T20 World Cup 2022

দেখা হবে কি দুই পড়শির

দু’দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এমন এক মুহূর্তের অপেক্ষাতেই রয়েছেন। পাকিস্তান নিজেদের কাজ করে দেখিয়েছে। রোহিত শর্মার দলের কাছে এ বার নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার সুযোগ।

Advertisement

ঝুলন গোস্বামী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৪৩
Share:

নিউজ়িল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠায় উচ্ছ্বসিত পাকিস্তানের শান মাসুদ ও ইফতিকার আহমেদ। বুধবার সিডনিতে। ছবি: পিটিআই।

নেদারল্যান্ডস বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগেও যদি কেউ বলতেন, পাকিস্তান এ বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলবে, তাঁর ক্রিকেটীয় জ্ঞান নিয়ে নির্ঘাত প্রশ্ন তোলা হত। অবিশ্বাস্য একটি ঘটনায় প্রতিযোগিতার যাবতীয় অঙ্ক ওলট-পালট হয়ে গেল। নেদারল্যান্ডস হারিয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সেই সুযোগে বাংলাদেশকে হারিয়ে শেষ চারে উঠে এল পাকিস্তান। তবুও সেমিফাইনাল ম্যাচ সহজ নয়। তা-ও আবার নিউজ়িল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। আইসিসি প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক বার যারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করতেও পিছু হটল না বাবর আজ়মের দল। সাত উইকেটে কেন উইলিয়ামসনদের উড়িয়ে এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেল পাকিস্তান। অপেক্ষা এ বার ভারতের। আজ, বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে কি আবার দেখা হবে ভারত-পাকিস্তানের?

Advertisement

দু’দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এমন এক মুহূর্তের অপেক্ষাতেই রয়েছেন। পাকিস্তান নিজেদের কাজ করে দেখিয়েছে। রোহিত শর্মার দলের কাছে এ বার নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার সুযোগ। বেন স্টোকসদের হারিয়ে রবিবার মেলবোর্নে যদি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা হয়ে যায়, তা হলে এই চিত্রনাট্য কুয়েন্টিন ট্যারেন্টিনোর থ্রিলারকেও হার মানাবে।

সিডনিতে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের খেলা নিশ্চিত হওয়ার পরেই বাবরদের কিছুটা হলেও এগিয়ে রেখেছিলাম। কারণ, বাকি মাঠগুলোর চেয়ে সিডনির পিচে বাউন্স কম। অনেকটা উপমহাদেশের উইকেটের মতো। বল ঘোরে। সহজে ব্যাটে আসে না। সেমিফাইনালের আগে এই পিচে বেশ কিছু ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। তার পরেও টস জিতে কেন উইলিয়ামসন কেন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিল, বুঝতে পারলাম না। প্রথম ইনিংসে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হ্যারিস রউফরা পিচ থেকে যতটুকু সাহায্য পেয়েছিল, দ্বিতীয় ইনিংসে তার একাংশও পায়নি ট্রেন্ট বোল্ট,টিম সাউদিরা।

Advertisement

পাকিস্তান বোলিং বিভাগের সব চেয়ে বড় অস্ত্র শাহিন শাহ আফ্রিদি। ও যে ম্যাচে প্রথম ওভারে উইকেট পায়, পাকিস্তান সেই ম্যাচ সহজে হারে না। সিডনিতে এ দিন ফিন অ্যালেনকে ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে (বাঁ-হাতির ক্ষেত্রে আউটসুইং) এলবিডব্লিউ করে ফেরানোর পরেই বাররা বিশ্বাস করতে শুরু করে, ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা সম্ভব। শাহিন এক দিক থেকে গতি ও সুইংয়ে উইলিয়ামসনদের বিভ্রান্ত করতে শুরু করে। অন্য দিক থেকে রান আটকানোর কাজটি করে যায় হ্যারিস রউফ ও নাসিম শাহ। কাকে সমীহ করে কাকে আক্রমণ করা উচিত, সেই উত্তর ছিল না নিউজ়িল্যান্ডের কাছে। উইলিয়ামসন স্ট্রাইক রোটেট করে চাপ হাল্কা করার চেষ্টা করলেও শাদাব খানের অবিশ্বাস্য থ্রোয়ে ফিরে যেতে হয় কনওয়েকে। এ ধরনের চাপের ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে দু’টি উইকেট হারালে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হয় না। পিচ এতটাই মন্থর যে, বড় শট খেলে চাপ হাল্কা করার উপায়ও ছিল না। ১০ ওভারে তিন উইকেটে ৫৯ রান ওঠে ব্ল্যাক ক্যাপসদের। ১১তম ওভার থেকে ডারিল মিচেল ও উইলিয়ামসন আক্রমণ না করলে ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৫২ রান তুলতে পারত না নিউজ়িল্যান্ড। জবাবে পাঁচ বল বাকি থাকতে সাত উইকেটে ম্যাচ জেতে পাকিস্তান।

ম্যাথু হেডেনের কথাই সত্যি হল। শেষ চারের ম্যাচেই ছন্দ ফিরে পেল বাবর আজ়ম। পাক অধিনায়ক ও রিজ়ওয়ান বড় ম্যাচের ক্রিকেটার। অথচ বাবরের খারাপ সময়ে তার পাশে দাঁড়ালেন না প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা। নিজেদের দেশের অধিনায়কের উপরে আস্থা না রেখে এ ভাবে আক্রমণ করার যুক্তি কী? বিরাট কোহলির খারাপ সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অধিকাংশই কিন্তু ওর পাশে ছিলেন। কিন্তু বাবর পাশে পায়নি ওর পূর্বসূরিদের। শুধুমাত্র হেডেন ওর দক্ষতায় ভরসা রাখে। ম্যাচের আগের দিন শুধুমাত্র বাবরের বিশেষ ক্লাস নেন হেডেন। পাক অধিনায়ককে বুঝিয়ে দেন, কোথায় তার শক্তি। লকি ফার্গুসনকে যে স্ট্রেট ড্রাইভটা আজ ও মেরেছে, সেটাই পরিচয় দেয় বাবর কত বড় মাপের ব্যাটার। ফাইনালের আগে ৪২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস কিন্তু সতর্ক বার্তা দিয়ে গেল।

সেই সঙ্গেই রিজ়ওয়ানের ৪৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস আস্থা ফেরাল দলের ওপেনিং জুটির উপরে। এত দিন যে ওপেনিং জুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, তারাই এ দিন ১০৫ রান যোগ করে যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে যা সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে দলই এ বার ফাইনাল খেলুক, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ভারতকে যদিও সেই সম্ভাবনায় এগিয়ে রাখব। বিশ্বকাপ জুড়ে ধারাবাহিক ভাবে খেলে চলেছে ভারত। মাঝের ওভারগুলোয় বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব নিচ্ছে। নতুন বলে ভুবনেশ্বর কুমার, আরশদীপ সিংহ ও মহম্মদ শামি সুইং পাচ্ছে। ডেথ ওভারেও আরশদীপ, হার্দিকরা দলকে চিন্তামুক্ত রাখতে পেরেছে। উদ্বেগ শুধুমাত্র ওপেনিং জুটি নিয়ে।

বাবর যেমন সারা বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয়ে সেমিফাইনালে ছন্দ ফিরে পেল, ঠিক সে রকমই একটি মঞ্চ তৈরি করার সুযোগ থাকছে রোহিত শর্মার সামনেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement