জো রুট। —ফাইল চিত্র।
বাজ়বল ক্রিকেটকে কি তিনি পিছনে ফেলে আবার নিজের ঘরনার ব্যাটিং শুরু করেছেন? রাঁচী টেস্টে জো রুটের শতরানের পরে এই প্রশ্নটা উঠে গিয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কের মুখে শোনা যাচ্ছে বাজ়বল ক্রিকেটেরই প্রশংসা। বলে দিচ্ছেন, বাজ়বল মানে দর্প নয়! বাজ়বল মানে সেরাটা বার করে আনার পরিবেশ তৈরি করা।
শনিবার খেলা শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এসে রুট বলে যান, ‘‘একটা দল হিসেবে আমরা দেখি, কী করে ক্রিকেটারদের থেকে সেরাটা বার করে আনা যায়। আড়াই-তিন বছর আগের স্কোর দেখুন। কত বার হয়তো ২০ রানে দু’উইকেট পড়ে গিয়েছে ইংল্যান্ডের। আর এখন আমাদের শুরুর দিকের ব্যাটিং দেখুন। এখন আমরা যে ভাবে খেলছি, তাতে ক্রিকেটারদের সেরাটা বার হয়ে আসছে।’’
বাজ়বল নীতিতে সায় দিয়ে রুট পরিষ্কার বলছেন, ‘‘ব্যাটিংয়ের মোদ্দা কথাটা হল, প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি রান করা। দ্রুত রান করা এবং হাতে সেই সময়টা রাখা, যার মধ্যে প্রতিপক্ষ দলের কুড়িটা উইকেট নেওয়া যাবে। সেই ভাবে ব্যাট করতে গিয়ে যদি উইকেট চলে যায়, তা হলে যাবে।’’
রুটের কাছে বাজ়বল ক্রিকেট হল সেই দর্শন, যা সেরাটা দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে। ‘‘এর মানে এই নয় যে, আমরা সব সময় আগ্রাসী ক্রিকেট খেলব। সেটা আমাদের নীতি নয়।’’
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক আরও বলেছেন, ‘‘বাজ়বল মানে কিন্তু অহংকারী ব্যাটিং নয়। বাজ়বল কথাটা খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু শব্দটা আপনাদের। আমরা ওই ভাবে ব্যাপারটা দেখি না।’’
নিজের ইনিংস নিয়ে রুটের মন্তব্য, ‘‘যখন ব্যাট করতে যাই, তখন উইকেট দেখে মনে হয়েছিল, অসমান বাউন্স আছে। এই ধরনের উইকেটে সুইপ মারা কঠিন। আড়াআড়ি শট খেলাও কঠিন। যে কারণে আমি ওই শটটা বাদ দিয়ে দিই।’’
কখনও কি মনে হয়নি এ বার রিভার্স সুইপ বা রিভার্স স্কুপ মারি? একটু হেসে রুটের জবাব, ‘‘মনে যে হয়নি, তা নয়। যখন সেঞ্চুরির সামনে ছিলাম, তখন ভেবেছিলাম রিভার্স স্কুপ মারব। কিন্তু বুঝে যাই সেটা খুবই স্বার্থপরের মতো ব্যাপার হবে। তাই ভাবনাটা সরিয়ে দিই মাথা থেকে।’’
স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে রাজকোটে মারা ওই রিভার্স স্কুপের কথা। যে শট হারিয়ে দিয়ে যায় ইংল্যান্ডকে। রুটের মন্তব্য, ‘‘রাজকোটের উইকেট কিন্তু এ রকম খারাপ ছিল না। সে দিন ওই শটটা একটু নিচু হয়ে গেল। কী আর করা যাবে। মাঝে মাঝে হয়ে যায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবে ওই শটটা খেলেছিলাম, সেটা ভুলতে পারছি না। আমি শট বাছাইয়ের কথা বলব না। কিন্তু যে ভাবে শটটা মারতে চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি। ওটাই আক্ষেপ।’’ এর পরেই বলেন, ‘‘আমি যদি শটটা ঠিকমতো খেলতে পারতাম, তা হলে বুমরা চাপে পড়ে যেত।’’
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৩৫৩ রানের মধ্যে রুটের একারই সংগ্রহ অপরাজিত ১২২। প্রথম তিনটি টেস্টের ছ’ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৯ রান করার পরে আবার ছন্দে ফিরেছেন ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। নিজের শতরান নিয়ে রুট বলেন, ‘‘দলের কাজে
লাগায় খুশি। আমি একেবারেই রান পাচ্ছিলাম না। আশা করি, বাকি সিরিজ়টাতেও এই রকম ছন্দে থাকতে পারব।’’
দলের তরুণ স্পিনার শোয়েব বশিরকে নিয়ে রুট বলেছেন, ‘‘যে ভাবে বশির বল করেছে, তাতে ওর চারিত্রিক দৃঢ়তাটা ধরা পড়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘বশিরের দক্ষতার কথাও বলতে হবে। টানা এতগুলো ওভার বল করে গেল। আর যাদের চাপে রাখল, তারা কিন্তু স্পিনের বিরুদ্ধে দারুণ ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের পক্ষে এটা একটা ভাল দিক।’’