চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এবং প্রশান্ত কিশোর, এক জন ক্রিকেট কোচ, অন্য জন রাজনীতির। —ফাইল চিত্র
চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এবং প্রশান্ত কিশোর। এক জন উঠে এসেছেন মুম্বইয়ের ক্রিকেট মাঠ থেকে। অন্য জনের বাড়ি বিহারে। দু’জনের বয়সের তফাত প্রায় ১৫ বছরের। দু’জনের অনেক তফাত থাকলেও একটি জায়গায় মিল রয়েছে। এক জন ক্রিকেট কোচ, অন্য জন রাজনীতির। কোনও দলের সঙ্গে তাঁরা রয়েছেন মানে কঠিন শৃঙ্গ জয় নিশ্চিত।
রঞ্জি ফাইনালে মুম্বইকে হারিয়ে মধ্যপ্রদেশকে চ্যাম্পিয়ন করলেন পণ্ডিত। যে দলের রঞ্জিতে এর আগে সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল এক বার ফাইনাল খেলা, সেটাও ২৩ বছর আগে, সেই দলকেই ভারত সেরা করলেন তিনি। দলে পণ্ডিত থাকলে আর কোনও তারকা প্রয়োজন হয় না, এমনটাই বলেন বিপক্ষ দলের ক্রিকেটাররা।
২৩ বছর আগে মধ্যপ্রদেশ যে বার রঞ্জির ফাইনাল খেলেছিল, সে বার দলের অধিনায়ক ছিলেন পণ্ডিত। এর পর খেলা ছেড়ে কোচ হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০২ সালে মুম্বই দল তাঁকে কোচের দায়িত্ব দেয়। আগের দু’বছর রঞ্জি জিততে না পারা মুম্বই তাঁর হাতে পড়তেই পাল্টে যায়। পর পর দুই বছর রঞ্জি জিতে নেয় তারা। কোনও বার রঞ্জি না জেতা বিদর্ভকে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন করেন পণ্ডিত। তিনি দায়িত্ব নেওয়া মানেই সাফল্য। রাজনীতির মঞ্চে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে) যে ভাবে নেপথ্যে থেকে পাল্টে দেন হিসেব-নিকেশ, ক্রিকেট মাঠে নেপথ্যে থেকে সেই কাজটাই করেন কোচ পণ্ডিত।
সাল ২০১২। গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেন পিকে। তৃতীয় বার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চেয়ার দখল করেন মোদী। ভোটকুশলী পিকের প্রভাব দেখা যায় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ২৮২টি কেন্দ্রে জেতে বিজেপি। দেশের প্রধানমন্ত্রী হন মোদী। এর পরেই বিজেপি ছেড়ে বিহারে জনতা দল ইউনাইটেডের হাত ধরেন পিকে। নীতীশ কুমারের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার নেপথ্যে ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের জগন মোহন রেড্ডিকে মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনেও ছিলেন পিকে।
বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে পিকের জোট শুরু ২০১৯ সাল থেকে। ২০২১ সালে মোদী, অমিত শাহ, জেপি নড্ডারা বাংলার মাটিতে পদ্ম ফুল ফোটানোর আশায় এ রাজ্যে নিত্যযাত্রী হয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় পিকে টুইট করে লিখেছিলেন, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির আসন সংখ্যা দুই অঙ্ক ছাড়ালে তিনি টুইটার ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় বিজেপির আসন সংখ্যা ৭৭। ঠিক প্রমাণিত হন পিকে। এ বছর তেলঙ্গনায় কে চন্দ্রশেখরের তেলঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতির জয়ের পিছনেও ছিলেন তিনি। পিকে যে দলের জন্য ভোটকুশলী হিসাবে থাকেন, সেই দলের সাফল্য দেখা গিয়েছে বার বার।
পণ্ডিতের কোচিং জীবনও সেই ধারাতেই চলছে। মুম্বই, বিদর্ভের পর মধ্যপ্রদেশকে নেপথ্যে থেকে রঞ্জি জেতালেন তিনি।
ক্রিকেট মাঠে ভারত সেরা হওয়াই হোক বা ভারতীয় রাজনীতিতে সিংহাসন দখল হোক, নেপথ্যে থেকেই কাজ করে যান পণ্ডিত, পিকেরা।