আউট হয়ে সাজঘরে ফিরছেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য। ছবি: পিটিআই
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে নিজেদের পরীক্ষার মুখে ফেলার কথা বলেছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চাইছেন ভারতের নতুন অধিনায়ক। পুণেতে টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্তের মধ্যেও হার্দিকের তেমন মনোভাবই দেখা গেল। যে মাঠে প্রথমে ব্যাট করে জয়ের পরিসংখ্যান বেশি, সেই মাঠে হঠাৎ আগে বল করার সিদ্ধান্ত অবাক করে দেয়। শ্রীলঙ্কা প্রথম ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ২০৬ রান করে। জবাবে ভারত শেষ ১৯০ রানে।
টস জিতলে আগে ব্যাট করতেন বলেই জানালেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শনকা। পুণের ছোট মাঠে যে কোনও অধিনায়ক সেটাই করেন। সুযোগ পেয়ে কাজেও লাগালেন শ্রীলঙ্কার ওপেনাররা। বড় রান তোলার ভিতটা করে দিলেন তাঁরা। হার্দিক প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান দিয়েছিলেন। কিন্তু তা ভুলিয়ে দিলেন আরশদীপ সিংহ। একের পর এক নো বল করে গেলেন। দ্বিতীয় ওভারে পর পর তিনটি নো বল করেন তিনি। দিলেন ১৯ রান। গোটা ম্যাচে ২ ওভার বল করেছেন আরশদীপ। পাঁচটি নো বল করেছেন তার মধ্যে। দিয়েছেন ৩৭ রান। কোনও উইকেটও পাননি। দীনেশ কার্তিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “খুব বেশি ম্যাচ না খেলার ফলে এটা হল। শরীর খারাপ ছিল আরশদীপের। সেটা সারতেই মাঠে নেমে পড়েছে। অনুশীলন করতে পারেনি ভাল করে।”
এ দিন ভারতের সব থেকে সফল বোলার উমরান মালিক। তাঁর গতিই শক্তি আবার সেই গতিই দুর্বলতা। পুণের ছোট মাঠে উমরানের গতি কাজে লাগিয়েই বাউন্ডারি মারছিলেন শ্রীলঙ্কার বোলাররা। তিনটি চার এবং চারটি ছক্কা দিয়েছেন উমরান। তিনটি উইকেটও তুলেছেন তিনি। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সব থেকে বেশি মার খেয়েছেন শিবম মাভি। যিনি অভিষেক ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিলেন, সেই ভারতীয় পেসার এ দিন ৪ ওভারে ৫৩ রান দেন। কোনও উইকেটও নিতে পারেননি তিনি। অথচ যিনি ভাল বল করছিলেন সেই হার্দিক নিজে করলেন মাত্র ২ ওভার। ১৩ রান দেন তিনি। হার্দিক কেন নিজের পুরো ওভার শেষ করেননি তা তিনিই জানেন।
শ্রীলঙ্কার হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটা খেলে গেলেন তাদের অধিনায়ক। নিজের দেশের হয়ে দ্রুততম অর্ধশতরান করেন শনকা। ২২ বলে ৫৬ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ বেলায় তাঁর ইনিংসই শ্রীলঙ্কাকে ২০০ রানের গণ্ডি পার করিয়ে দেয়। রান তোলার যে কাজটা শুরু করেছিলেন পাতুম নিশঙ্কা (৩৩) এবং কুশল মেন্ডিস (৫২) সেটাই শেষ করলেন শনকা। চার নম্বরে নেমে চারিত আশালঙ্কা করেন ৩৭ রান। চারটি ছক্কা মারেন তিনি।
ম্যাচ জিততে হলে ভারতের প্রয়োজন ছিল শুরু থেকে দ্রুত রান তোলা। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারের মধ্যেই ভারতের দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা রাহুল ত্রিপাঠী ফিল্ডিং করার সময় দুরন্ত ক্যাচ নিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাট হাতে তিনি ব্যর্থ। মাত্র ৫ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ত্রিপাঠী। হার্দিক ১২ রান করেন। রান পাননি দীপক হুডাও। তিনি ৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এর পরেই সূর্যোদয় ভারতীয় ইনিংসে। সূর্যকুমার যাদব এবং অক্ষর পটেল মিলে ৯১ রানের জুটি গড়েন। সেই জুটিই ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিল, কিন্তু তা স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।
অক্ষর নেমেই আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলতে শুরু করেন। বাঁহাতি অলরাউন্ডার যখন এক দিক থেকে আক্রমণ করছেন, অন্য দিকে সূর্যকুমার বল প্রতি রান করার চেষ্টা করছেন। স্ট্রাইক দেওয়ার চেষ্টা করছেন অক্ষরকে। ২০ বলে অর্ধশতরান করেন অক্ষর। এর পরেই হাত খুললেন সূর্য। একের পর এক বল মাঠের বাইরে পাঠাতে শুরু করলেন তিনি। দুই ব্যাটার আক্রমণ শুরু করতেই শ্রীলঙ্কা বোলাররা গুটিয়ে যান। তাঁদের লাইন লেংথ ভুল হতে শুরু করে। ২০৭ রানের বড় লক্ষ্য না হলে ম্যাচ জিততেও পারত ভারত।
ভারতের হেরে যাওয়ার পিছনে অবশ্যই সূর্যকুমারের আউট হয়ে যাওয়া। সূর্য যখন সাজঘরে ফিরছেন, ভারতের তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ৫৯ রান। কিন্তু ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বসেন সূর্য। তাঁর উইকেট পেতেই ম্যাচে ফিরে আসে শ্রীলঙ্কা। অক্ষর (৬৫) এবং শিবম মাভি (২৬) চেষ্টা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত ম্যাচটাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু জয় এনে দিতে পারলেন না তাঁরা। ম্যাচ হেরে হার্দিক জানালেন যে, পাওয়ার প্লে-তে ভুল করেই ম্যাচ হারতে হয়েছে। বল করার সময় পাওয়ার প্লে-তে উইকেট নিতে পারেনি ভারত। ব্যাট করার সময় প্রথম ৬ ওভারে একাধিক উইকেট হারায় তারা। সেটার কথাই বললেন হার্দিক।