দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ওভারেই চমক আরশদীপের। ছবি: বিসিসিআই
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্যাচ ফস্কে হয়েছিলেন ‘খলনায়ক’। রাতারাতি ভারতীয় সমর্থকদের একটা বড় অংশ ভারতের হারের জন্য দায়ী করেছিলেন তাঁকে। প্রকাশ্যে জুটেছিল ‘গদ্দার’ তকমা। ২৪ দিন পরে সেই আরশদীপ সিংহই ভারতীয় সমর্থকদের নয়নের মণি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ওভারেই তিন উইকেট নিলেন তিনি। ধরলেন একটি দুর্দান্ত ক্যাচ।
এশিয়া কাপের পরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দলে ছিলেন না আরশদীপ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফিরেছেন। আর ফিরে প্রথম ম্যাচেই চমক দিলেন তিনি। সাধারণত পুরনো বলে ভাল বল করেন ভারতের এই বাঁ হাতি পেসার। কিন্তু নতুন বলেও তিনি কী করতে পারেন, সেটা দেখালেন আরশদীপ। প্রথম ওভারেই দ্বিতীয় বলেই কুইন্টন ডি’কককে বোল্ড করেন আরশদীপ। ডি’ককের ব্যাটে লেগে বল উইকেটে গিয়ে লাগে। ওভারের শেষ দু’টি বলে রিলি রোসৌ ও ডেভিড মিলারকে আউট করেন তিনি। প্রথম জন খোঁচা মেরে ঋষভ পন্থের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। দ্বিতীয় জন বোল্ড হন।
এখানেই শেষ নয়। পরের ওভারে দীপক চাহারের বলে বড় শট মারতে গিয়ে থার্ডম্যান অঞ্চলে ক্যাচ তোলেন ট্রিস্টিয়ান স্টাবস। সামনের দিকে অনেকটা দৌড়ে এসে ভাল ক্যাচ ধরেন আরশদীপ। এশিয়া কাপে সহজ ক্যাচ ফস্কেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠিন ক্যাচ ধরে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ফিল্ডার হিসাবেও খুব খারাপ নন। শেষ পর্যন্ত নিজের চার ওভারে ৩২ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন আরশদীপ।
কিন্তু এশিয়া কাপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ, মাঝের এই ২৪ দিনে কী হল? কেমন খেললেন আরশদীপ?
পাকিস্তান ম্যাচের পরে এশিয়া কাপে দু’টি ম্যাচ খেলেছিলেন আরশদীপ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩.৫ ওভারে দেন ৪০ রান। উইকেট পাননি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দুই ওভারে সাত রান দিয়ে এক উইকেট নেন তিনি।
কিন্তু মাঝের এই সময়ে আরশদীপকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। সমাজমাধ্যমে লাগাতার সমালোচনা করা হয়েছে তাঁর। জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়ায় আরশদীপের পেজের বিবরণ বদলে তাঁকে ‘খালিস্তানি’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। অবশ্য যত সমালোচনা বেড়েছে তত সমর্থন পেয়েছেন ভারতীয় বোলার। ইরফান পাঠান, হরভজন সিংহ, সুনীল গাওস্করের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটাররা মুখ খুলেছেন। ২৩ বছরের আরশদীপ সমর্থন পেয়েছেন সীমান্তের ওপার থেকেও।
আরশদীপের বাবা দর্শন সিংহ ও মা বলজিৎ কৌর ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও সমালোচনা কানে নিচ্ছেন না। দর্শন বলেছেন, ‘‘আরশদীপ আমাকে বলেছে, ও সব দেখেশুনে হাসছে। এই সমালোচনা থেকে ও মনে আরও জোর পাচ্ছে। ওর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ছে।’’ ভারতীয় বোলারের মা বলেছেন, ‘‘যদি সমালোচনা না হয় তা হলে জীবনে উন্নতি করা যাবে না। মানুষ আবেগের বশে অনেক কিছু বলে ফেলে। তাতে আরশদীপের কোনও সমস্যা হবে না। ও জানে ওকে কী ভাবে খেলতে হবে।’’
আরশদীপের কোচ যশবন্ত রাই আবার জানিয়েছেন, একটা ক্যাচ ফস্কানোর জন্য তাঁর ছাত্রের এতটা সমালোচনা হবে সেটা তিনি ভাবতে পারেননি। যশবন্ত বলেছেন, ‘‘ক্যাচ ফস্কানো খেলার অঙ্গ। বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদেরও ক্যাচ পড়ে। একটা ক্যাচ ফস্কানোর জন্য যে আরশদীপের এত সমালোচনা হবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি। ভারতকে হারানোর জন্য পাকিস্তানের ব্যাটারদের প্রশংসা করা উচিত। আমি অনুরোধ করব খেলাকে খেলার মতো নিন। দয়া করে এ ভাবে কাউকে ব্যঙ্গ করবেন না।’’ ছাত্রকে বল দিয়েই যাবতীয় সমালোচনার জবাব দেওয়ার কথা বলেছিলেন কোচ। সেটাই করলেন আরশদীপ।