Mohammed Shami

Mohammed Shami: মনোজরা ভোলেননি ময়দানের ম্যাকগ্রাকে

টাউনের বিরুদ্ধে সফল হওয়ার দিনই শামিকে বাংলার প্রাথমিক দলে রাখেন সম্বরণ। ২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর ইডেনে অসমের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তাঁর।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:২৪
Share:

স্মরণীয়: দু’শো টেস্ট উইকেটের সেই বল নিয়ে ভারতীয় পেসার মহম্মদ শামি। সেঞ্চুরিয়নের গ্যালারিতে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।

সুবার্বানের বিরুদ্ধে টাউন ক্লাবের একটি ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বাংলার তৎকালীন নির্বাচক প্রধান সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। টাউন মাঠেই চলছিল সেই ম্যাচ। লাঞ্চ বিরতির আগেই প্রাক্তন নির্বাচক প্রধানের নজর কাড়েন এক তরুণ পেসার। প্রথম সেশনেই চার উইকেট নিয়ে বিপক্ষকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন সেই তরুণ। লাঞ্চের পরে টাউনের অধিনায়ক সফি আহমেদকে নির্বাচক প্রধান অনুরোধ করেছিলেন, হাওয়ার বিরুদ্ধে সেই পেসারকে দিয়ে বল করাতে। তাতেও থামানো যায়নি দামাল বোলারকে।

Advertisement

আরও দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন সেদিনের তরুণ মহম্মদ শামি। বর্তমানে ভারতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেসার হিসেবে যিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে টেস্টে দু’শো উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ থেকে বাংলায় খেলতে না এলে তাঁর সাফল্যের দরজা কি এত দ্রুত খুলত?

টাউনের বিরুদ্ধে সফল হওয়ার দিনই শামিকে বাংলার প্রাথমিক দলে রাখেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর ইডেনে অসমের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তাঁর।

Advertisement

টাইফয়েড নিয়ে সেই ম্যাচ খেলেছিলেন শামি। তবুও তাঁকে আটকে রাখা যায়নি। তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করেছিলেন বাংলার পেসার। তার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। মঙ্গলবার টেস্টে দু’শো উইকেট নেওয়ার পরেই দু’হাত শূন্যে তুলে আকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন শামি। ম্যাচ শেষে বর্তমান বোলিং কোচ পরস মামব্রেকে তিনি জানিয়েছেন, বাবাকে স্মরণ করেই এই উৎসব করেন। শামি বলেন, ‘‘ওই উৎসব বাবার জন্য।’’ চার বছর আগে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। ক্রিকেটার হয়ে ওঠার নেপথ্যে বাবার অবদান ভুলতে পারেননি শামি।

জীবনে যতই কঠিন সময় আসুক, শামির দৌড় থামেনি। লক্ষ্মীরতন শুক্লর নেতৃত্বে রঞ্জিতে অভিষেক হয় তাঁর। শামিকে প্রথম বার বল করতে দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। লক্ষ্মী বলছিলেন, ‘‘বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের নেটে ট্রায়াল দিতে এসেছিল ও। তখনই দেখছিলাম সিম পজ়িশন একেবারে সোজা। কোন দিকে ওর ডেলিভারি নড়াচড়া করবে, ধরা যেত না। সে দিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ওকে আমার দলে খেলাব।’’

মাত্র ৫৫ ম্যাচে দু’শো উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন শামি। যা মুগ্ধ করেছে তাঁর এক সময়ের সতীর্থদের। লক্ষ্মী বলে দিলেন, ‘‘ওর জন্য গর্বিত। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে, তার ফলই পাচ্ছে। তরুণ পেসারদের দেখা উচিত, ও কী ভাবে সিম সোজা রেখে
বল করে চলেছে।’’

শামির উত্থানের নেপথ্যে তাঁর পরিবারের অবদান অবশ্যই রয়েছে। আরও এক জনের কথা মনে করিয়ে দিলেন মনোজ তিওয়ারি। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গেই কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে ছিলেন শামি। মনোজ দেখতেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম তাঁর উন্নতির জন্য কতটা
পরিশ্রম করতেন।

মনোজ বলছিলেন, ‘‘শামি আগে এ বিষয়ে কোথাও বলেছে কি না জানি না। তবে কেকেআর শিবিরে থাকাকালীন দেখতাম, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওকে ট্রেনিং করাতেন ওয়াসিম ভাই। ওর একটা সমস্যা ছিল, ওভারস্টেপ করে ফেলত। ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে ট্রেনিং করার পরে সেই প্রবণতা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। আউটসুইং করানোর সময় কব্জি কোন জায়গায় থাকবে, ইনসুইংয়ের সময় কব্জি কী রকম রাখা উচিত, ওয়াসিম ভাই ওকে ধরে ধরে শেখাতেন।’’

মনোজ আরও বললেন, ‘‘ওর মতো নিখুঁত অ্যাকশনের পেস বোলার দেখা যায় না। ময়দানে আগে কেউ বুঝতেই পারত না যে, ও ঘণ্টায় ১৪০ কিমি গতিতে বল করে। এতটা সুন্দর অ্যাকশন সত্যি দেখা যায় না। প্রত্যেকটা বল সিমে পড়ার জন্য অতিরিক্ত বাউন্স করে। অনেকটা গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো ছোট সুইং আর কাট করায়। আমার মতে ক্রিকেটবিশ্বে এই মুহূর্তের সেরা পেসারের নাম মহম্মদ শামি।’’

বাংলার প্রাক্তন অফস্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী বলে দিলেন, ‘‘অনেকেই বলেন যশপ্রীত বুমরা বর্তমানে ভারতের সেরা পেসার। আমি কিন্তু শামিকেই এক নম্বরে রাখব। ওর কোন ডেলিভারি কোন দিকে যাবে, বলা খুবই কঠিন। নতুন বলেও যতটা ভয়ঙ্কর, পুরনো বলেও রিভার্স সুইং ততটাই ভাল করায়।’’

শামির রিভার্স সুইং মুগ্ধ করেছিল বাংলার বর্তমান কোচ অরুণ লালকেও। ২০১৩-র নভেম্বরে ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক হয় শামির। সেই ম্যাচে মোট ৯ উইকেট নিয়ে শেষ করেন। পুরনো বলে তাঁর রিভার্স সুইং মুগ্ধ করেছিল ক্রিকেটবিশ্বকে। অরুণ বলছিলেন, ‘‘সে দিন মাঠে বসে ওর খেলা দেখেই বুঝেছিলাম, লম্বা রেসের ঘোড়া।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement