অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে বছরটা শুরু করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জিতে তা ভাল ভাবে শেষ করার সুযোগ রয়েছে বিরাট কোহলীদের সামনে।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলতে চলেছে ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের অভিজ্ঞতা ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে মোটেও সুখকর নয়। এখনও পর্যন্ত এক বারও সে দেশে সিরিজ জেতেনি তারা।
সাত বার সিরিজ খেলতে গিয়েছে ভারত। তার মধ্যে জয় এসেছে মাত্র তিনটি ম্যাচে।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতীয় ব্যাটারদের কিছু ঐতিহাসিক ইনিংস রয়েছে, যা স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
প্রথম টেস্টের আগে সে রকমই ১০টি ইনিংসের কথা উল্লেখ করল আনন্দবাজার অনলাইন।
কপিল দেব (১২৯, পোর্ট এলিজাবেথ, ১৯৯২-৯৩): বর্ণবিদ্বেষ পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতের প্রথম সিরিজ। প্রোটিয়ারা জেতে ১-০। তবে কপিলের ইনিংস এখনও স্মরণে। ১৪টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ১৮০ বলে অসাধারণ ১২৯ করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ২৭-৫ হয়ে যাওয়ার পর টি-টোয়েন্টির ধাঁচে ব্যাটিং করেন কপিল।
সচিন তেন্ডুলকর (১৬৯, কেপ টাউন, ১৯৯৬-৯৭): ভারতীয় ক্রিকেটে ততদিনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন সচিন। প্রথম ইনিংসে ৫৮-৫ হয়ে গিয়েছিল ভারত। মহম্মদ আজহারউদ্দিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৪০ ওভারে ২২২ রান তোলে ভারত। ১৬৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন সচিন। ২৫৪ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ২৬টি চার।
মহম্মদ আজহারউদ্দিন (১১৫, কেপ টাউন, ১৯৯৬-৯৭): সচিনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন আজহার। সচিনের ইনিংসে ঢাকাই পড়ে গিয়েছিল আজহারের ১১০ বলে ১১৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস। তবে তাঁর আগ্রাসী মনোভাবকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন প্রত্যেকেই। অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, ল্যান্স ক্লুজনারকে বেদম পিটিয়েছিলেন।
রাহুল দ্রাবিড় (১৪৮, জোহানেসবার্গ, ১৯৯৬-৯৭): ওই সিরিজে তৃতীয় টেস্ট ড্র করে ভারত। ওয়ান্ডারার্সে শতরান করে নিজের জাত চেনান দ্রাবিড়। লর্ডসে কয়েক মাস আগে শতরান পাননি। কিন্তু জোহানেসবার্গে তুমুল ধৈর্য দেখিয়ে ৩৬২ বল খেলে ১৪৮ রান করেন।
বীরেন্দ্র সহবাগ (১০৫, ব্লুমফন্টেন, ২০০১-০২): টেস্ট অভিষেকে ৬ নম্বরে নেমে শতরান করে চমকে দেন সহবাগ। পোলক, হেওয়ার্ড, এনতিনি, কালিসের মতো বোলারকে ব্যপক পিটিয়ে ১৭৩ বলে ১০৫ রান করেছিলেন। সচিনের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ২২০ রানে জুটি গড়েছিলেন তিনি।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (অপরাজিত ৫১, জোহানেসবার্গ, ২০০৬-০৭): কিছুদিন আগেই অধিনায়কত্ব গিয়েছিল। রঞ্জি ট্রফিতে ভাল খেলে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন সৌরভ। দল বিপদে থাকার সময় ঠান্ডা মাথায় খেলে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ১০১ বলে ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন সৌরভ। মেরেছিলেন চারটি চার এবং একটি ছক্কা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট জেতার পিছনে এই অর্ধশতরানের ভূমিকা রয়েছে।
ভিভিএস লক্ষ্মণ (৯৬, ডারবান, ২০১০-১১): প্রথম ইনিংসে ভারতের ৭৪ রানের লি়ড ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয় হয়। দলের অবস্থা ৫৬-৪, এমন অবস্থায় ক্রিকেটজীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন লক্ষ্মণ। ১৭১ বলে ১২টি চারের সাহায্যে ৯৬ করেছিলেন তিনি। ম্যাচ হারে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের যা দ্বিতীয় টেস্ট জয়।
চেতেশ্বর পুজারা (১৫৩, জোহানেসবার্গ, ২০১৩-১৪): দ্রাবিড় অবসর নেওয়ার পর সবে টেস্ট দলে তিনে ব্যাট করছেন পুজারা। দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্স এবং গতির পিচ সামলে ঠান্ডা মাথায় শতরান করেন পুজারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২১টি চারের সাহায্যে ২৭০ বলে ১৫৩ রান করেন। এরপরেই ভারতীয় ক্রিকেটে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে ওঠেন সৌরাষ্ট্রের ব্যাটার।
বিরাট কোহলী (১১৯, জোহানেসবার্গ, ২০১৩-১৪): একই সিরিজে ভারত পেয়ে যায় সচিন তেন্ডুলকরের পরিবর্তকেও। প্রথম বার চারে নেমে কোহলী ঠান্ডা মাথায় ১৮১ বলে ১১৯ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন। তারপর থেকে টেস্টে নিজের চার নম্বর জায়গা পোক্ত করে ফেলেন।
অজিঙ্ক রহাণে (৪৮, জোহানেসবার্গ, ২০১৭-১৮): প্রথম দুটি ম্যাচে তিনি খেলেননি। দু’টিতেই হেরেছিল ভারত। তৃতীয় টেস্টে দলে ফিরে অসামান্য ইনিংস খেলেন রহাণে। টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম কঠিন পিচে ব্যাটিং করেছিলেন, যেখানে বল অত্যন্ত সুইং করছিল। রহাণে প্রলোভনে পা না দিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে ৬৮ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন।