—ফাইল চিত্র।
বৃষ্টির কারণে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল। প্রথমে ব্যাট করে ভারত ২৬৬ রান তুলেছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পাকিস্তান ব্যাট করতে নামতেই পারেনি। এশিয়া কাপের বড় ম্যাচ শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেওয়া হল। দু’ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তান এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পৌঁছে গেল।
বড় ম্যাচই নাকি চিনিয়ে দেয় কে বড় খেলোয়াড়। তাই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে নজর থাকে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, বাবর আজ়মদের মতো ক্রিকেটারদের দিকে। কিন্তু শনিবার ক্যান্ডিতে রোহিত বা বিরাট নায়ক হতে পারলেন না। তরুণ ঈশান কিশন এবং ‘নতুন’ হার্দিক পাণ্ড্য ভারতের হয়ে ইনিংস গড়ার কাজটি করলেন। ৪৮.৫ ওভার ব্যাট করে ভারত তুলল ২৬৬ রান।
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার মাটিতে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তান। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রোহিত। পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে ভারত অধিনায়ক বার বার ধাক্কা খেয়েছেন। তাই এই ম্যাচে কী হবে, সেই দিকে নজর ছিল। শনিবারের লড়াইয়ে আবার জিতলেন আফ্রিদি। পর পর দু’টি বল আউট সুইং করার পর একটি ইনসুইং করলেন। তাতেই শেষ রোহিত (১১)। প্রথম উইকেট হারায় ভারত। দলের রান তখন ১৫। রোহিত আউট হতেই ক্যান্ডির মাঠে নামতে দেখা গেল বিরাটকে। তাঁর মারা একটি কভার ড্রাইভ দেখে হাসি ফিরেছিল ভারতীয় সমর্থকদের মুখে। কিন্তু তা ছিল ক্ষণিকের জন্য। অফ স্টাম্পের বাইরে বল করেছিলেন আফ্রিদি। বলটি যে সুইং করবে না, তা বুঝতে পারেননি বিরাট। ভুল লাইনে ব্যাট চালিয়ে বলটি টেনে নিলেন উইকেটে। বুক কেঁপে উঠল ভারতীয় সমর্থকদের।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন যে, ভারতের চার নম্বর জায়গার জন্য শ্রেয়স আয়ারকে ভাবছেন। বিশ্বকাপে তাঁকেই চার নম্বরে খেলানোর ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। সেই শ্রেয়স শনিবার ৯ বলে ১৪ রান করলেন। কিন্তু রোহিত, বিরাট আউট হওয়ার পর যিনি দলের ভরসা হতে পারতেন, সেই চার নম্বর যে ভাবে হঠাৎ পুল করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন, তা মানা কঠিন। ৫০ ওভার ম্যাচে আরও একটু ধৈর্য ধরতেই পারতেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক। চোট সারিয়ে দলে ফিরে নিজেকে আরও একটু সময় দিতে পারতেন শ্রেয়স। কিন্তু সে পথে পা না বাড়িয়ে, সাজঘরে ফিরলেন হ্যারিস রউফের বলে বাবরের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
ওপেনার শুভমন গিল এবং তরুণ উইকেটরক্ষক ঈশান কিশনের উপর দায়িত্ব পড়ল বড় ম্যাচে নিজেদের জাত চেনানোর। শুভমন প্রথম বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে বাড়তি সতর্ক ছিলেন। প্রথম রান করতেই নিয়েছিলেন ১৩টি বল। নড়বড়ে শুভমন এক বার স্লিপে খোঁচাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাচ নেওয়ার মতো জায়গায় কোনও ফিল্ডার ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ১০ রান করে আউট হয়েছিলেন শুভমন। বিরাটের মতো তিনিও অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে আউট হয়েছিলেন।
৬৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন ব্যাটিং বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখছিল। ক্রিজে ছিলেন তরুণ ঈশান, যিনি ওপেনার হিসাবেই স্বচ্ছন্দ। সঙ্গী ফর্ম হারানো হার্দিক পাণ্ড্য। কিন্তু ইনিংস শেষে তাঁরাই ভারতের ভরসা হয়ে রইলেন। ঈশান করছিলেন ৮২ রান আর হার্দিক ৮৭। দু’জনেই শতরান কাছ থেকে ফিরেছিলেন। ইনিংসের শুরুতে ধরে খেলছিলেন ঈশান। তাড়াহুড়ো করেননি। অহেতুক ঝুঁকি নেননি। সঠিক বলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দৌড়ে রান নিচ্ছিলেন। তবে খারাপ বল পেলে রেয়াত করছিলেন না। তার ফলে ঝুঁকি না নিয়েও ১০০-র স্ট্রাইক রেটে রান করছিলেন তিনি। অন্য দিকে, ঈশান ক্রিজে থাকা পর্যন্ত হার্দিক দায়িত্ব নিয়েছিলেন একটা দিক ধরে রেখে আক্রমণ করে যাওয়ার। চেষ্টা করছিলেন ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকার, যাতে কোনও ভাবেই আরও একটা উইকেট ভারতকে না হারাতে হয়। সেই কাজে তিনি সফল। গত বারের এশিয়া কাপে খেলার সুবাদে পাক বোলারদের চেনাই ছিল। নিজের দক্ষতা এবং পরিণত মানসিকতা কাজে লাগিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গেলেন হার্দিক।
হার্দিক আর ঈশান মিলে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত থাকলে ভারত হয়তো ৩০০ রানও পার করে ফেলতে পারত। কিন্তু রউফের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে দেন ঈশান। হার্দিককে স্লোয়ারে আউট করেন আফ্রিদি। শেষ বেলায় ১৪ বলে ১৬ রান করে দলকে ২৫০ রান পার করিয়ে দেন বুমরা। তিনটি চার মারেন তিনি। ব্যাট হাতে নিজের কেরামতি দেখালেও বল হাতে দেখানোর সুযোগ পেলেন না বুমরা। ভারতের অপেক্ষা এখন নেপাল ম্যাচের জন্য।