বিরাট কোহলী। ফাইল ছবি
আর কয়েক ঘণ্টা পেরনোর অপেক্ষা। শুক্রবার থেকে মোহালিতে নিজের শততম টেস্ট খেলতে নামছেন বিরাট কোহলী। স্বাভাবিক গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আনন্দে উদ্বেল। কোহলী নিজেও উত্তেজনায় ফুটছেন। নিজের টুইটারে কোহলী লিখেছেন, ‘এই সুন্দর যাত্রার জন্যে আমি আপ্লুত। একটা বড় দিন এবং আমার কাছে একটা বিশেষ টেস্ট ম্যাচ। শুরু হওয়ার জন্য তর সইছে না।’ তারপর বোর্ডের টুইটারে প্রকাশিত ভিডিয়োয় যা বললেন তা তুলে ধরা হল:
শততম টেস্ট নিয়ে: বলতে, কোনও দিন ভাবিনি যে ১০০টা টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারব। ভারতের হয়ে খেলাটাই একটা স্বপ্ন ছিল। নিজের সর্বস্ব দিয়ে দেব ভেবেছিলাম। একটা লম্বা যাত্রা পেরিয়ে এসেছি। এই ১০০ ম্যাচ খেলার পথে অনেক ক্রিকেট খেলেছি। প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। শততম টেস্ট যে শেষ পর্যন্ত খেলতে পেরেছি, তার জন্য আমি আপ্লুত। নিজের ফিটনেসের জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছি। আমি, আমার পরিবার, কোচ প্রত্যেকে আমার জন্য খুশি এবং গর্বিত। কী পাব না, সেটা নিয়ে কখনও ভাবিনি। বরং সামনে যে সুযোগ রয়েছে, সেটা কী ভাবে কাজে লাগাতে পারব, সেই চেষ্টা করেছি। কম রান করব, এই ভাবনা নিয়ে কখনও নামিনি। বরাবরই লক্ষ্য রাখতাম বড় রান করার। জুনিয়র ক্রিকেটে প্রচুর দ্বিশতরান করেছি। যত বেশি সময় সম্ভব ব্যাট করতে চাইতাম। সেই সময়টা উপভোগও করতাম। নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি। টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। কারণ আমার মতে, এটাই আসল ক্রিকেট।’
প্রথম টেস্ট শতরান: টেস্টে প্রথম শতরানের কথা খুব ভাল ভাবে মনে আছে। সেই দিনটা আমার কাছে সারাজীবন মনে থাকবে। তার উপর সেই শতরান এসেছিল অস্ট্রেলিয়ায়। সেটা আরও একটা বিশেষ অনুভূতি। এক জন তরুণ ক্রিকেটার, যে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তার কাছে এই শতরান অনেকটাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। যদি আমার ক্রিকেটজীবনের দিকে লক্ষ্য রাখেন, দেখবেন ওই টেস্টের পর থেকেই আমার খেলা ভাল হতে শুরু করে। অনেকটা আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভাবনা: হঠাৎ করে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে শুরু করিনি। আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। খেয়াল রেখেছিলাম ক্রিকেট খেলার সময় আমার নীতি এবং মূল্যবোধে যেন কোনও নড়চড় না হয়। টেস্ট ক্রিকেট বাঁচিয়ে খেলাটাকে উপভোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি বরাবর। তার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট একটা ধরন অনুযায়ী খেলতে হত। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য নিজের আত্মা এবং হৃদয় সমর্পণ করেছি। গর্বের সঙ্গে সেটা বলতে পারি। বোলারকে আউট করা, উপদেশ দেওয়া জাতীয় কৌশল এবং পরিকল্পনা ছাড়াও ভারতীয় দলে নিজের অবদান রাখতে পেরেছি। এর জন্য আমি গর্বিত। টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাওয়াই একটা বিরাট ব্যাপার।
অধিনায়ক থাকার অভিজ্ঞতা: দলে একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আশা করি সেটা পেরেছি। গত কয়েক বছর অধিনায়ক ছিলাম। নিজের দক্ষতার সবটা কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। পিছন ফিরে সেই সময়ের দিকে তাকালে নিজেকে গর্বিত মনে করি। কিছু অসাধারণ সতীর্থের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়ার সময়ের কথা মনে আছে। তখনই ঠিক করেছিলাম নির্দিষ্ট একটা ধরন মেনে খেলতে হবে। আমাদের একটা ভাল দল তৈরি করতে হবে। সেটা পেরেছি। দিনের শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় জানতাম, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা জিততে পারি। কোনও বোঝা ঘাড়ে করে কোনও সফরে যাইনি। ২০১৫-২০২০ — ওই পাঁচটা বছর টেস্টে আমরা দারুণ খেলেছি। প্রত্যেকটা সফরই দুর্দান্ত ছিল। কিছু ম্যাচ হারতে হয়েছে। কিছু অসাধারণ প্রত্যাবর্তন হয়েছে। কোনও একটাকে বেছে নিতে পারব না। সেটা ভুল হবে। অস্ট্রেলিয়ায় জেতা হোক বা ইংল্যান্ডে, একটা বেছে নিই কী করে?
আগামিদিনের লক্ষ্য: টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য এখনও মুখিয়ে। দেশকে আরও বেশি ম্যাচে জেতাতে চাই। দেশের হয়ে জেতাই আমার কাছে সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা। এখনও দেশকে জেতানোই আমার প্রধান কাজ। রেকর্ড, পরিসংখ্যান নিয়ে বাকি লোকেরা ভাববে। আমি পাত্তা দিই না। সেটা করলে এত রান করতে পারতাম না। আমার বরাবরই লক্ষ্য ছিল দেশকে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জেতানো।
স্ত্রী অনুষ্কাকে নিয়ে: অনুষ্কা আমার জীবনে বিরাট অনুপ্রেরণা। ব্যক্তিগত জীবন ভাল হলে মাঠেও তার প্রভাব পড়ে। খেলাটাও জীবনের অঙ্গ। আমি এখন পুরোপুরি বদলে গিয়েছি। সবই ভালর জন্য। অনুষ্কার মতো জীবনসঙ্গী পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই ঈশ্বরকে। অনুষ্কা আসার পরেই আমার জীবন বদলাতে থাকে। আমরা একে অপরকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করি। ও না থাকলে এত জেদি, আগ্রাসী হতে পারতাম না।
সমর্থকদের প্রসঙ্গে: দর্শকরা আসবে শুনে খুবই ভাল লাগছে। উত্তেজনা হচ্ছেই। তবে ভারতের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার সময়েও মনে হয় এ রকমই উত্তেজনা থাকবে।