আইপিএল নিলামের শুরুটা করেছিলেন ব্রিটেনের হিউ এডমিডেস। কিন্তু শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরেই জ্ঞান হারান তিনি। পড়ে যান মাটিতে। তড়িঘড়ি ডাক পড়ে চারু শর্মার। বাকি নিলাম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন তিনি। যখন তাঁকে ডাকা হয় তখন কোথায় ছিলেন চারু? কী করছিলেন? কী ভাবেই বা অত তাড়াতাড়ি তিনি হাজির হলেন নিলামে?
আইপিএল নিলাম চলছিল বেঙ্গালুরুর হোটেলে। সেখান থেকে চারুর বাড়ির দূরত্ব ১০ মিনিট। বাড়িতেই ছিলেন চারু। পরিবারের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারছিলেন। ঠিক সেই সময় তাঁকে ফোন করেন আইপিএল-এর গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ব্রিজেশ পটেল।
ফোনে চারুকে ব্রিজেশ জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কোথায় আছেন। বাড়িতে আছেন শুনে তাঁকে জানান যে এডমিডেস অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই তাঁকে তখনই নিলামে আসতে হবে। সব শুনে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে হোটেলে পৌঁছে যান চারু। সময় দিতে না পারায় পরিবারের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি।
অন্য সময় হলে শনিবার গল্ফ খেলতে যান চারু। সে সময় মোবাইল তাঁর সঙ্গে থাকে না। কিন্তু চার মাস আগে নেপালে একটি নিলামে তিনিও পড়ে গিয়ে কাঁধে চোট পান। সেটি পুরোপুরি না সারায় সে দিন আর গল্ফ খেলতে যাননি। নইলে হয়তো ব্রিজেশের ফোনের কথা তিনি জানতেই পারতেন না।
বেঙ্গালুরুতে থাকলেও জৈবদুর্গের মধ্যে ছিলেন না তিনি। এ দিকে নিলামে উপস্থিত সবাইকে জৈবদুর্গে থাকতে হয়েছে। তাই চারুর মনে কিছুটা সংশয় ছিল। তিনি নিলামে ঢুকতে পারবেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না।
হোটেলে ঢোকার আগে ব্রিজেশকে ফোন করেন চারু। আইপিএল-এর সিওও তথা বিসিসিআই-এর সিইও হেমঙ্গ আমিন নিজে এসে তাঁকে ভিতরে নিয়ে যান। তবে কোভিডের দু’টি টিকা ও বুস্টার ডোজ নেওয়া ছিল তাঁর। ছিল সেই সপ্তাহেই করা নেগেটিভ আরটি-পিসিআর রিপোর্ট। তার পরেও এক বার কোভিড পরীক্ষা করাতে হয় তাঁকে।
টিকা নেওয়া থাকলেও জৈবদুর্গে না থাকায় নিলামের আগে বা পরে বিশেষ কারও সঙ্গে কথা বলেননি চারু। দূর থেকেই সৌজন্য বিনিময় করেছেন। কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি তিনি।
নিলাম মঞ্চে ওঠার আগে চারু বুঝতে পারেন একটা বড় ভুল গয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়োয় নিজের ইয়ারপিস আনতে ভুলে গিয়েছেন। নিলাম চলাকালীন এই ইয়ারপিসের মাধ্যমেই আয়োজকরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারতেন।
চারু চাইলেই অন্য একটি ইয়ারপিস নিয়ে কাজ চালাতে পারতেন। কিন্তু তাঁর বহু বছরের পুরনো ইয়ারপিস দিয়েই তিনি নিলাম চালাবেন বলে ঠিক করেন। বাড়িতে ফোন করার পরে ১০ মিনিটের মধ্যে ইয়ারপিস পৌঁছে যায় হোটেলে। তার পরেই তিনি নিলাম শুরু করেন।
খেলার দুনিয়ার সঙ্গে বহু দিন যুক্ত থাকলেও এর আগে আইপিএল-এর নিলাম কোনও দিন করেননি। খোঁজও রাখেননি। তাই প্রথমে একটু ভয় লেগেছিল। অল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিষয়টি বুঝে নেন তিনি। নিলামের সময় বেশ কিছু পুরনো বন্ধুদের দেখেন। তাতেই সব শঙ্কা দূর হয়ে যায়।
শনিবার নিলাম পরিচালনার পরে রবিবারও তাঁকে সেই কাজ করতে হবে কি না তা জানতেন না চারু। ব্রিজেশ তাঁকে বলেন রবিবার সকাল ৯টার মধ্যে তাঁকে ফোন করে জানিয়ে দেবেন যে তাঁকে সে দিনও প্রয়োজন কি না।
রবিবার চারুর কাছে ফোন যায়। তাঁকে ১১টার মধ্যে হোটেলে চলে আসতে বলা হয়। ব্রিজেশ জানান, এডমিডেস সুস্থ বোধ করলে নিলামের শেষ দিকে আসবেন তিনি।
নিলামের একেবারে শেষ পর্যায়ে আসেন এডমিডেস। চারু তাঁকে মঞ্চ ছেড়ে দেন। তিনি নিলাম শেষ করেন। তবে তার আগে চারুর প্রশংসা শোনা যায় এডমিডেসের গলায়।
শুধু এডমিডেস নন, চারু যে ভাবে নিলাম সঞ্চালনা করেছেন তার প্রশংসা করেন ব্রিজেশও। উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
শনিবার নিলাম শুরু হওয়ার পরেও জানতেন না পরের প্রায় ৩২ ঘণ্টা কী হতে চলেছে। তবে একটি ফোন পেয়েই বিসিসিআই ও আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের মুশকিল আসান করলেন খেলার দুনিয়ায় পোড়খাওয়া চারু।