গত বছর চোট সারিয়ে ফিরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু’টি টি-টোয়েন্টি খেলেই আবার বসে যেতে হয়েছিল বুমরাকে। —ফাইল চিত্র
ফিরে এসেও ফেরা হল না। যশপ্রীত বুমরাকে এক দিনের সিরিজ়ের দলে নিয়েও বাদ দেওয়া হল চোটের কারণে। নির্বাচকদের অদ্ভুত কাণ্ড সকলকে অবাক করলেও চিন্তা বাড়ছে বুমরার চোট নিয়ে। গত বছর চোট সারিয়ে ফিরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু’টি টি-টোয়েন্টি খেলেই আবার বসে যেতে হয়েছিল বুমরাকে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মাঠে ফিরতে পারেননি তিনি।
এই বছর এক দিনের বিশ্বকাপ রয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও এই বিশ্বকাপের আগে বুমরাকে সুস্থ অবস্থায় চাইছে ভারতীয় বোর্ড। কিন্তু বুমরা কবে ফিরবেন তা বোঝা যাচ্ছে না। শুধু শ্রীলঙ্কা সিরিজ় নয়, বুমরা ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও হয়তো খেলবেন না। সে ক্ষেত্রে বুমরা চোট সারিয়ে ফিরতে পারেন আইপিএলে। প্রশ্ন হচ্ছে, বুমরার এত চোট কেন লাগছে?
পিঠের ব্যথা বুমরার ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়। যদিও এত দিন ধরে চোটের জন্য বুমরা কখনও বাইরে থাকেননি। ২০১৯-২০ মরসুমে তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিলেন। সেই সময় তাঁর কোমরে চোট ছিল। কিন্তু এই ধরনের চোটের জন্য বুমরার বল করার ভঙ্গিকেই দায়ী করছেন অনেকে। বুমরা যে ভাবে বল করেন তা ব্যাটারদের বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু সেই ভঙ্গিই এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বুমরার জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রাক্তন পেসার অ্যান্ডি রবার্টস এক বার বুমরার এই ভঙ্গি সম্পর্কে বলেন, “ক্রিকেট মাঠে এমন বল করার ভঙ্গি কখনও দেখিনি।”
কোমর, পিঠে চোট পেসারদের জন্য নতুন কিছু নয়। অন্য বোলারদের ক্ষেত্রে যে তাড়াতাড়ি সারিয়ে ফেলা যায়, বুমরার ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। সেই চোটের কারণ হিসাবে অনেকে বলেছেন যে, ভারত অতিরিক্ত ব্যবহার করেছে বুমরাকে। তিন ধরনের ক্রিকেটে পাল্লা দিয়ে খেলিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। অনেকে মনে করেছেন বুমরার ফিটনেসে সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে চোট সারতে সময় লাগছে। বুমরার চোট প্রসঙ্গে শোয়েব আখতার বলেন, “বুমরার বোলিংয়ের ভঙ্গি কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া। এর ফলে কোমর, পিঠ এবং কাঁধের উপর চাপ পড়ে। আমাদের ক্ষেত্রে শরীরের পাশের দিকের ব্যবহার বেশি হত। কিন্তু বুমরার ক্ষেত্রে সেটা সামনের দিকে। এই ধরনের বোলিংয়ে তাই পিঠ যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় তা হলে কিছু করার থাকে না।”
যে ভঙ্গিতে বল করে বুমরা ব্যাটারদের বিপদে ফেলে দেন, সেটাই এখন চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে তাঁর জন্য। কারণ বুমরার বোলিংয়ের ভঙ্গির জন্য শরীরের জোর বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমন যে হতে পারে তা আগেই বলেছিলেন মাইকেল হোল্ডিং। ক্যারিবিয়ান পেসার বলেছিলেন, “বুমরাকে আমি বলছিলাম যে, ও মানুষ, যন্ত্র নয়। তাই এই ভাবে টানা বল করে যাওয়া কঠিন। শেষ মুহূর্তে ও পিচে বল হিট করে যে গতি নিয়ে আসে তা ওর শরীরের জন্য খুব ভাল নয়।” একই কথা বলেন রিচার্ড হেডলি। নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন অলরাউন্ডার বলেন, “বুমরার বলে গতি আসে শেষ মুহূর্তে। ও যে ভাবে শরীর টেনে হাত ঘোরায় তাতেই গতি বেড়ে যায় বলের। এর ফলে ওর চোট লাগতে পারে।” হেডলি মনে করেছিলেন বুমরার পক্ষে এই ভাবে টানা বল করে যাওয়া কঠিন হবে।
প্রাক্তনদের কথাই সত্যি হয়েছে। দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে বুমরা। কবে ফিরবেন তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠছে, চোট সারিয়ে ফিরে বুমরা সব ধরনের ক্রিকেটে খেলতে পারবেন কি না।