তখন সুখের সময়। গম্ভীরের (বাঁ দিকে) সঙ্গে মনোজ। — ফাইল চিত্র।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম বার আইপিএল জয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়েছিলেন তিনি। ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে বিপক্ষের মাঠে তাঁর মারা চারই কেকেআরকে ট্রফি দিয়েছিল। তার পরে আর মাত্র এক বছরই কেকেআরে খেলেছেন মনোজ তিওয়ারি। কেন কেকেআর ছেড়েছিলেন সেই প্রসঙ্গে সোমবার মুখ খুললেন মনোজ। রবিবার ঘরোয়া ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে ঝামেলাই কেকেআর থেকে সরে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
অধিনায়ক হিসাবে দলকে দু’বার ট্রফি জেতানোর পর এ বছর মেন্টর হিসাবে কেকেআরে ফিরেছেন গম্ভীর। মাঠের মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত চরিত্রও তিনি। মনোজের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা সেই সময় শিরোনামে এসেছিল। সোমবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে মনোজ বলেন, “কেকেআরে থাকার সময় গম্ভীরের সঙ্গে আমার বড় ঝগড়া হয়। সাজঘরে খুব ঝগড়া হয়েছিল। সেই কথা কোনও দিন প্রকাশ্যে আসেনি। ২০১২ সালে কেকেআর চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই সময়ে চার মারতে পেরেছিলাম বলে দল জেতে। তার জন্য আর একটা বছর খেলার সুযোগ পাই। ২০১৩-তে গম্ভীরের সঙ্গে ঝগড়া না হলে হয়তো আরও দু’-তিন বছর খেলতাম। তার মানে চুক্তি অনুযায়ী আমার যে অর্থ পাওয়ার কথা ছিল সেটা আরও বাড়ত। ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স মজবুত হত। কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবিনি কখনও।”
কোনও কিছু মাথায় এলে সেটা অকপটে বলে দেন মনোজ। এর জন্য বিতর্কেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। আইপিএলে ঘটা সে রকমই একটি ঘটনার কথা তুলে এনেছেন তিনি। বলেছেন, “দিল্লি ক্যাপিটালসে যখন খেলতাম তখন গ্যারি কার্স্টেন কোচ ছিল। একের পর এক ম্যাচে চোখের সামনে দেখছিলাম প্রথম একাদশ ঠিক হচ্ছে না। কম্বিনেশন ঠিক নেই। যোগ্য ক্রিকেটারেরা খেলার সুযোগ পাচ্ছিল না। অনেকে চোটের কারণে বাইরে ছিল। দলের ফল ভাল হচ্ছিল না। আমি সোজা গিয়ে বলেছিলাম, আমাকে খেলাতে না পারলে ছেড়ে দাও। তখন আমার চুক্তি ছিল ২.৮ কোটি টাকার। কখনও ভাবিনি এ কথা বললে ওরা আমাকে ভুল বুঝে ছেড়ে দেবে। আমার ক্ষতির কথা কখনও ভাবিনি।” প্রসঙ্গত, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস (অধুনা দিল্লি ক্যাপিটালস) দলে দু’দফায় খেলেছেন মনোজ।
দিল্লির কথা বলে মনোজের সংযোজন, “২০১৩-তে পা ভাঙার পর ভেবেছিলাম কোনও দিন দৌড়তে পারব না। সেই পর্যায়ে তখন এই আইপিএলের ঘটনাগুলো মনে পড়ত। নিজে থেকে কোনও দিন বিতর্ক টেনে আনিনি। সব সময়ে দলের স্বার্থ ভেবেছি। কিন্তু ভুগেছি আমিই। সে আর্থিক দিক থেকে হোক বা বিতর্কিত চরিত্র হিসাবে।”
গত মরসুমের পরেই অবসর নিয়ে ফেলা মনোজ মাঝপথে ফিরেছিলেন অবসর ভেঙে। কিন্তু এই মরসুমের শেষে অবসরের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোনও ভাবনা ছিল না বলে জানালেন তিনি। বলেছেন, “অবসরের কথা ভাবতে বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু একটা সময় আসে যখন শরীর বলে দেয় যে আর সময় দেওয়া যাবে না। গত দু’-তিন বছর ধরেই শরীর আমাকে বলছে যে এ বার সরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। রঞ্জি ট্রফি জয় বাদে বাকি স্বপ্ন তো পূরণ হয়েই গিয়েছে। আমার দুটো হাঁটুর কার্টিলেজ ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। পরিবারকে সময় দিতে পারছিলাম না। ছোট ছেলে, স্ত্রী রয়েছে। গত কাল অবসরের দিনও স্ত্রী সুস্মিত আমাকে বলেছিল এখনও ভেবে দেখতে। এ বার ওকে বললাম, থাক। এর আগে এক বার অবসর নিয়েই ফিরে এসেছিলাম। আর নয়।”
সাংবাদিক বৈঠকের মাঝে স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটিতেও মাততে দেখা গেল মনোজকে। সুস্মিতা জানালেন, ক্রিকেট খেলার সময় থেকেই মনোজ পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেন। সকালে চা করা বা বিভিন্ন সময়ে রান্না করতেও দেখা যায় তাঁকে। সুযোগ বুঝে খুনসুটি করতে ছাড়লেন না মনোজও। বললেন, “লকডাউনের সময় আমাকে এক বার বিরিয়ানি বানাতে বলেছিল। আমি ইউটিউব দেখে ধাপে ধাপে বিরিয়ানি বানিয়েছিলাম। সেটা এতই ভাল হয়েছিল যে এখন সুস্মিতা প্রায়ই আমাকে বিরিয়ানি বানাতে অনুরোধ করে।”