ঋদ্ধিমানের সঙ্গে ঈশান। —ফাইল চিত্র
চার বছর আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন বাংলার ঈশান পোড়েল। রবি কুমারদের মনের অবস্থা তাঁর থেকে ভাল বুঝবে কে? বাংলা দলের হয়েও নিয়মিত ঈশান। আইপিএল-এ পঞ্জাব কিংসের হয়েও খেলেছেন। বৃহস্পতিবার কটকের হোটেলে পৌঁছেই বসে গেলেন আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তর দিতে।
প্রশ্ন: অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জেতা ক্রিকেটারদের কেরিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলে?
ঈশান: অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেললে অনেকটা প্রচারের আলো পাওয়া যায়। অনেকে খেলা দেখে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ বড় মঞ্চ। এখানে ভাল খেললে সবাই চিনতে পারে। আমার জীবনেও প্রভাব পড়েছে। দেশের জন্য বিশ্বকাপ জিতেছি, সেটা অনূর্ধ্ব ১৯ হোক বা সিনিয়রদের বিশ্বকাপ, একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেয়। আগামী দিনে পারফরম করার জন্য জেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ এবং ক্রিকেটার, দুই দিকেই প্রভাব ফেলে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ।
২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জেতার পর নিজের জন্য কোনও লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিলেন?
ঈশান: বিশ্বকাপ খেলার আগেই বাংলার হয়ে রঞ্জি খেলেছিলাম। এটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। বিশ্বকাপ জিতে ফিরে এসে বাংলার হয়ে খেলেছিলাম। তবে নিজেকে কোনও লক্ষ্য বেঁধে দিইনি। নিজের উপর কোনও চাপ তৈরি করিনি যে আমাকে ভারতের হয়ে খেলতেই হবে। নিজের খেলার দিকে নজর দিয়েছিলাম। পরিশ্রম করেছিলাম, কী ভাবে নিজের খেলায় আরও উন্নতি করা সম্ভব সেই দিকেই নজর ছিল আমার। সামনে যে ম্যাচগুলো ছিল সেই নিয়েই ভেবেছিলাম। সেটাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের সঙ্গে ঈশান। —ফাইল চিত্র
এ বারের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোন ক্রিকেটার নজর কেড়েছে?
ঈশান: রবি কুমারের নাম অবশ্যই নেব। ও বাংলার রঞ্জি দলেও আমাদের সঙ্গে রয়েছে। বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে ১০টি উইকেট নিয়েছে ও। ফাইনালে চারটি উইকেট পেয়েছে। রবি অবশ্যই ভাল খেলেছে। অন্য পেসার রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকরও ভাল বল করেছে। রাজ বাওয়া ভাল খেলেছে। যশ ঢুল ভাল খেলেছে। সবাই মিলিত ভাবে খুব ভাল খেলেছে। ক্রিকেট দলগত খেলা, সবাই ভাল খেলেছে বলেই জিতেছে। তবে বোলারদের দায়িত্বটা অনেক বেশি। ব্যাটাররা যত রানই করুক, বোলাররা উইকেট নিতে না পারলে জেতা মুশকিল। তার মধ্যেও এই ৫-৬ জন আলাদা করে নজর কেড়েছে।
শনিবার আইপিএল-এর নিলাম। সেটা নিয়ে কী ভাবছেন?
ঈশান: নিলাম নিয়ে আমি খুব আশা করছি না। আশা রাখলেই চাপ তৈরি হবে। আশাপূরণ না হলে মন খারাপ হবে। তাই আশা রাখছি না, তবে দল পেলে ভাল লাগবে। এই বছর মাত্র দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছি। গত বার ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলাম। আমি জানি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভাল খেলতে পারব। তবে নিজের উপর কোনও চাপ তৈরি করতে চাইছি না। যা হবে ভালর জন্যই হবে। এখন রঞ্জি নিয়েই ভাবছি।
রঞ্জিতে বাংলা গত বারের রানার্স। এ বারের দল নিয়ে কতটা আশাবাদী?
ঈশান: অন্য অনেক দলের থেকে আমরা ভাল প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। সব মিলিয়ে প্রায় তিনটে চার দিনের ম্যাচ খেলেছি। মাঝে যদিও করোনার জন্য একটা ফাঁক ছিল। তবে সকলে ছন্দে আছে। দল হিসেবে ভাল খেলছি আমরা। ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি এবং এক দিনের প্রতিযোগিতাতেও ভাল খেলেছি। অল্পের জন্য জিততে পারিনি কিছু ম্যাচ। লাল বলের ক্রিকেটে অভিজ্ঞ মনোজ তিওয়ারি দলে রয়েছে। অনুষ্টুপ মজুমদার, অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেটার রয়েছে। আমরা পেসাররাও যারা আছি চেষ্টা করব ভাল বল করার।
ঋদ্ধিমান সাহার না থাকাটা কতটা প্রভাব ফেলবে এ বারের বাংলা দলে?
ঈশান: ঋদ্ধিমানের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার না থাকাটা দলের ক্ষতি। কিন্তু আমাদের হাতে তো কিছু নেই। যারা দলে রয়েছে তাদের নিয়েই লড়াই করতে হবে। ঋদ্ধিদা থাকলে অবশ্যই ভাল হত।
ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে ঈশান। —ফাইল চিত্র
এ বারের বাংলা দলে খুড়তুতো ভাই অভিষেক পোড়েলও রয়েছে। তাঁকে কী ভাবে পথ দেখান দাদা ঈশান পোড়েল?
ঈশান: অভিষেক খুব পরিণত। ওর অভিজ্ঞতা রয়েছে। লাল বলের ক্রিকেটে রানও পেয়েছে। ওকে খুব বেশি কিছু বলি না। যেটুকু দরকার ওই টুকুই। অভিষেক জানে ও কী ভাবে ক্রিকেটটা খেলতে চায়। আমি ওর মধ্যে বেশি ঢুকি না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যেটুকু বুঝতে পেরেছি সেটা ভাগ করে নিই ওর সঙ্গে।
রঞ্জির মাঝে আইপিএল। এক বার লাল বল, তার পর সাদা বল আবার লাল বল, ক্রিকেটারদের জন্য এটা কতটা অসুবিধার?
ঈশান: আমি নিজে সৈয়দ মুস্তাক আলিতে সাদা বলে খেলে ভারত এ দলের হয়ে লাল বলে খেলতে গিয়েছি। এটা ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতেই হবে। সারা বছর ক্রিকেট খেলতে হয়। সেখানে এটা কোনও অজুহাত হতে পারে না। মানসিক ভাবে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হয় যে আজ লাল বলে খেলছি, কাল সাদা বলে খেলতে হবে। মাঝে এক সপ্তাহ পাওয়া গেলে যে কোনও বল থেকে অন্য বলে খেলার জন্য নিজেকে তৈরি করে ফেলা যায়। এটা খুব একটা অসুবিধার নয়।