Manoj Tiwary

‘ক্রিকেটারেরা নয়, এখন রাজনীতির লোকেরা বোর্ড চালাচ্ছে’, অবসরের পরের দিনই ক্ষিপ্ত মনোজ

ঈশান কিশনদের মতো কিছু ক্রিকেটারকে উদ্দেশ্য করে নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড। সেই প্রসঙ্গেই মনোজ বলেছেন, এখন বোর্ড চালাচ্ছেন রাজনীতির লোকেরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:০৮
Share:

মনোজ তিওয়ারি। — ফাইল চিত্র।

ঠিক ৯ দিন আগে একটি টুইট করেছিলেন তিনি। রঞ্জি ট্রফির গুরুত্ব কী ভাবে কমছে এবং কী ভাবে এই প্রতিযোগিতা তার জৌলুস হারাচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। তার পরেই ঈশান কিশনদের মতো কিছু ক্রিকেটারকে উদ্দেশ্য করে নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড। তা শুনে মনোজ তিওয়ারির মনে হচ্ছে, ‘বিলম্বিত বোধোদয়’ হয়েছে বিসিসিআইয়ের। তাঁর মতে, এখন বোর্ড চালাচ্ছেন রাজনীতির লোকেরা। সে কারণেই অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে।

Advertisement

রবিবার ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। সোমবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মনোজ। ক্রিকেটারদের উদ্দেশে বোর্ড সচিব জয় শাহ যে ই-মেল পাঠিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গ ওঠে সাংবাদিক বৈঠকে। মনোজ বলেন, “রঞ্জি ট্রফির মূল্যটা এখন কমে যাচ্ছে। কিছু বললেই নির্বাসিত করবে, জরিমানা করবে। এখন বোর্ড খেলোয়াড়েরা চালাচ্ছে না। চালাচ্ছে কিছু রাজনীতির লোকজন। এটাই বাস্তব। কিছু বললেই নির্বাসিত হতে হবে। একটা টুইটের জন্য আমার ২০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা করা হয়েছে। আগে মুখ খুললে আজকের এই সংবর্ধনার দিনটা আমার দেখা হত না। হয়তো ক্রিকেটজীবন আগেই শেষ হয়ে যেত। রঞ্জি ট্রফি শেষ হলে আরও অনেক কিছু বলতে পারি। রঞ্জি ট্রফির যে গুরুত্ব সেটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করব।” প্রসঙ্গত, বোর্ড সচিব জয় শাহ হলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা শাসকদল বিজেপির নেতা অমিত শাহের ছেলে।

বোর্ডের সেই নির্দেশিকা সম্পর্কে মনোজ আরও বলেছেন, “বোর্ড এই নির্দেশ জারি করার পর ঘরে বসে ভাবছিলাম, আমি টুইট না করলে বোধহয় এটা হত না। বোর্ড এখন এটাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে। আমি কিন্তু অনেক দিন ধরেই বলছিলাম এই বিষয়ে। যারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কম ম্যাচ খেলেছে কিন্তু আইপিএল খেলে বিখ্যাত হয়েছে, তারা এখন শুধু আইপিএলকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি এই প্রবণতা লক্ষ করেছি। তরুণ ক্রিকেটারেরা দেখতাম শুধু আইপিএল নিয়েই আলোচনা করছে। রঞ্জি ট্রফি চলার সময়ে বিশেষ করে হয় এটা। কারা করে সেটা এখন সবাই জানে।”

Advertisement

কথায় কথায় উঠে আসে ইংল্যান্ড দলের ‘বাজ়বল’-এর প্রসঙ্গও। মনোজ বলেন, “বাজ়বল দৃষ্টিভঙ্গি আমার পছন্দ নয়। কারণ, ইংল্যান্ড শুধু জয় বা হার নিয়ে ভাবে। কিন্তু ম্যাচ বাঁচানোর মতো একটা ব্যাপারও রয়েছে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে নামলে যদি দেখা যায়, ম্যাচ হারা বা বাঁচানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই, তখনও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার অর্থ নেই। এই কারণেই ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়‌ে হারের জায়গায় চলে গিয়েছে ওরা। রঞ্জিতেও অনেক তরুণ ক্রিকেটারকে দেখেছি ম্যাচের পরিস্থিতির কথা ভাবছে না। সবাই আইপিএলের কথা মাথায় রেখে প্রথম থেকেই চালিয়ে খেলছে।”

বোর্ডের উদ্দেশে পরামর্শও দিয়েছেন মনোজ। আক্ষেপ করে বলেছেন, “ভারতে যা প্রতিভা রয়েছে তা অস্ট্রেলিয়াতেও নেই। অথচ আইসিসি ট্রফি জয় দেখুন, ওরা কতগুলো পেয়েছে আর আমরা কত কম পেয়েছি। এটা উল্টো হওয়ার উচিত ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে প্রতিভা তুলে এনে তাদের ঠিক ভাবে লালন-পালন করতে হবে। রঞ্জি ট্রফির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় তাদের আইসিসি ট্রফি জেতার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।”

পাশাপাশি মনোজ সরব রঞ্জি ট্রফির সূচি নিয়েও। তিনি বলেছেন, “কিছু দিন পরেই সূচি নিয়ে বোর্ডের কাছে আবেদন করব। শীতকালে উত্তর-পূর্ব ভারত বা মধ্য ভারতে খেলা না দিয়ে যদি অন্য কোথাও খেলা দেওয়া যায় তা হলে সবার কাছেই ভাল। সবাই জানে শীতকালে ওখানে কুয়াশা থাকে। একটা দল সারা বছর পরিশ্রম করছে ট্রফির জন্য। কুয়াশার জন্য খেলা বাতিল হয়ে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। একটা দলের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে এতে। উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের বিরুদ্ধে আমাদের জয়ের ভাল রকম সুযোগ ছিল।”

অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে আরও সময় দিতে পারবেন বলে মনে করেন মনোজ। কিন্তু ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকা, অর্থাৎ কোচ হওয়া বা অ্যাকাডেমি খোলার পরিকল্পনা কি রয়েছে? কোচ প্রসঙ্গে স্পষ্ট উত্তর না দিলেও অ্যাকাডেমি নিয়ে মনোজ বলেছেন, “যদি পুরোপুরি সময় দিতে না পারি, তা হলে করব না। এখন দেখছি, অ্যাকাডেমিতে যে বাচ্চা ছেলেরা খেলতে আসে তাদের স্বপ্ন গুলো কোথাও না কোথাও ভেঙে যাচ্ছে। সবাই একটা স্বপ্ন নিয়েই খেলতে আসা। কিন্তু যথাযথ পরামর্শ না পাওয়ার ফলে সেগুলো শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। যে দিন মনে হবে পুরো সময় দিতে পারব সে দিন অবশ্যই খুলব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement