বাংলার ক্রিকেটার তিতাস সাধু। ছবি: টুইটার।
চিনের মাঠে মেয়ে তখন সবে দেশকে সোনা জিতিয়েছেন। ফাইনালে ৩ উইকেট নিয়ে মহিলা ক্রিকেট দলকে এশিয়ার সেরা করেছেন বাংলার তিতাস সাধু। জন্মদিন আর চার দিন পর। বাবা রণদীপ জানালেন, তার আগেই মেয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। যদিও উৎসবের পরিকল্পনা তেমন নেই। কারণ তিতাসের লক্ষ্য এখন আগামী দিনের দিকে।
২৯ সেপ্টেম্বর তিতাসের জন্মদিন। ১৯ বছর বয়স হবে তাঁর। এর মধ্যেই দেশের হয়ে অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপ এবং এশিয়ান গেমস জেতা হয়ে গিয়েছে। জন্মদিনের আগেই দেশে ফিরবেন তিতাস। তাঁর বাবা আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “বুধবার হয়তো দেশে ফিরবে তিতাসেরা। তবে বড় কোনও উৎসবের পরিকল্পনা নেই। ফিরেই বাংলার অনুশীলনে যোগ দিতে হবে ওকে। ঘরোয়া ক্রিকেটও শুরু হয়ে যাবে কয়েক দিনের মধ্যে।”
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের মহিলা দলের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা ছিল তিতাসের। এ বার এশিয়ান গেমসের ফাইনালও তিতাসময়। তাঁর বাবা বললেন, “এশিয়ান গেমসের দলে সুযোগ পেলেও প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত ছিল না। সেটা পাওয়ার পর নিজেকে প্রমাণ করাটাই ছিল আসল। তিতাস সেটা পেরেছে। আমি গর্বিত।” গলায় উচ্ছ্বাস থাকলেও তিনি চান না মেয়ে এই সোনা জয় নিয়ে মেতে থাকুক। রণদীপ বললেন, “সকলের প্রথম লক্ষ্য হয় ভারতের জার্সি পরে খেলা। কিন্তু সেখানেই সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। ওখান থেকে লড়াইটা শুরু হয়। তিতাস ভারতের জার্সি পরেছে। দলকে প্রতিযোগিতা জিতিয়েছে। তবে এখান থেকে লড়াই শুরু হল। আমি চাইব তিতাসের লক্ষ্য হোক দেশের হয়ে ১০০ ম্যাচ খেলা।”
উইকেট নেওয়ার পর তিতাসকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ছবি: টুইটার।
ক্রিকেট জগতে তিতাসকে নিয়ে আসার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে শিবশঙ্কর পালের। বাংলার বোলিং কোচ বললেন, “আমার এক বন্ধু তিতাসকে নিয়ে এসেছিল আমার কাছে। তখন ওর ১৬ বছর বয়স। সেই বয়সেই বল দু’দিকে সুইং করাতে পারত। তিতাসকে আমি বাংলার সিনিয়র দলের অনুশীলনে নিয়ে যাই। কোনও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট না খেলা সোজা বাংলার অনুশীলনে নেমে পড়া নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু তিতাস নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছে। সোমবার চিনের মাঠে তিতাসের খেলা দেখে গর্ব হচ্ছিল।”
বাংলা থেকে ভারতীয় ক্রিকেটে জোরে বোলার হিসাবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ঝুলন গোস্বামী। দেশকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। মেয়েদের ক্রিকেটে দেশের অন্যতম পেসার তিনি। বাংলা থেকে মহিলা ক্রিকেটার তুলে আনার পিছনে পরিশ্রম করে চলেছেন ঝুলন। তিতাসকে তাঁর মতো তৈরি করতে চান বাবা রণদীপ। তিনি বললেন, “মেয়েদের ক্রিকেটে ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ যে ভাবে দীর্ঘ দিন দেশের হয়ে খেলেছে, আমি চাই তিতাসও সেটা করুক। ভারতের হয়ে ১০০ ম্যাচ খেলুক ও।” রবিবার সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল তিতাসের। আর সোমবারই তিনি ভারতের সোনা জয়ের অন্যতম কারিগর। আগামী দিনে এই সাফল্য আরও অনেক ম্যাচে মেয়ে ধরে রাখুক, বাবার আশা এইটুকুই। আর কোচ শিবশঙ্কর বললেন, “শুধু বোলিং নয়, তিতাস কিন্তু ব্যাটটাও ভাল করে। আগামী দিনে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার মতো ক্ষমতা আছে তিতাসের।”