয়া হয়েছে, সেই উমেশ যাদব প্রথম স্পেলে একেবারেই দাগ কাটতে পারেননি। উল্টে ডেভিড ওয়ার্নার, মার্নাশ লাবুশেনদের হাত খুলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। রোহিতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমি যদি রোহিতের জায়গায় থাকতাম তা হলে অশ্বিনকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া এত সহজ হত না। ওর মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলে থাকলে অনেক সুবিধা হয়।’’ রিকি পন্টিং আবার বলেছেন, ‘‘শুধু প্রথম ইনিংসের কথা ভেবে কেউ দল নির্বাচন করে না। অস্ট্রেলিয়ার দলে এত জন বাঁ হাতি ব্যাটার। উইকেটে ঘাস থাকলেও অশ্বিন ওদের সমস্যায় ফেলতে পারত।’’
প্রশ্ন উঠতে পারে শ্রীকর ভরতকে দলে নেওয়া নিয়েও। উইকেটের পিছনে তিনি দু’টি ক্যাচ নিলেও খুব একটা স্বচ্ছন্দ দেখায়নি তাঁকে। একটি সহজ বল যে ভাবে গলালেন ভরত, তা পাড়ার ক্রিকেটে হলেও কথা শুনতে হত। ঋষভ পন্থ না থাকায় অনেকের মতে ঋদ্ধিমান সাহাকে এই ম্যাচে ফেরানো উচিত ছিল। ভরতের উইকেটরক্ষা দেখে যা বুধবার আরও এক বার মনে করিয়ে দিল। অজিঙ্ক রাহানেকে অভিজ্ঞতার কারণে ফেরানো হলে ঋদ্ধি কেন নয়? অনেক দিন পরে আবার ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন রাহানে। তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলে জানিয়েছেন রোহিত। তিনি বলেছেন, ‘‘রাহানে আসায় দলের অভিজ্ঞতা বেড়েছে। ও ৮০-র বেশি টেস্ট খেলেছে। দলের সাফল্যে অনেক অবদান রয়েছে। অনেক দিন রাহানে দলের বাইরে ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় ওর যা অভিজ্ঞতা তাতে খুব একটা সমস্যা হবে না।’’
প্রথম দিনের শেষে শামি দিয়েছেন ৭৭ রান, সিরাজ দিয়েছেন ৬৭ রান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাঁরা। শার্দূল একটি নিয়ে দিয়েছেন ৭৫ রান। উমেশ ১৪ ওভার বল করে দিয়েছেন ৫৪ রান। একমাত্র স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা দিয়েছেন ৪৮ রান। দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার বাকি সাত উইকেট যত তাড়াতাড়ি তুলতে পারবেন তাঁরা, ততই ভারতের জন্য ভাল। কারণ ওভালের পিচ ব্যাটারদের সাহায্য করলেও প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কদের সুইং এবং বাউন্স চাপে ফেলে দিতেও পারে রোহিতদের।