জেমস অ্যান্ডারসন। ছবি: রয়টার্স
অতীতে অ্যাশেজ়ে কাঁড়ি কাঁড়ি উইকেট নিয়েছেন তিনি। বহু বার হয়ে উঠেছেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটারদের ত্রাস। কিন্তু এ বারের সিরিজ়ে পাওয়া যাচ্ছে না পুরনো জেমস অ্যান্ডারসনকে। প্রথম দু’টি টেস্টে ২২৬ রান খরচ করে মাত্র তিনটি উইকেট পেয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, পরের টেস্টে তাঁকে বাদ দিয়ে মার্ক উডকে দলে ঢোকানো হবে। অ্যান্ডারসন মেনে নিয়েছেন তাঁর খারাপ সময় যাচ্ছে। এখনও সেই ছন্দটা খুঁজে পাননি তিনি। তবে সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফে’ এক কলামে অ্যান্ডারসনে তিনি লিখেছেন, “সত্যি কথা বলতে প্রত্যেকেই চায় বড় সিরিজ়ে ছাপ রাখতে। গত ১০ বছরে টানা দুটো টেস্টে এত খারাপ খেলেছি বলে মনে পড়ছে না। কোনও না কোনও সময় দলকে সাহায্য করেছি। এখনও আমার মনে হয় না খুব খারাপ বল করছি। স্রেফ একটা খারাপ সময় যাচ্ছে। অ্যাশেজ়ে তেমনটা কেউই প্রত্যাশা করে না। ১৮১টা টেস্টে মাত্র দুটো ম্যাচে আমার খারাপ সময় যাচ্ছে।”
আবারও পিচকে দোষ দিতে চাননি অ্যান্ডারসন। তবে এটাও জানিয়েছেন, দু’টি টেস্টের পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। অতীতে পাটা পিচে উইকেট নিয়েছেন বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে। এ বারই শুধু ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, “গত ২০ বছর ধরে ব্যাটারের কাছে বল ফেলে সেটা সুইং করানোর চেষ্টা করেছি পিচের সাহায্য নিয়ে। কিন্তু তাতে কাজ না হলে খুব হতাশ লাগে। নিজের খেলা নিয়ে আরও ভাবনাচিন্তা করতে হবে আমাকে। কোচেদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং দেখতে হবে আমার বোলিংয়ে নতুনত্ব কিছু আনা যায় কি না।”
অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।