আমদাবাদে অনবদ্য শতরানের পর শুভমন। ছবি: টুইটার।
নির্ণায়ক তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিউ জ়িল্যান্ডকে ১৬৮ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ় জিতে নিল ভারত। ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও সিরিজ় ছিনিয়ে নিল হার্দিক পাণ্ড্যর দল। প্রথমে ব্যাট করে ভারতের করা ২৩৪ রানের ভারে নুইয়ে পড়ল সফরকারীদের ইনিংস। বুধবার আমদাবাদে মিচেল স্যান্টনারদের ইনিংস শেষ হয়ে গেল ১২.১ ওভারে ৬৬ রানে।
বড় রানের চাপ সামলাতে পারলেন না নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার থেকেই নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারালেন তাঁরা। কিউয়িদের সাজঘর যাত্রার সূচনা হয় ফিন অ্যালেনের (৩) উইকেট দিয়ে। প্রতিপক্ষ শিবিরে প্রথম আঘাত আনেন ভারত অধিনায়ক হার্দিক। বড় লক্ষ্যের সামনে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়ে আরও চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। পর পর আউট হন ডেভন কনওয়ে (১), মার্ক চ্যাপম্যান (শূন্য), গ্লেন ফিলিপস (২), মিচেল ব্রেসওয়েলরা (৮)। ৪.৩ ওভারে মাত্র ২১ রানেই ৫ উইকেট হারায় নিউ জ়িল্যান্ড। তখনই ভারতের সিরিজ় জয় এক রকম নিশ্চিত হয়ে যায়। বল হাতে হার্দিককে সঙ্গ দেন দুই তরুণ জোরে বোলার আরশদীপ সিংহ এবং উমরান মালিক। ভারতের বোলিং আক্রমণের সামনে বেশ অসহায় দেখাল নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটারদের। ভারতীয় ইনিংসের সময় আমদাবাদের ২২ গজকে যতটা ব্যাটিং সহায়ক মনে হচ্ছিল, নিউ জ়িল্যান্ড ইনিংসের সময় ততটাই বোলিং সহায়ক মনে হল। দ্বিতীয় ওভারে আরশদীপ কনওয়ে এবং চ্যাপম্যানকে আউট করে কোণঠাসা করে দেন কিউয়িদের। সেই চাপ থেকে শেষ পর্যন্ত বেরতে পারলেন না স্যান্টনাররা।
দলকে ভরসা দিতে পারলেন নিউ জ়িল্যান্ড অধিনায়কও। একটি চারের সাহায্যে ১৩ বলে ১৩ রান করে আউট হলেন শিবম মাভির বলে। একই ওভারে সাজঘরে ফিরলেন ইশ সোধিও (শূন্য)। উইকেটের অন্য প্রান্তে দলের হাল ধরার কিছুটা চেষ্টা করলেন ড্যারিল মিচেল। কিন্তু কোনও সতীর্থের থেকেই কাঙ্খিত সহযোগিতা পেলেন না তিনি। স্যান্টনার আউট হওয়ার পর ২২ গজে তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় সৈনিকের মতো। শেষ পর্যন্ত ২৫ বলে ৩৫ রান এল তাঁর ব্যাট থেকে। একটি চার এবং তিনটি ছক্কা এল তাঁর ব্যাট থেকে। লকি ফার্গুসন (শূন্য), ব্লেয়ার টিকনারও (১) রান পেলেন না।
অন্য দিকে, বল হাতেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন হার্দিক। ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেন তিনি। ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন আরশদীপ। ৯ রানে ২ উইকেট উমরানের। ১২ রান দিয়ে বাকি ২ উইকেট মাভির। অর্থাৎ নিউ জ়িল্য়ান্ডের ১০ উইকেটই নিলেন ভারতের জোরে বোলাররা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। ওপেন করতে নেমে সাফল্য পেলেন না ঈশান কিশন (১)। উইকেটের অন্য প্রান্তে অবশ্য চেনা আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল শুভমনকে। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন তরুণ ওপেনিং ব্যাটার। বুধবার আমদাবাদেও তাঁর আগ্রাসী মেজাজের সামনে সাধারণ দেখাল সফরকারী দলের বোলারদের। শুভমন শুধু শতরানই করলেন না, প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করলেন ব্যাট হাতে। তাঁকে থামানোর উপায় খুঁজে পেলেন না স্যান্টনাররা। শেষ পর্যন্ত শুভমন অপরাজিত থাকলেন ৬৩ বলে ১২৬ রানে। ১২টি চার এবং সাতটি ছক্কা মারলেন তিনি।
তিন নম্বরে নেমে ভাল খেললেন রাহুল ত্রিপাঠিও। ২২ বলের ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে চারটি বাউন্ডারি এবং তিনটি ওভার বাউন্ডারি-সহ এল ৪৪ রান। আমদাবাদে প্রত্য়াশা মতো রান পেলেন না সূর্যকুমার যাদব। ১৩ বলে ২৪ রান করলেন তিনি। মারলেন একটি চার এবং দু’টি ছয়। সূর্য দ্রুত সাজঘরে ফিরলেও ভারতের রান তোলার গতি আটকাতে পারেননি কিউয়িরা। আগ্রাসী মেজাজে পাওয়া গেল অধিনায়ক হার্দিককেও। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক করলেন ১৭ বলে ৩০ রান। চারটি চার এবং একটি ছয় এল তাঁর ব্যাট থেকে। শেষ পর্যন্ত শুভমনের সঙ্গে উইকেট থাকলেন দীপক হুডা। ২ বলে ২ রান করলেন দীপক। ভারতীয়রা গোটা ইনিংস আগ্রাসী মেজাজে খেললেও ২০তম ওভারে প্রত্যাশিত রান উঠল না। একটি ওয়াইড-সহ যোগ হল ৬ রান। এর জন্য কিছুটা হলেও আক্ষেপ থাকবে হার্দিকের। ওভারের প্রথম বলে তিনি আউট হওয়ায় ছন্দ নষ্ট হয় ভারতীয় ইনিংসের। না হলেও আরও কিছু রান আসতে পারত ভারতের ঝুলিতে।
নিউ জ়িল্যান্ডের কোনও বোলারই এ দিন তেমন সুবিধা করতে পারলেন না। শুরুতেই ব্রেসওয়েল ঈশানকে আউট করে ধাক্কা দিলেও লাভের লাভ হয়নি। সফরকারীদের পক্ষে সফলতম বোলার মিচেল ৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেন। একটি করে উইকেট পেয়েছেন টিকনার, সোধি।