চেতেশ্বর পুজারা। ফাইল ছবি
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রথম বলেই ফিরে গেলেন চেতেশ্বর পুজারা। গত এক বছরে এই নিয়ে তিন বার খাতা খোলার আগেই ফিরতে হল তাঁকে। অর্থাৎ শূন্য করার হ্যাটট্রিক হয়ে গেল তাঁর।
গত বছর সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বক্সিং ডে টেস্ট খেলেছিল ভারত। ঠিক এক বছর আগে থেকে পরিসংখ্যান ধরলে দেখা যাবে কতটা খারাপ ফর্মে রয়েছেন পুজারা। দেখা যাচ্ছে গত এক বছরে পুজারা মোট ১৫টি টেস্ট খেলেছেন। ২৭ ইনিংসে তাঁর রান ৭০৬। গড় ৩০-ও পেরোয়নি, ২৭.১৫। একটিও শতরান নেই পুজারার। অর্ধশতরান করেছেন ৬টি। টেস্টে তাঁর শেষ শতরান দুই বছর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনিতে সেই ম্যাচে ১৯৩ রান করেছিলেন পুজারা।
প্রথম ইনিংসে পুজারার শেষ অর্ধশতরান এই বছর ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তারপর যে ১১টি টেস্ট খেলেছেন, সেখানে প্রথম ইনিংসে পুজারার রান ২১, ০, ১৭, ৮, ৪, ৯, ১, ৪, ২৬, ০, ০।
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
গত এক বছরে পুজারার ২৭টি ইনিংসের মধ্যে তিন বার শূন্য তো আছেই, এক থেকে ১০ রানের মধ্যে তিনি আউট হয়েছেন সাত বার। ১১ থেকে ২০ রান এবং ২১ থেকে ৩০ রানের মধ্যে আউট হয়েছেন চার বার করে। ৪১ থেকে ৫০ এবং ৫১ থেকে ৬০ রানের ইনিংস খেলেছেন মাত্র একটি করে। ৭১ থেকে ৮০ রানের ইনিংস খেলেছেন মাত্র দু’টি। এর বাইরে একটিই ৯১ রানের ইনিংস রয়েছে।
ব্যাট করতে নেমে পুজারা প্রথম পাঁচ বলের মধ্যে আউট হয়েছেন চার বার। ৩০টি বলও খেলতে পারেননি, এরকম ইনিংস ৯টি। ৬০ বলের মধ্যে আউট হয়েছেন ১৪ বার। দেড়শ, বা তার বেশি বল খেলেছেন মাত্র পাঁচ বার।
২৭টি ইনিংসের মধ্যে এক বারই তিনি অপরাজিত ছিলেন। আউট হওয়ার ধরনেও স্পষ্ট পুজারার খারাপ ফর্ম। যে ২৬ বার আউট হয়েছেন তার মধ্যে বোল্ড এবং এলবিডব্লিউ-র যোগফল সাত। রবিবার বোল্ড, বা এলবিডব্লিউ না হলেও যে ভাবে আউট হয়েছেন, তা কোনও তিন নম্বর ব্যাটারের থেকে প্রত্যাশিত নয়। লুঙ্গি এনগিডির বলটি গুড লেংথে পড়ে ভিতরে ঢুকে আসে। পুজারা ডিফেন্স করার জন্য সামনের পায়ে খেলেন। বল ব্যাটের ভিতরের দিকে লেগে পুজারার পায়ে লাগে। সেখান থেকে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো কিগান পিটারসেনের হাতে যায়।
কোহলীদের আগে ভারত ‘এ’ দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল। সেই দলের চার জন দীপক চাহার, নবদীপ সাইনি, সৌরভ কুমার এবং অর্জন নাগওয়াসওয়ালাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় রেখে দিয়েছে ভারতীয় বোর্ড। এর মধ্যে চাহার গত বুধবার একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন নিজের টুইটারে। সেখানে দেখা যাচ্ছে পুজারাকে সুইংয়ে পরাস্ত করছেন তিনি। ভিডিয়ো পোস্ট করে চাহার লিখেছেন, ‘লাল বল মানেই মজা।’
রবি শাস্ত্রীর জমানায় পুজারা সুযোগ পেয়েছেন। নতুন কোচ হিসেবে আসা রাহুল দ্রাবিড় এই টেস্ট শুরুর ঠিক আগে পুজারা এবং ফর্মে না থাকা আর এক ব্যাটার অজিঙ্ক রহাণেকে কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওরা নিজেদের রাজ্য দলের সিনিয়র ক্রিকেটার। সেখানে টিম ম্যানেজমেন্টে রয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেয় ওরা। সেখানেও ওদের কাউকে কখনও বাদ দিতে হয়। ফলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাৎপর্য কী, সেটা ওরা বোঝে। ওরা জানে কাউকে বাদ দেওয়ার পিছনের কারণগুলি ঠিক কী থাকে। ফলে ওদের সঙ্গে আমরা এটা নিয়ে আলোচনাও করতে পারব।’’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, খুব শিঘ্রই হয়ত বাদ দেওয়া হবে পুজারাকে। তার আগে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হবে।
কেউ কেউ বলছেন, পুজারার উচিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া। ২০০৬ সালে কঠিন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই প্রত্যাবর্তন হয়েছিল সৌরভের। ডব্লিউভি রমনের মতো ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মনে করছেন, ঘণ্টা তিনেক উইকেটে থেকে ব্যাটে-বলে হওয়া দরকার পুজারার। তাহলেই আবার তাঁকে পুরনো ছন্দে দেখা যাবে। এমনিতে তাঁর টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। পুরোটাই মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার ব্যাপার।
এখন প্রশ্ন হল, সেই চাপ কাটানোর আর সুযোগ পাবেন কি পুজারা? এখনও পর্যন্ত তিনি ছাড়া ভারতের বাকি তিন ব্যাটার এই ইনিংসে লোকেশ রাহুল, ময়াঙ্ক আগরওয়াল এবং কোহলী যে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিন্দুমাত্র সমস্যা ছাড়াই খেলছেন, তাতে রানের পাহাড় খাড়া করতেই পারে ভারত। সে ক্ষেত্রে পুজারা আদৌ দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করার সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে থাকছে প্রশ্ন।