কুলদীপ যাদব। —ফাইল চিত্র।
দু’বছর আগে যদি কেউ বলতেন কুলদীপ যাদব ২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ খেলবেন, তাহলে হয়তো অনেকেই তা বিশ্বাস করতেন না। সেই সময় শুধু ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়াই নয়, আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও সুযোগ পেতেন না কুলদীপ। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বাঁহাতি স্পিনারের কেরিয়ার ঘুরতে শুরু করে। মঙ্গলবার বিশ্বকাপের জন্য ভারতের যে ১৫ জনের দল ঘোষণা করা হল, তাতেও ঢুকে পড়লেন কুলদীপ।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং যুজবেন্দ্র চহালের মতো স্পিনারদের টপকে বিশ্বকাপের দলে কুলদীপ। অশ্বিন বা চহালকে দলে না নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কুলদীপকে দলে নেওয়া নিয়ে কারও মনে কোনও প্রশ্ন নেই। এই বছর ১৩টি এক দিনের ম্যাচে ২২টি উইকেট নেওয়া স্পিনারকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবাই যাচ্ছে না। কী ভাবে পাল্টে গেলেন কুলদীপ?
ভারতীয় স্পিনারের ছোটবেলার কোচ কপিল পাণ্ডের মতে লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যাওয়ার জেদই পাল্টে দিয়েছে কুলদীপকে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কপিল বলেন, “দু’বছর আগে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল কুলদীপের। ভারতীয় দল তো দূর, আইপিএলেই সুযোগ পাচ্ছিল না। বোলারদের জন্য জরুরি ধারাবাহিক ভাবে অনুশীলন করে যাওয়া। তবেই নিজেকে আরও নিখুঁত করে যায়। কুলদীপ কখনও হাল ছাড়েনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার সঙ্গে নেটে অনুশীলন করে যেত। নতুন কিছু করার চেষ্টা করত। বলের গতি নিয়ে কাজ করেছি আমরা। অনেক কিছু করেছি, ওর বোলিংয়ে উন্নতি করার জন্য।”
শুধু কপিল নন, কুলদীপের উন্নতির পিছনে ছিলেন সুনীল যোশীও। ভারতের প্রাক্তন স্পিনার কুলদীপকে তৈরি করেন। যোশী নিজেও বাঁহাতি স্পিনার, ভারতের হয়ে খেলেছেন। তাই তাঁর পক্ষে কুলদীপকে পথ দেখানো সহজ ছিল। যোশী বলেন, “কুলদীপ যে সময় দল থেকে বাদ পড়েছিল, আমি সেই সময় নির্বাচক। এক জন প্রতিভাবান বোলারকে বাদ পড়তে দেখা সহজ নয়। কুলদীপের সঙ্গে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে দেখা করি। ঠিক করি কী ভাবে প্রস্তুতি নেব।”
সেই সময় কুলদীপের মধ্যে কোনও আত্মবিশ্বাস দেখতে পাচ্ছিলেন না যোশী। তিনি বলেন, “কুলদীপের বোলিং রান-আপ, হাত ঘোরানোর গতি নিয়ে কাজ করি আমরা। ওকে রান-আপ ছোট করা এবং হাত ঘোরানোর গতি বৃদ্ধি করতে বলি। ওর বোলিং আরও নিখুঁত করা হয়।” যে সময় কুলদীপ দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, সেই সময় সব কিছুই ভুল হচ্ছিল তাঁর। প্রচুর রান দিচ্ছিলেন। উইকেটও পাচ্ছিলেন না। যোশীর পরামর্শে ধীরে ধীরে পাল্টে যান কুলদীপ। যোশী বলেন, “মনঃসংযোগ করতে পারছিল না কুলদীপ। যেখানে সেখানে বল করছিল। এখন কিন্তু সেটা হয় না। এখন অনেক বেশি নিখুঁত বল করে ও।”
নাইট রাইডার্স ছেড়ে দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দেন কুলদীপ। যোশী বলেন, “দিল্লি দলে যোগ দেওয়ার পর রিকি পন্টিং ওকে ভরসা দিয়েছিল। প্রচুর ম্যাচ খেলিয়েছিল। এক জন অধিনায়ক এবং কোচের ভরসা পেলে বোলার অনেকটাই উন্নতি করতে পারে। সেটা পারতেন বলেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে অধিনায়ক হিসাবে পছন্দ করেন বোলারেরা।”
বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেলেও কুলদীপ বিশ্বকাপের দলে প্রথম একাদশে রোহিত শর্মার প্রথম পছন্দ হবেন কি না বুঝতে পারছেন না যোশী। তিনি বলেন, “বাঁহাতি ব্যাটারেরা ব্যাট করার সময় কুলদীপ বল স্পিন করিয়ে বাইরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেই ক্ষমতা ওর আছে। বিশ্বকাপে সেই বল কাজে লাগাতে হবে ওকে। অনেক দলেই দু’তিন জন বাঁহাতি ব্যাটার রয়েছে। কুলদীপ এই বলটা করতে পারলে ভারতের খুব সুবিধা হবে। ডানহাতি ব্যাটারদেরও একই ভাবে বল বাইরের দিকে নিয়ে যেতে হবে। তবেই ব্যাটারদের প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারবে কুলদীপ।” যোশী বিশ্বাস করেন সুযোগ পেলে কুলদীপ মিডল ওভারে ভারতের ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারবেন। রান আটকে ব্যাটারদের উপর তিনি চাপ তৈরি করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস করেন যোশী।