অনুশীলনে বিরাট কোহলি। মঙ্গলবার অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে। ছবি: পিটিআই।
১৩ বছর পর রঞ্জি খেলবেন বিরাট কোহলি। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু খেলা। তার আগে অনুশীলন করলেন কোহলি। মঙ্গলবার অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে তিন ঘণ্টা অনুশীলন করেন তিনি। তাঁর দিকেই নজর ছিল সকলের। সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন ভক্তেরা।
মঙ্গলবার সকাল ঠিক ৯টায় অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়ায় কোহলির আড়াই কোটির কালো পোর্শে গাড়ি। সেখান থেকে নেমে সোজা মাঠে ঢোকেন তিনি। দিল্লির রঞ্জি দলে একমাত্র নবদীপ সাইনি বাদে বাকি কেউ কোহলির সঙ্গে খেলেননি। তাঁকে সামনাসামনি এই প্রথম দেখলেন অনেকে। তাই তাঁদের মধ্যেও উৎসাহ ছিল চরমে।
কোহলি প্রথমেই গিয়ে দেখা করেন দিল্লির প্রধান কোচ শরণদীপ সিংহ ও ব্যাটিং কোচ বান্টু সিংহের সঙ্গে। সেখানে ছিলেন মহেশ ভাটিও। কোহলির অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ ছিলেন ভাটি। তাঁর কোচিংয়েই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন কোহলি। তাঁদের সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে মাঠে নামেন কোহলি।
মাঠে তখন চলছিল ফুটবল খেলা। সরাসরি কোহলি সেখানে চলে যান। তাঁকে দেখে সতীর্থদের উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। কোহলির বলের নিয়ন্ত্রণ দেখে অবাক হন তাঁরা। বেশ কয়েকটি গোলও করেন কোহলি। পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন সতীর্থেরা। ৩০ মিনিট ফুটবল খেলেন কোহলি।
ফুটবল শেষে সাজঘরে গিয়ে প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট পরে নামেন কোহলি। প্রথমে কিছু ক্ষণ থ্রো-ডাউন নেন তিনি। তার পরে স্পিনারেরা তাঁকে বল করা শুরু করেন। দুই বাঁহাতি স্পিনার হর্ষ ত্যাগী ও সুমিত মাথুর এবং ডানহাতি অফ স্পিনার শিবম শর্মা তাঁকে বল করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পিছনের পায়ে শট, ফ্লিক, সামনের পায়ে ড্রাইভ, কাট, সব মারেন কোহলি। তাঁর দিকে নজর রেখেছিলেন শরণদীপ। হাততালি দিয়ে কোহলির শটের প্রশংসা করছিলেন তিনি।
কয়েক ওভার পরে বড় শট খেলা শুরু করেন কোহলি। ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে হর্ষকে সামনের দিকে দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। তার মধ্যে একটি বল সাইট স্ক্রিনে গিয়ে লাগে। তা দেখে দর্শকেরা চিৎকার শুরু করেন। তবে কয়েকটি বলে একটু সমস্যাতেও পড়েন কোহলি।
৩০ মিনিট স্পিন খেলার পরে পাশের নেটে পেসারদের বিরুদ্ধে ব্যাট করেন কোহলি। পাঁচ জন বোলার বল করেন তাঁকে। কোহলির সঙ্গে খেলা নবদীপ ছাড়া মানি গ্রেওয়াল, রাহুল গহলৌত, সিদ্ধান্ত শর্মা ও মায়াঙ্ক গুসাইন তাঁকে বল করেন। প্রায় ৪৫ মিনিট তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যাট করেন কোহলি। তার পরে নেট ছাড়েন তিনি।
বিকেলে আবার মাঠে নামেন কোহলি। তখন অবশ্য ট্রাউজ়ারের বদলে শর্টস পরেছিলেন তিনি। ফিল্ডিং অনুশীলন করেন কোহলি। স্লিপে ক্যাচিংয়ের অনুশীলন চলছিল। দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়েছিলেন কোহলি। একটি ক্যাচও তিনি ছাড়েননি। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বেশ কয়েকটি ভাল ক্যাচ ধরেন। ফিল্ডিং অনুশীলনের পরে সতীর্থদের সঙ্গে মাঠে হালকা দৌড়ন কোহলি। তার পরে কোচেদের সঙ্গে কথা বলে আবার নিজের পোর্শে চড়ে ফিরে যান।
স্টেডিয়ামে গিয়ে ছোটবেলার বন্ধু শাওয়েজ় খানের সঙ্গে দেখা হয় কোহলির। দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরেন। ছবিও তোলেন। শাওয়েজ়ের পুত্র কবীরও সেখানে ছিল। সে কোহলির একটি ছবি এঁকে এনেছিল। সেই ছবি কোহলিকে উপহার দেয় সে। কবীরের ব্যাটে সই করে দেন কোহলি। তার সঙ্গে কথা বলেন। পরে কবীর বলেন, “আমার ছেলে কোহলিকে জিজ্ঞেস করেছিল, ভারতের হয়ে খেলার জন্য কী করতে হবে?” উত্তরে কোহলি বলে, “প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। তোমার বাবাকে যেন কখনও বলতে না হয়, অনুশীলনে যাওয়ার কথা। তুমি নিজে থেকে বাবাকে বলবে যে, অনুশীলনে যেতে চাও। কেউ যদি এক ঘণ্টা অনুশীলন করে, তোমাকে তা হলে দু’ঘণ্টা করতে হবে। এটাই এক মাত্র পথ।”
মাঠে কোহলির জন্য ছোলে পুরীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু খাননি তিনি। দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, “কোহলি একটুও বদলায়নি। ওর ছোলে পুরী পছন্দ ছিল। আমরা তাই আগে থেকেই তা আনিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু ও বলল, খাবে না।” ছোলে পুরী না খেলেও অনুশীলনের মাঝে সতীর্থদের সঙ্গে বসে কড়ী চাওল খেয়েছেন কোহলি। সকলের সঙ্গে গল্পও করেছেন। দেখে বোঝা গিয়েছে, ১৩ বছর পরে নিজের রাজ্য দলে ফিরে কতটা ফুরফুরে ভারতীয় ক্রিকেটার।